প্রতিদিন কত মানুষের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়? তাঁরা ইন্ডাস্ট্রির লিডিং মোস্ট সুপারস্টার। বিশেষ করে তিনি যখন জিৎ, তখন তাঁর সাতে পাঁচে থাকার বালাই নেই। শুধু ছবি, কাজ আর তাঁর সঙ্গেই সুপারহিট বক্স অফিস ডেলিভারি। দীর্ঘ এতবছর কাজ করছেন। জীবনের অনেকগুলো বছর পার করার পর, কতটা মানুষ চিনতে পারলেন তিনি? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় সকলের প্রিয় অভিনেতা জিৎ।
উৎসবের মরশুম গেল, তারপরেই ছবি...
হ্যাঁ! সত্যি...তোমাদের সকল পাঠকদের প্রাক দীপাবলি এবং আগাম নিউ ইয়ারের শুভেচ্ছা।
আদ্যোপান্ত কমার্শিয়াল ছবি, যেখানে এখন সিনেমা নিয়ে এত গবেষণা, তাও জিৎ মানেই সুন্দর কয়েকটা রোমান্টিক গান, মারকাটারি অ্যাকশান, এটাই কি তোমার ম্যাজিক..?
আমার মনে হয় গল্পটা সবথেকে বেশি কানেক্ট করে। কারণ, সেটা না হলে কোনও ম্যাজিক কাজ করে না। পাশাপাশি তো গান, ড্রামা, অ্যাকশন, ইমোশন সবটাই থাকে। তবে, গল্প প্লাস কনটেন্ট সেটাই সবথেকে বেশি আমার মনে হয় ম্যাটার করে।
মানুষের মধ্যে শুধু মান আর হুশ থাকলেই হয়?
বেসিক্যালি তো তাই! কিন্তু, বেশ কয়েকটা পয়েন্ট আমি যোগ করতে চাই! এক তো, ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আবার, ধরো খুব দয়ালু হওয়া উচিত। জীবনকে নিয়ে কম্প্যাশন রাখা উচিত।
ভাল মানুষ হওয়ার সুযোগ নিয়েছে কেউ কোনোদিন?
হ্যাঁ! অনেকসময়। কিন্তু সেটা থেকেই তো শেখা। ওটাই তো আমাদের শেখায়। যখন তুমি বুঝতে পারো কেউ তোমায় বোকা বানালো, সেইটাই জীবনের একটা বড় লেসন। সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়া খুব বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এগোতে হবে নইলে সমস্যা।
মেয়ের কাছে সবসময় হিরো হয়ে থাকতে চাই, তোমার মেয়ে তো অনেক বড়! বাবা যে হিরো সুপারস্টার সেটা এখন নিশ্চই বুঝতে পারে?
হ্যাঁ, বুঝতে পারে। হয়তো খুব গভীর ভাবে না কিন্তু এটা জানে যে বাবা জনপ্রিয় কেউ। আসলে, ও এটা দেখেই তো বড় হয়েছে। ১১ বছর হতে চলল ওর। খুব একটা এই জন্য প্রতিক্রিয়া দেয় না। আসলে, কী বলো তো, আমরা টাকা অনেকেই উপার্জন করি। কিন্তু মানুষের যে এতটা ভালবাসা, আশীর্বাদ এটা সবাই পায় না। কিন্তু, আমার বাড়ির লোক জানে যে এই মানুষটাকে অনেকেই ভালবাসেন। অনেকের অনেক টাকা পয়সা থাকলেও সেই ভালবাসার খোঁজ তারা পান না।
এই যে বাবা মেয়ের একটা এত সুন্দর সম্পর্ক, ছবিতেও তোমার দারুণ সব ডায়লগ...মানুষ হিসেবে জিততে না পারলেও বাবা হিসেবে জিততে চাই, এগুলো কি স্ক্রিপ্ট এর ডিমান্ড নাকি নিজে একজন বাবা, অন্তর থেকে বেরিয়েছে?
এটা আসলে পুরোটাই পরিচালকের ক্রেডিট। সঞ্জয় সমাদ্দার এত ভাল লিখেছেন। উনি চরিত্রের প্রয়োজনে, স্ক্রিপ্ট এর ডিমান্ড অনুযায়ী প্লট দারুণ সাজিয়েছেন। আমার মনে হয়, সংলাপের ডেলিভারির সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে সাজানো খুব দরকার। সেটাই সঞ্জয় দা দারুণ করেছেন।
জিতু দা রয়েছেন ছবিতে, এবং আগেও বলেছো যে এটা দুজনের ছবি..লিডিং সুপারস্টার হওয়ার পরেও দুজন হেভিওয়েট তারকা হিসেবে একই স্ক্রিনে কাজ করতে কি একটু দুশ্চিন্তা হয়?
সত্যি বলতে গেলে স্টোরির ডিমান্ড যেমন থাকে। আমি এগুলো নিয়ে খুব একটা ভাবি না। কিছুদিন আগেও আমি একটি ছোট্ট রোল করেছি সুইজারল্যান্ড ছবিতে। সৃজিত দার সঙ্গে হেমলক সোসাইটিতে শুধু দৌড়ে গেলাম। এটা নিয়ে আমার সমস্যা হয় না। স্ক্রিন স্পেস বেশি চাই এটা এখন আর বিষয় নেই।
তোমার কি মনে হয়, সত্যিই টাকার ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ?
না, টাকার ওপর সত্যিই বিশ্বাস হারানো পাপ। কারণ, আজকের দুনিয়ায় টাকাটা সবথেকে বেশি জরুরি। সেটা জীবনে খুব অন্য মাত্রা এনে দেয়। সুতরাং এটা ছাড়া চলবে না। এবার, যদি বল টাকা সুখ কিনতে পারে কিনা, তাহলে বলব সুখ বিষয়টা মানুষের মনের একটা বিষয়। মস্তিষ্কের সঙ্গে এর গভীর যোগ। সুতরাং, আর যাই হোক সবসময় হয়তো সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
জীবনে শুধু টাকার জন্য কোনও ছবি করেছ?
না! আমার টাকা কামানোর চেয়ে ভাল কাজ করার খিদে অনেক বেশি। কারণ, ভাল কাজ করলে টাকা এমনিই ফলো করবে। ভাল কাজ অফার করা হয়েছে এমন অনেক জায়গায়, আমি টাকাকে গুরুত্ব দিই নি।
একজন ভাল মানুষ হতে কী কী গুণ থাকতে হবে?
হুম... একজন এমন মানুষ যে কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের চরিত্র হারাবে না। এতবছরের অভিজ্ঞতা থেকে অন্তত এটুকু বলতেই পারি। হাসি...
মুখোশের আড়ালে মানুষ, জীবনে মোকাবিলা করেছ কোনোদিন?
সকলেই! সকলের সঙ্গে...এমনকি আমি নিজেও। চারপাশে সব তাই। আমি এরকম অনেক দেখেছি। আসলে, মানুষের পরিস্থিতির সঙ্গে সবকিছু বদলে যায়। কেউ নিজেকে লুকিয়ে রাখে, আবার কেউ নিজেকে সকলের সামনে বের করে আনে। যতক্ষণ নিজের কোর বিষয়ে আঘাত না লাগে, ততক্ষণ ঠিক আছে। যারা ম্যাটার করে, মানুষের কাছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্য।