নতিস্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে, ওয়েব সিরিজের দৃশ্য ছেঁটেও রেহাই মেলেনি। 'তাণ্ডব' (Tandav) নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের রেশ যেন কিছুতেই থামছে না! ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে একাধিক FIR-এর ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই পরিচালক আলি আব্বাস জাফর (Ali Abbas Zafar), সইফ আলি খান (Saif Ali Khan) ও জিশান আয়ুবের (Zeeshan Ayyub) উপর নজর রয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং হিন্দুত্ববাদীদের। যে কোনও সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে, এবার সেই প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিল যে, "'তাণ্ডব' নির্মাতাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়।"
উল্লেখ্য মুম্বই, উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুর, লক্ষ্ণৌ, গ্রেটার নয়ডা-সহ একাধিক জায়গায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে 'তাণ্ডব' নির্মাতাদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই যোগী পুলিশের তরফে আইনি নোটিস গিয়েছে তাঁদের হাতে। ওদিকে মহারাষ্ট্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও ওয়েব সিরিজ নির্মাতাদের সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে হাত তুলে নিয়েছেন। এবার দেশের শীর্ষ আদালতের তরফেও 'তাণ্ডব' নির্মাতাদের বিপক্ষে রায় শোনানো হল। সাফ জানিয়ে দেওয়া হল যে, FIR-এর ভিত্তিতে কেউ যদি গ্রেপ্তার হন, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট কোনওরকম সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না।
বুধবার বিচারপতি অশোক ভূষণ, আর সুভাষ রেড্ডি এবং এমআর শাহের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ পরিচালক আলি আব্বাস জাফর, অ্যামাজন প্রাইম ইন্ডিয়া প্রধান অপর্ণা পুরোহিত, প্রযোজক হিমাংশু মেহেরা, সংশ্লিষ্ট সিরিজের লেখক গৌরব সোলঙ্কি এবং অভিনেতা মহম্মদ জিশান আয়ুবের বিরুদ্ধে জমা পরা তিনটি পৃথক পিটিশনের শুনানি ঘোষণা করছিলেন। সেখানেই সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের এমন রায়দান। সুপ্রিম নির্দেশ, আগাম জামিন কিংবা এফআইআর খারিজের জন্য নির্মাতাদের উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সুপ্রিম বেঞ্চের কথায়, "ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৮২ সিআরপিসির অধীনস্থ নিয়মের প্রয়োগ আমরা কিছুতেই করতে পারি না। আর তাই অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিকেও নাকচ করা হল।" এর পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটক সরকারের কাছে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআর বাতিলের যে আবেদন জমা পড়েছে, তার জবাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে।
প্রসঙ্গত, ১৫ জানুয়ারি ‘তাণ্ডব’ মুক্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই ওয়েব সিরিজ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। মহম্মদ আয়ুব জিশান অভিনীত এক দৃশ্যে শিবকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি করেন নেটিজেনদের একাংশ। এরপরই বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার দাবি রাখেন। উপরন্তু নেটদুনিয়াতেও ট্রেন্ডিং হয় #BanTandavNow। উত্তর প্রদেশের হজরতগঞ্জে অভিযোগ দায়ের হয় পরিচালক আলি আব্বাস জাফর এবং সইফ আলি খানের বিরুদ্ধে। যার জেরে সইফের বাংলোর বাইরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা মোতায়েন ছিল। শুধু নবাবের বাড়ির বাইরেই নয়, আমাজনের অফিসের বাইরেও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তা। যাবতীয় বিতর্কের জেরেই এবার ‘তাণ্ডব’-এর কন্টেন্টে বদল এনে বিতর্কিত দৃশ্য মুছে ফেলেন নির্মাতারা। কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি।