ভট্টাচার্যর নাম। জন্মসূত্রে তিনি একজন নারী, কিন্তু তারপরেও তাঁর অদম্য সাহস। নিজের পরিচয় বদলে ফেলার মত সিদ্ধান্ত, নারী শরীর কিন্তু তাতে পুরুষের যোগ। নিজেকে সুচেতন হিসেবে দাবি করতে পারার বিষয়টা নিতান্তই সহজ ছিল না। প্রসঙ্গে, তাঁকে সমর্থন করেছেন অনেকেই। তাঁর মধ্যে একটি নাম সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানালেন তাঁর নিজের মতামত।
তিনিও এক সাহসের নাম। নিজেকে ভিন্নভাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। সুচেতনের সঙ্গে রীতিমতো যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। সাধুবাদ জানিয়েছেন। সাহসিকতার পরিচয় দিলেন কি তিনি? উত্তরে সুজয় প্রসাদ বললেন, "এটা আদৌ সাহসের পরিচয় কিনা সেটা বলতে না পারলেও এটা অন্তত বলতে পারি যে একজন মানুষ যে শারীরিকভাবে একজন মেয়ে কিন্তু মানসিকভাবে একজন অন্য লিঙ্গের মানুষ, এটা কিন্তু কোনওভাবেই মিথ্যে নয়। আমরা আমাদের শরীর আর মনের যোগাযোগকে মিথ্যে বলতে পারি না। এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়।"
শেষকিছু বছরে এই ঘটনা অন্ততপক্ষে মানুষের কাছে খুব স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ারই কথা। ঋতুপর্ণ ঘোষ নিজেও একটা সময় চূড়ান্ত লড়াই করেছিলেন নিজের পরিচয় নিয়ে। কিন্তু, আজ শুধু কি বুদ্ধবাবুর সন্তান বলেই তাঁকে নিয়ে এতটা মুখরোচক কথা এবং মন্তব্য সকলের? সুজয় প্রসাদের কথায়, "আমার মনে হয় সেটা না। এটা কিন্তু নির্ভর করে না যে আমি কে কিংবা আমি কি? যেটা ওর পরিচয় সেটা কিন্তু ওর নিজের মন এবং মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। আমরা মানুষকে বাক্সের আড়ালে বসিয়ে দিতে খুব ভালবাসি। তাঁর বিরুদ্ধে নানা কিছু আঙ্গুল তুলতে, বেশ রসালো মুচমুচে কিছু শব্দ তার সঙ্গে জুড়তে এগুলো করেই থাকে সবাই।"
সমপ্রেম বৈধ এদেশে। প্রাইড সেলিব্রেট করা হয়। যুগ পেরিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু, আজও কি মানুষ নিজেদের বেড়া ভেঙে বেরোতে পারেন নি? আজও মানুষের কাছে সম্পূর্ন ঘটনাটা কি খুব হাস্যকর? সুজয় প্রসাদের বক্তব্য, "আমার খুব খারাপ লাগে জানো। কিন্তু, একটা কথা কী বলতো, সকলকে নিজের লড়াইটা লড়তে হয়। নিজের অধিকারটা বুঝে নিতে হলে গিল্ট ছেড়ে বেরোতে হয়। আমাদের সমাজটা এমন জানো তো যেখানে, তুমি একজন পুরুষ কিনা সেটা কি দিয়ে বোঝানো হয়? আমাদের শরীরের অঙ্গ, সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া দিয়ে? আমার প্রজনন অঙ্গ কী সেটা দিয়ে আমার পরিচয় বোঝা সম্ভব না। আমি একজন শিল্পী, আমি একজন মানুষ, এটাই সর্বোচ্চ নয় কী? কিন্তু, সেটা এই সমাজের পক্ষে বোঝা সম্ভব না।"
অর্ধনারীশ্বর... এই শব্দটার অর্থ একটাই, একই অঙ্গে নারী এবং পুরুষের বাস। সুচেতনা নিজেকে পাল্টে সুচেতন হয়ে উঠেছেন, এটি যেমন তাঁর কাছে গর্বের তেমনই লড়াইয়ের এক বিরাট প্রতিচ্ছবি। তাঁকে উল্লেখ করেই সুজয় বলেন, আমি গর্বিত ও নিজেকে চিনতে পেরে এই কাজটি করেছে।