পরিস্থিতি মানুষকে কোথায় থেকে নিয়ে যেতে পারে এটা বোধহয় সকলের বোঝার কাম্য না। মানুষ নিজে এরমধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত না করলে একেবারেই সেটি বোঝা অসম্ভব। তেমনই একটা নাম স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁর জীবনে সংগ্রামের অন্ত নেই। তারপরেও ভীষণ সোজাসাপ্টা ভাবে থাকতেই পছন্দ করেন। সমাজের হয়ে আওয়াজ তুলতে ভালবাসেন। বাস্তবে ভীষণ স্ট্রং স্বস্তিকা, এবার 'শিবপুরে' অভিনয় করেছেন মন্দিরা চরিত্রে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে উজাড় করলেন সেসব অজানা গল্প।
স্বস্তিকা তো ভীষণ স্ট্রং একটা মানুষ, মন্দিরা কতটা মানুষ হিসেবে স্ট্রং?
মন্দিরা, চরিত্রটা এমন একটা চরিত্র যে ধরনের কাজ আগে হয়নি। অন্তত আমি দেখিনি। স্বস্তিকা বাস্তবে স্ট্রং। কিন্তু মন্দিরা, পরিস্থিতির চাপে পড়ে স্ট্রং। একজন সাধারণ মহিলা, সে তাঁর চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে নিয়ে যেভাবে জর্জরিত। এবং সেখান থেকে একটা মাফিয়া গ্যাংয়ের লিডার হিসেবে নিজেকে তৈরি করা। আমার তো মনে হয়, সাধারণত পুরুষদের আমরা মাফিয়া হিসেবে দেখি। পুরুষদের সঙ্গে যে একটা বিরাট লড়াই করেছে মন্দিরা, জীবনের পরবর্তী ভাগে দাঁড়িয়ে বলতে পারি কে হ্যাঁ ও খুব স্ট্রং।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপটা স্বস্তিকা কি বুঝতে পেরেছে?
আজ নয়, অনেকবছর ধরে বুঝতে পারছি। তবে, সত্যি কথা কী বলতো মেয়েদের আসল লড়াইটা মেয়েদের সঙ্গেই। পুরুষরা তো কোনও জায়গাতেই নেই। আজকে বলো একটা কথা, যখন কোনও মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে নিগ্রহের শিকার হয় তখন শাশুড়ি, ননদ এরা চাইলে বাঁচাতে পারে তো? নাকি পারে না? কিন্তু এরাও সমান দোষে দোষী। তাই মেয়েদের সঙ্গে মেয়েদের লড়াইটা অনেকদিনের। আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যদি বলো, তাহলে বলব আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আসি আমায় বলা হয় যে সন্তানের কথা কাউকে না জানাতে, তাহলে নাকি হিরোইন হিসেবে কেউ জায়গা দেবে না। তো, এটা কার জন্য? পুরুষদের কাছে ভাল হওয়ার জন্য নিশ্চই?
তোমার কি মনে হয়, আজকালকার মেয়েদের মধ্যে তথাকথিত চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে?
বহুযুগ ধরে মেয়েরা অনেককিছু শুনে আসছে। লড়াই করে আসছে নিজের মত করে। কিন্তু একটা হিপোক্রেসি আছে। আমরা আলোচনা করি শহরকেন্দ্রিক। গ্রামে যে মেয়েদের সঙ্গে কত কি হয়? আমরা অর্ধেক কিছু জানতেই পারি না। গ্র্যাজুয়েশন হলেই বিয়ে দিয়ে দাও, এই মনোভাব তো রয়েছেই। তবে, ভাল দিক একটাই, আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে এখন প্রকাশ্যে কথা বলতে পারি। আলোচনা হয়, মেয়েদের সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করা হয়।
স্বস্তিকার সংসার সংক্রান্ত কোনও আক্ষেপ আছে?
আমি অনেক চেষ্টা করেছি বিশ্বাস করো। আক্ষেপ জিনিসটা আমার নেই। আমি আর এটা নিয়ে ভাবতেই চাই না। নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিয়েছি। আমার আর কোনও আক্ষেপ নেই। তবে, হ্যাঁ! আমি যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি সেটা অনেকেই জানে না। আবার অনেকে এর থেকেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়। আমায় নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে এটুকুই।
ছবির ডায়লগ অনুযায়ী, সম্মান ছিনিয়ে নিতে হয়... স্বস্তিকার কাছে সম্মান কি আদায় করে নেওয়ার জিনিস নাকি অর্জন করে নেওয়ার?
হাহা .. আমার তো মনে হয় সম্মান অর্জন করাটা একটা বিরাট আর্ট। এত জন্য ধৈর্য ধরতে হয়। দাঁত কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। মানুষের কদর্য ভাষা সহ্য করতে হয়। তাহলে, যদি একটা দীর্ঘ সময় পর তুমি একজন সম্মানের পাত্রী হও। মানুষের জন্য কাজ করা, এবং তাঁদের মনে ধরার বিষয়টা একেবারেই সহজ নয়। আমায় নিয়ে চব্য কম হয়নি। তবে, আজ বলতে পারি দীর্ঘ এতবছর পর, যে আমায় মানুষ একটু হলেও ভালাবসেন, সম্মান করেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছবি? একদম অন্য ধরনের, ভয় লাগে নি?
না, ভয় আমার লাগে না। আমি তো একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি মাত্র। আর মাথায় একটা চিন্তাভাবনাই চলে। যে এই একটা দারুন চরিত্র পেয়েছি। আমায় অভিনয় করতে হবে। ব্যাস! পরবর্তীকালে যদি কিছু হয়, তবে সেটা তো যারা নির্মাতা তাদের ওপর আসবে... ( হাসি )।
তোমার কি মনে হয় সাতে পাঁচে না থাকা মানুষদের ওপরই জোর জুলুম হয়?
আমি তো সাতে পাঁচে থাকাই ব্যাক্তি। আমি তো এসবই করে থাকি। আমার তো মুখে কিছু আটকায় না। আমি যা নয় তাই বলি। এমন কোনও বিষয় নেই যে আমি কথা বলি না। হয়তো কাউকে চিনিও না এমন মানুষের হয়েও আমি কাজ করেছি। তারা হয়তো জানতেই পারবে না। আমার চোখে যেটা লাগবে, আমার যেটা মনে হবে, আমি সেটা নিয়ে বলবই। আমার কিছুতে ব্যাঘাত ঘটলেই বলব এটা না।
মন্দিরার মত বদলা নেওয়ার আগুন রয়েছে স্বস্তিকার মধ্যে?
আমার একার কেন? প্রতিশোধ কি মানুষ নিতে চায় না? সভ্য সমাজে থাকি বলে আমরা প্রতিশোধ নিতে পারি না। নাহলে হয়েছিল এতদিনে। আমার একটা শান্তি কী বলতো, এই মন্দিরা বিশ্বাসের হাত ধরে আমি প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেছি। এইধরনের চরিত্রগুলো পেলে না মনের একটা শান্তি পাই। ক্যারেকটারের মধ্যে থাকলেও আমি মন থেকে যেন প্রতিশোধ নিয়ে ফেলি, একটা শান্তি লাগে আমার।
ব্যাক্তিগত জীবনকে চরিত্রের মাঝে খুঁজে পাও?
তাইই তো করি! আমি তো আমার সারাজীবনের যে না পাওয়াগুলো এভাবেই বাঁচি। এটা একটা আশীর্বাদ আমার কাছে। আমি তো মন্দিরা হয়ে ইচ্ছে করে কয়েকটা গুলি বেশি চালিয়েছি। যেখানে ৬টা গুলিতে হয়ে যেত আমি মনের জ্বালা মেটাতে এসব করেছি। ১০টা গুলি চালিয়েছি। অনেককিছু বলার করার থাকে তো, ওই যে বললে বদলা...
স্বস্তিকার যদি সিস্টেমে বদল আনতে হয় তবে সেটা কি?
যদি বদল আনতেই হয় তবে, আমি রাস্তার কুকুরগুলোর জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। কারণ, আমার মনে হয় ওদের জন্য ভাবা উচিত। ওরা খুব অসহায়। আজকালকার দিনে মানুষ মেরে লোপাট করে দেওয়া কোনও ব্যাপার না, সেখানে একটা কুকুর তো স্বপ্ন। আমি পাওয়ার পেলে এটাই করব।