দিল বেচারা মুক্তি পেল। সুশান্তকে নিয়ে তুমুল আবেগ।তবে, সোশাল মিডিয়া ঘাঁটলে স্পষ্ট, ২৪ তারিখ যে ক্রেজ ছিল সিনেমাটির তা দ্রুত ফিকে হয়ে গিয়েছে। মৃত্যু রহস্য নিয়ে যুক্তি তক্কও যেন কিছুটা থিতিয়ে পড়েছে। তবে আমজনতা থেকে তারকা, অধিকাংশেরই দিল বেচারা দেখে মন খারাপ হয়েছে। কিন্তু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের কেমন লেগেছে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় সেসব কথাই জানালেন অভিনেত্রী।
দিল বেচারা মুক্তি পেয়েছে, সিনেমাটিকে ঘিরে সকলের মধ্যে উন্মাদনা স্পষ্ট ছিল। সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো দেখার সময় আপনার কেমন লাগছিল?
(কয়েক সেকেন্ড থেমে থাকার পর ....) কী বলব! ভালো লাগছিল, খারাপও লাগছিল। মনটা বড্ড খারাপ হয়েছিল সে সময়। আবার অন্যদিকে এত পজেটিভ প্রতিক্রিয়া পেয়েছি সেটাও ভাল লাগছিল। কিন্তু খারাপ লাগার বিষয়টা এতটা সেনসেটিভ যে অদ্ভুত অনুভূতি ছিল সে সময়টায়। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না মন খারাপের পাল্লাটা ভারী না ভালো লাগার পাল্লাটা। খুব দ্বন্দ্বে কাটিয়েছি ওই মুহূর্তটা।
View this post on InstagramA post shared by Swastika Mukherjee (@swastikamukherjee13) on
সোশাল মিডিয়া বলছে, সুশান্তের মৃত্যুই দিল বেচারা ছবির জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। আপনার কী মনে হয়?
প্রথমত এই ভাবনাটি খুবই অসম্মানজনক। এই ভাবনাটা সুশান্তকে অপমান করে। সে বেঁচে থাকলে ছবিটি কেউ দেখত না, সে মারা গিয়েছে বলেই লোকে দেখছে, আমি এক মত নই। এমনিতেই ওর মৃত্যুকে হাতিয়ার করে এত নোংরামো হচ্ছে। তাই আমার সত্যি মনে হয় এবার কোথাও একটা দাঁড়ি টানা উচিত। ভালো লাগা, খারাপ লাগা নিয়ে যাদের ছবিটি দেখার ইচ্ছা দেখবে, যাদের মনে হবে দেখবে না, তারা দেখবে না।
সুশান্তের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত মনে পড়ে?
সুশান্ত একটা টেলিস্কোপ কিনেছিল। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে ছিল। টেলিস্কোপটি আসার কয়েকদিনের মাথায় ওকে দীর্ঘদিনের জন্য জামসেদপুর চলে আসতে হয়। কিন্তু ও টেলিস্কোপ ছাড়া থাকতেই পারছিল না। তাই মুম্বই থেকে সেই টেলিস্কোপ নিয়ে আসে। ও জানিয়েছিল ওর অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল টেলিস্কোপ কেনার। যেহুতু অনেক দাম তাই পেরে উঠছিল না। অবশেষে টাকা জমিয়ে সেটি কেনে। ছোট বাচ্চারা নতুন খেলনা পেলে ঠিক যেমন করে, সুশান্তও ঠিক তেমন করত।
View this post on InstagramVideo Courtesy: @castingchhabra
A post shared by Swastika Mukherjee (@swastikamukherjee13) on
কিছু দিন আগে বাবাকে হারিয়েছ, শূন্যতা কিছুটা কেটেছ ?
ওটা আমার কাটবে না সারাজীবন। আমার মা চলে গিয়েছেন ২০১৫ সালে। এখনও একটা ছোট কাগজ হোক, চেক বই বা কানের দুল কিছু না পেলেই মনে হয়, মা থাকলে এক্ষুণি বের করে দিত। এখনও খুঁজছি অনেক কিছু পাঁচ বছর ধরে। তাই ওই শূন্যতাটা নিয়ে বাঁচতে শিখে গিয়েছি। ছবিটা ২৪ তারিখ দেখার সময় এটাই মনে হল, ছবিটি শুটিংএর সময় এত ক্যান্সার নিয়ে কথা হয়েছে। ছবিটি নিয়েও বাবার সঙ্গে কত কথা হয়েছে। কিন্তু তখনও ভাবিনি বা জানতে পারিনি যে বাবা ক্যান্সারেই মারা যাবেন।
কী মনে হয় সন্তু মুখোপাধ্যায়ের কি সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে?
এই কথাটা না আমি রোজ নিজের ক্ষেত্রেও শুনি। আমি জানি না ঠিক সঠিক মূল্যায়টা ঠিক কী? দিল বেচারা নিয়েও লোকে লিখছে, মোস্ট আন্ডার ইউটিলাইসড অ্যাক্টর।
তো আমি বুঝতে পারি না সঠিক মূল্যায়লোক মাপকাঠিটা কী!২০ বছর ধরে বাংলা ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রি যদি আমায় ব্যবহার না করে, আর কবে করবে আমি জানি না। চুলে তো পাক ধরে গেল, এবার হয়ত মুখে দাগ পরে গেলে মানুষের মনে হবে সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
পাতাললোক তারপর দিল বেচারা, কেরিয়ারের পিকে কী মনে হচ্ছে?
(দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে...) বাংলায় তো হল না। আমার যুদ্ধ আমার সঙ্গে। আমি আগের কাজের থেকে সব সময় পরে কাজটা আরও ভালো করার চেষ্টা করেছি। সেটা আমি হইয়েই ছাড়ি।
View this post on InstagramA post shared by Swastika Mukherjee (@swastikamukherjee13) on
আচ্ছা আপনি তো অভিনেতা বাবার অভিনেতা মেয়ে। নিশ্চই অনেক সুবিধা পেয়েছেন টালিগঞ্জে?
কী জানি! আমি তো টেলিভিশনে চার বছর ঘষে বড় পর্দায় কাজ পেয়েছি। আমি যদি দেখতাম আমি আবার বাবার মেয়ে বলে বিশাল একটা ছবির অফার পেয়েছি, বা বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতাম তখন কথাটা সত্যি হত বা তা নিয়ে মন্তব্য করতে পারতাম। আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। টেলিভিশনে আমি চারটি মেগা সিরিয়াল করি। প্রায় ৪০টির কাছে টেলিফ্লিম করেছি। তারপর আমি প্রথম বাংলা সিনেমাটি করি। তাও সেগুলো টেলিভিশনের কাজ দেখে পরিচালকরা যোগাযোগ করেন।
লকডাউনে কী ভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
বম্বেতে যতদিন আটকেছিলাম, ততদিন তো জামাকাপড় কাচা থেকে বাজার করা, রান্না করা, ঘর ঝাড়পোচ করা সবটা করতাম। ওখানে আমার গাড়ি নেই, তাই হেঁটে হেঁটেই বাজার যেতাম। ফিরে রান্না করে খেয়ে উঠতে বিকেল গড়িয়ে যেত। তারপর ক্লান্তি চলে আসত। বই সিনেমা আর ওয়েবসিরিজ দেখতাম বাকি সময়টা। পাতাললোক রিলিজ হওয়ার সময় অনেকটা সময় প্রোমোশনে দিতে হয়েছিল। এখন যেহুতু সব ডিজিটালে হচ্ছে, তাই সারাদিন জুম, ইনস্টা ও ফেসবুকেই দিন কাটছিল। কলকাতায় ফেরার পর থেকে দিল বেচারা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
View this post on InstagramA post shared by Swastika Mukherjee (@swastikamukherjee13) on
পরবর্তী পরিকল্পনা কী?
কলকাতায় এসেছি জানতে পেরে অনেকেই স্ক্রিপ্ট পাঠিয়েছে। সেগুলি পড়ছি। এখন যা সময়, তাতে তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলতেও পারছি। কবে শুটিং হবে, কী হবে জানি না। আলোচনা চলছে। তবে তার আগে অনেকটা থমকে যাওয়া কাজ আছে। লকডাউন উঠলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগে বাকি থাকা কাজ গুলো শেষ করতে হবে।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি রাগ হয় কার উপর ?
বাবা মায়ের উপর। চলে যাওয়ার এত তাড়া ছিল এদের। আর কটা দিন থেকে গেলে পারত।
কার প্রতি সবচেয়ে প্রেম জাগে?
কলকাতায় এখন ফুলকি (পোষ্য) আর আমিই বাড়িতে আছি। কারণ, বম্বে থেকে ফেরার পর মেয়ে চলে গিয়েছে বোনের বাড়ি। আসতে বললেই বলে, মা চার মাস তোমর মুখ দেখেছি, আর না। বোনকে যদি বলি কী রে ওকে পাঠা, বোনও বলে হ্যাঁ দেখছি। ছোট বাচ্চা তো আর নয় যে বকা ঝকা দিয়ে নিয়ে আসব। তো এখন বাড়িতে থেকে আমার ফুলকির উপরই বেশি প্রেম জাগছে।