হেমন্তে যেভাবে ঝুপ করে সন্ধ্যে নামে, সেভাবে নয়, বরং পৌষের রাত যেভাবে গভীর হয়, সে ভাবেই সংগীত জাঁকিয়ে বসে আমাদের শরীরে, মনে। মননেও। বিশেষ করে ধ্রুপদী সংগীত। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কলকাতায় আসবে সেরকম কিছু দুপুর, কিছু সন্ধে। বলছি, স্বর সম্রাট উৎসবের কথা।
সপ্তম বছরে পা দেওয়া এই সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে থাকে 'শ্রীরঞ্জনী ফাউন্ডেশন'। নাম শুনে আলাদা করে বলে দিতে হয় না ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ-এর স্মৃতির উদ্দেশে সুরের এই আয়োজন। শুক্রবার স্বর সম্রাট উৎসবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন প্রখ্যাত সরোদ বাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তিনি নিজে খাঁ সাহেবেরই শিষ্য। গেল পৌষেও মহানগর সাক্ষী থেকেছে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, পণ্ডিত যশরাজ, পণ্ডিত বির্জু মহারাজ, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার সুর এবং তালের মূর্ছনার।
সাংবাদিক বৈঠকে পণ্ডিত বিজয় কিচলুর সঙ্গে এবং মমতা শঙ্করের সঙ্গে পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার
১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর নজরুলমঞ্চে দুপুর গড়িয়ে সন্ধে নামবে সুরের জগতের সব দিকপাল মায়েস্ত্রোদের হাত ধরে। এ বছরের উৎসবে থাকছেন ওস্তাদ জাকির হোসেন, পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ কুমার (ভোকাল), মঞ্জু মেহতা (সেতার), ডঃ মল্লিকা সারাভাই (ভরতনাট্টম), বেগম পরভিন সুলতানা, ওস্তাদ সুজাত খাঁ -এর মতো ধ্রুপদ শিল্পীরা। উচ্চাঙ্গ সংগীতের তরুণ প্রতিভাদের জন্যেও ডিসেম্বরের আট এবং নয় তারিখ
মধুসূদন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্বর সম্রাট আলাপ উৎসব'।
শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠানের জন্য এ শহরে এখন স্পনসরার পাওয়া দায়, একসময়ের দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীর প্রতি অবশ্য এই অভিযোগ বারবারই উঠল শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে। যে ধ্রুপদ সংগীতের জন্য, সারা পৃথিবী একদিন চিনেছিল ভারতকে, দেশে যেন তার সমাদর কিছুটা কম, আলোচনায় বারবার উঠে এল সেই প্রসঙ্গ।
তাৎক্ষনিক, হালকা বিনোদনের ভিড়ে, গভীর সংগীত সাধনার প্রতি ঝোঁক কি তবে সত্যি কমে যাচ্ছে? হারিয়ে যাচ্ছে ধ্রুপদী সুরে কত রাত বুঁদ হয়ে কাটিয়ে দেওয়া কানগুলো?