Swastika Mukherjee penned an emotional note: এই দুনিয়ায় মায়া বড়ই বিরল। এত অদ্ভুত এই অনুভূতি, পৃথিবীতে মায়া এমনই এক যা মানুষকে ডোবাতে পারে আবার ভাসাতেও পারে। স্বস্তিকার জীবনেও এমন কিছু কিছু বিষয় আছে, যাতে মায়ায় পড়েছেন তিনি।
যাদের উপস্থিতি অভিনেত্রীকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। কেবল কি প্রাণ আছে এমন কিছু? একেবারেই না, জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় এমন কিছু বিষয়, এমন কিছু জিনিস যা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে, যে এটা না থাকলে কী হবে? আজ স্বস্তিকার জীবনে ঠিক তাই ঘটেছে। এমন একটা জিনিস তাঁর জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে যার সঙ্গে তাঁর মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে। মা নিজে হাতে নিয়ে এসেছিল তাঁকে।
আসলে, কোনও মানুষ বা পশু না। অভিনেত্রীর মন খারাপ তাঁর বাড়ির মাইক্রোওয়েভ নিয়ে। মা যত্ন করে নিয়ে এসেছিল সেটিকে। তাঁর মেয়ের থেকেও বয়স বেশি এর। দীর্ঘদিন তাঁদের কাজে লেগেছে এই যন্ত্রটি। তাই তো শেষ কিছু মাস যখন এটি খারাপ হবে হবে করছে, তখন থেকেই এটিকে সামলে রাখার চেষ্টা করছেন স্বস্তিকা। অভিনেত্রী ভারাক্রান্ত হৃদয়ে লিখছেন...
"একটা ইলেকট্রিক যন্ত্রের প্রতি যে এতটা ভালোবাসা লেগে আছে, একটা যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যে মন খারাপের এমন একটা সংযোগ আছে, তাতে যে গলা বন্ধ হয়ে কান্না উঠে আসতে পারে তা আগে জানা ছিল না। সিনেমায় বোধগম্য না হলেও নিজের সঙ্গে ঘটল বলে হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে যে এমনটাও ঘটে। আমার বাড়ির মাইক্রোভেনটার আয়ু শেষ হলো। ওর বয়স আমার মেয়ের চেয়েও বেশি। বাড়িতে বিয়ের ম্যারাপ বাঁধা হলে যেমন অনেক নতুন জিনিস কেনা হয়, ১৯৯৮ সালে নতুন হয়ে আমাদের কাছে এলো। তারপর জীবন চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়। কোম্পানি উঠে গেলো, সম্পর্ক চুকে গেল, আমি মা হলাম, মা কে হারালাম, বাড়ীতে সাদা কাপড় জড়ানো শ্রাদ্ধের ম্যারাপ বাঁধা হল, জীবনের কত শত ঝড় ঝাপটা পেরোলাম, নাম হলো, কত কেউ, কত কিছু এলো গেল, মাইক্রোভেনটা রয়ে গেল।"
মায়ের হাতে আনা জিনিস, মায়া তো থাকবেই। তাতে যেন মায়ের গন্ধ মিশে থাকে। অভিনেত্রী সেসব দিনের কথা স্মরণ করেই লিখলেন, "গত এক বছরে ও নানান ভাবে জানান দিয়েছে যে ওর চলে যাওয়ার সময় আসন্ন তাও আমি সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ওকে আটকে রাখার। বারংবার ভেবেছি, আহারে মা কত উৎসাহ নিয়ে ওকে বাড়ি এনেছিল, কত রকম নতুন পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়াত, চারবেলা আর ঘামতে ঘামতে গ্যাস এ খাবার গরম করতে হবেনা - এই নিয়ে মা যতটা উৎফুল্ল ছিল, কোথাও যেন এই মেশিনটা মায়ের সব অনুভূতিকে নিজের মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সেই সময় একটা মাইক্রোভেন থাকা মানে আজকের দিনে অ্যাটমোস্ফিয়ারে ফ্ল্যাট থাকা। আরও মনে হলো - মানির জন্মের আগে থেকে ও আছে, ওর সামনে ডাইনিং টেবিলে বসে জল-খাবার খেয়ে আমার ওয়াটার ব্রেক হয়েছিল, মানি তখনও আমার পেটে, তারপর সন্তান হলো, সে বাড়ি এলো, বড় হলো, মানির ছোটবেলাটাও যেন ওর সঙ্গে অতঃপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা খিটখিট করতে করতে বাবার খাবার গরম করাটাও ওর কাছেই আটকে আছে। কত স্মৃতি - বিস্মৃতি। ভাবতে বসলে ভাবার অন্ত নাই। জীবনের ২৬ টা বছরের সাক্ষী এই মাইক্রোভেন। ও আর ডাইনিং রুমের পাশের টেবিলটায় থাকবে না, অন্য কেউ, নতুন কেউ এসে ওর জায়গাটা নিয়ে নেবে ভেবে চোখে জল এলো।"
যখনই কিছু মনে হয়, তখনই লিখে ফেলা ভালো, পরে যদি মনে হওয়াগুলো হারিয়ে যায়… একটা ইলেকট্রিক যন্ত্রের প্রতি যে এতটা...
Posted by Swastika Mukherjee on Wednesday, November 6, 2024
পুরোনো জিনিস একদিন না একদিন তো নষ্ট হবেই। কিন্তু দীর্ঘদিন যে সেবা দিয়ে গিয়েছে তাঁর অনুপস্থিতিতে যথেষ্ট কষ্ট হয় সকলের। বাকিরা সেটিকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখলেও স্বস্তিকার জীবনের সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে সেটি। তাই অভিনেত্রী নিজেও যেন সেটা চাইছিলেন না। তিনি আরও লিখছেন...
"মাসির কথা মতন ওকে নামিয়ে মাটি তে রাখলাম, নতুন এর জায়গা করতে, ২/৩ দিন ধরে ওই ভাবেই মাটিতে বসে ও যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। বাড়ির ভেতর নড়ছি চড়ছি আর ভাবছি - তবু তো আছে। মা বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক শুভানুধ্যায়ীরা বলে ছিলেন - অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকার চেয়ে চলে যাওয়াই ভালো, ঈশ্বরের অনেক কৃপা বেশি যন্ত্রণা পেতে হয়নি, চলে গেছে, এরকম মৃত্যু ভাগ্যের কথা। মা কে নিয়ে ডক্টররা বলেছিলেন, উনি থাকলে কিন্তু ভেজিটেবল হয়ে পরে থাকবেন, এর চেয়ে না থাকাই ভালো, আপনারা মন শক্ত করে চলে যেতে দিন। তখনও ভেবেছিলাম, আজও ভাবি, তবু তো থাকত - রোজ দেখতে পেতাম। বাড়ির মেঝেতে পড়ে থাকা মেশিনটার দিকে তাকিয়েও সেই একই কথা ভাবলাম - তবু তো আছে, তবু তো দেখতে পাচ্ছি। মানুষ আর মেশিন চলে গেলে বোধ করি একই মন কেমন রেখে যায়। যাক। আজ বন্ধুকে বিদায় জানালাম।"
উল্লেখ্য, আবেগের আরেক নাম বোধহয় স্বস্তিকা। তিনি যেভাবে মনের নানা কথা ব্যক্ত করে থাকেন, সেভাবে অনেকেই পারেন না। কেউ কেউ সমাজের আঙুল তোলার ভয় পান। সম্প্রতি তাঁকে টেক্কা ছবিতে দেখা গিয়েছে। এছাড়াও, আন্দোলনের মঞ্চেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।