স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, কাজের ক্ষেত্রে বরাবরই বেছে কাজ করা তাঁর পছন্দের। সম্প্রতি আমাজন প্রাইমের সিরিজ পাতাল লোক-এ তাঁকে দেখা গিয়েছে ডলি মেহরার ভূমিকায়। এদিন স্বস্তিকা এই সিরিজে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে।
পাতাল লোক-এ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অ্যামেজিং আর ভীষণ কমপ্যাশনেট ছিল পুরো ইউনিট। শুটিং খুব মজা করে কাটিয়েছি সেটা বলতে পারব না। কারণ চরিত্রটা খুব ইনটেন্স ছিল। অনেকটা কাজের চাপও ছিল। খুব টাইট শেডিউলে আড্ডা দেওয়ার অফুরন্ত টাইম না পেলেও টিমের সবাই খুব কানেক্টেড ছিলাম। শুটিংয়ের সময় সেরকম কথাবার্তা না হয়নি কিন্তু এখনও সেই যোগাযোগ সেই হৃদ্যতা থেকে গিয়েছে।
সাধারণত চরিত্র পছন্দ না হলে কিংবা সেখানে লেয়ার্স না থাকলে আপনি রাজি হন না, এই চরিত্রটিতে বিশেষ কী ছিল?
এই ধরনের চরিত্র আগে আমায় কেউ দেয়নি। যে কাজ আসে তার মধ্য থেকে বেছে যেটা পছন্দ হয় সেটাই করি। পরিচালকের কাজের ধারা দেখেও অনেক ক্ষেত্রে রাজি হয়ে যাই। তবে যে চরিত্র আগে একবার করেছি সেটা রিপিট করতে চাই না। পাতাল লোকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ সাবিত্রীর। একটা পথের কুকুরের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করব সেটা শুনে ভিতর থেকে ভাল লেগেছিল। এরপর আমার অসম্ভব পছন্দের একজন ভালো অভিনেতা নীরজ কবির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ারের সুযোগ ছিল। পারফরম্যান্সের অনেক জায়গা ছিল। পর পর কারণ দিয়ে যেতে পারি (হাসি)।
প্রথমবার স্ক্রিপ্টটা পড়ে মনে হয়েছিল এটা তো খুব সোজা। কিন্তু অভিনয়টা করতে গিয়ে দেখলাম অল্প সময়ে এক্সপ্রেশন, তার বাচনভঙ্গীর ভিন্নতাকে ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। পাতাল লোকে এত চরিত্র, তাঁরা প্রত্যেকেই অনবদ্য। কিন্তু সেই চরিত্ররা কথা কিন্তু কম বলেছে, এক্সপ্রেশনে অভিনয় করেছেন অনেক বেশি। তাই এটাও শেখার যে চরিত্রকে হিট করাতে রাশি রাশি ডায়লগ নয় নীরব থেকেও সেটা ফুটিয়ে তোলা যায়।
আরও পড়ুন, বিপর্যস্ত যাদবপুর-গড়িয়ায় ছন্দ ফেরাতে কর্মীদের পাশে সাংসদ মিমি, খাবার তুলে দিলেন হাতে
প্রযোজকের সঙ্গে কথা হয়েছে আপনার এখনও?
(মুচকি হেসে) কার্নেশের (এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসর) সঙ্গে কথা কথা হয়েছে, কিন্তু ওর দিদির সঙ্গে কথা হয়নি। (প্রসঙ্গত এই ছবির প্রোডিউসর অনুষ্কা শর্মা, সম্পর্কে তিনি কার্নেশের দিদি)। কার্নেশের সঙ্গে দেখা হয়েছে, প্রচুর আড্ডা দিয়েছি, খাওয়া দাওয়া হয়েছে। আশা করছি এরপর ওর দিদির সঙ্গেও কথা হবে (হাসি)।
আরও পড়ুন, ‘সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল’
অনুরাগ কাশ্যপের মতে বছরের সেরা সিরিজ পাতাল লোক, আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
দুর্ধর্ষ। রেসপন্সের ঠেলায় দু'ঘন্টার মধ্যে ফোনের ব্যাটারি চলে যাচ্ছে। সারাদিনে প্রচুর কল আর মেসেজ এসেই যাচ্ছে। আমি কালকেই প্রসিতকে (পরিচালক) বললাম, এরকমভাবে রেসপন্স পেতে কুড়ি বছর সময় লেগে গেল আমার (হাসি)। আমার বাবা সবসময় আমাকে বলত যে সময়ের আগে কিছু হবে না। আমার কুড়ি বছর পর সেই সময় হল আর কি!
তাহলে এরপর কী হিন্দি ছবিতেই বেছে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে?
আমি কিছু ভাবছি না এখনই। ভেবে কোনও লাভ নেই। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর ভেবেছিলাম স্টার হয়ে যাব। যশরাজ ফিল্ম, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কোলাবরেশন, মানে সে এক ভাবনা ছিল। এখন আর এসব ভাবি না। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার পর বিনোদন জগতে অনেক বদল হয়েছে। যাঁরা কাজের ছাপ রাখতে চায় তাঁদের জন্য একটা বড় সুযোগ এনে দিচ্ছে এই প্ল্যাটফর্ম। চেনা মুখ না থাকলে কেউ দেখবে না এই ভাবনা বদলে গিয়ে পুরোটাই এখন কনটেন্টকে ঘিরে ঘুরছে। পঞ্চায়েত সিরিজেও তাই। ডিরেক্টর থেকে অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার কারোকে মানুষ চেনে না অথচ কী সাংঘাতিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাতাল লোক যেভাবে কথা বলেছে সেটা নিয়ে কেউ সিনেমা বানাতে চায় না। অথচ বিষয়গুলি রোজ হচ্ছে আমাদের সমাজেই। কী অসাধারণ চিত্রনাট্য। কিন্তু এটাই যদি বড় পর্দায় হতো, দেখবেন এতো পলিটিক্স চলবে যে এ প্রোডিউস করবে না, এই স্ক্রিন পাবে না। শেষ অবধি ছবিটাই আর করা হয়ে ওঠে না।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এখন বড় বড় অনেক ছবি রিলিজ করছে। টলিউড কী করবে বলে আপনার মনে হয়?
যাঁরা এতদিন ধরে এই দুনিয়ায় আছে তাঁরা বুঝবে। আমার কিছু করার নেই। আমি তো অভিনেতা। আমার কাছে স্ক্রিপ্ট আসলে সেটা ভাল লাগলে, টাকাপয়সা পেলে কাজ করব। আমার দায়বদ্ধতা ওখানেই শেষ। সারাক্ষণ ধরে যাঁরা ইন্ডাস্ট্রিকে মাথায় তুলে রেখেছে তাঁরা বুঝবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন