অভিনয়? সে কি সহজ কথা? তাঁর থেকেও বড় কথা, অল্পবয়সে টলিউড থেকে বলিউড.. পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতাই বা কজনের থাকে? কিছুদিনের মধ্যেই জেনারেশন আমি থেকে সকলের হৃদয়ের Taj - হয়ে উঠেছেন সৌরসেনী মৈত্র। তাবড় তাবর অভিনেতাদের সামনেও তাঁকে টলানো যায়নি। বরং হয়ে উঠেছেন ফ্লোরের মেহেরুন্নেসা... কেমন অভিজ্ঞতা ছিল? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় সৌরসেনী।
আছ কেমন?
খুব ভাল.. এই জাস্ট একটু ফ্রি হলাম গো, সবমিলিয়ে চলছে।
পরপর দুটো হিট কনটেন্ট, সাবাশ ফেলুদা এবং তাজ...
আমি সত্যি বলছি, অসংখ্য ধন্যবাদ যারা আমায় এর যোগ্য মনে করেছেন। দুটোই একই প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট। একদম ভিন্ন দুটো চরিত্র, কিন্তু আমায় যে এতটা চ্যালেঞ্জিং দুটো চরিত্র দেওয়া হয়েছে তাতে আমি ধন্য।
টলিউড থেকে বলিউড কি ট্রানজিশন চলছে?
দেখো, এটাকে ট্রানজিশন বলব কিনা জানি না। তবে, যেদিন থেকে এই OTT বিষয়টা এসেছে কিংবা মানুষ এটাকে আরও বেশি করে গ্রহণ করতে শিখেছেন, তত যেন অভিনেতাদের আরও নিজেদের জায়গা বিস্তার করতে সুবিধা হয়েছে। আজকে একটা প্লাটফর্মে সব ভাষার কনটেন্ট রয়েছে। মানুষ সেটা দেখছেন, একজন শিল্পীকে চিনছেন। এটাই তো অনেক বড় কিছু।
শেষ কিছুদিন জুবিলীতে বুম্বাদাকে নিয়ে হইচই, তারপরই তাজে তোমায় নিয়ে প্রশংসা হচ্ছে...বক্তব্য?
যে মানুষটার নাম নিলে আমার নামের আগে, এটা শুনেই আমি খুশি হয়ে গেলাম। কারণ, বুম্বাদা ( প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ) একজন কিংবদন্তী। ওই মানুষটা আমার সঙ্গে কথা বলেছিল, আমায় এই চরিত্রের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছিল, আমি তাতেই খুশি। বুম্বাদার পর, আমায় নিয়ে ... ( হাসি )।
একদম ভিন্ন একটা চরিত্র, মেহেরুন্নেসা...রোলটা পাওয়ার পর পড়াশোনা করেছিলে?
সত্যি বলি? আমি খুব একটা প্রিপারেশনের সময় পাই নি। চরিত্রটা পাওয়ার পর প্রথমেই গুগল করে দেখেছিলাম। এটাই এখন সবথেকে সহজ একটা রাস্তা। নাহলে, দেখো ছোট থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের কথা আমরা সকলে পড়েছি। আমার ভীষণ প্রিয় একটা পিরিয়ড এটা। সেখানে মেহেরুন্নেসা এমন একটা চরিত্র। আমার থেকেও বেশি মনে হয় যারা সংলাপ লিখেছেন এবং পরিচালক যিনি তাঁরা শেষ পাঁচছয় বছর ধরে গবেষণা করেছে। আর এতটাই বিস্তারিতভাবে এগুলো নথিভুক্ত করা, আমার মনে হয় আমি স্ক্রিপ্ট থেকেই আরও বেশিকরে বুঝতে পেরেছিলাম মেহেরুকে।
ঐতিহাসিক চরিত্রকে জাস্টিফাই করা কি খুব কঠিন?
একটু তো বটেই। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আমি তাঁকে দেখি নি। সে কেমন আচরণ, বা প্রতিক্রিয়া দিতেন সেটা জানি না। আমায় মুঘল আদব কায়দা শিখতে হয়েছে। তার থেকেও যেটা বড় কথা, সেটা হল একটি চরিত্র যেটিকে প্রাণ দিতে হবে তার সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলা খুব দরকার। মেহেরুন্নেসা নামটার সঙ্গে অনেকেই অপরিচিত। কিন্তু নুর জাহানকে সকলেই চেনে। এই যে মাঝের এতটা সময়, তাঁর ভাবনা চিন্তা, সেই পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার ক্ষমতা, এটা তো সহজে হয় না। এটা একটা সততার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে হয়।
উর্দু বলেছ খুব সুন্দর....
শিখতে হয়েছে! অবশ্যই! আমি তো আজও কলকাতার মেয়ে। বাঙালি, এখানেই বড় হয়েছি। আমরা তো হিন্দিভাষীও নই। বাকিরা যারা সেটে ছিলেন তারা হিন্দিতে কথা বলেন। ফলেই, উর্দু বলার যে নাজাকত, এবং লিহাজ...এটা আমায় শিখতে হয়েছে। এখন আমি প্রো! ( হাসি )...
সৌরসেনি কতটা মন থেকে মেহেরু হয়ে উঠতে পেরেছিল?
নূর জাহান এমন একজন নারী ছিলেন, যিনি ভীষণ বাস্তবে বিশ্বাস রাখতেন। সাম্রাজ্যের জন্য অনেককিছু করতেন। ওরকম পরিস্থিতি হওয়ার পরেও নিজের সিদ্ধান্তে যে অটল থাকার ক্ষমতা, তাঁর থেকেও সেলিমের সঙ্গে যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, বন্ধুত্ব... খুব ডাকসাইটে মানুষ না হলে সেটা সম্ভব নয়। তাঁর দৃরতা কিংবা স্বতন্ত্রভাবের সঙ্গে আমার অনেকটাই মিল আছে। একটা কথা কী বলতো, ওই গরমে গুজরাটে আমরা শুট করেছিলাম। কিন্তু কস্টিউম পড়ার পর আমি আর সৌরসেনি থাকতাম না, আমি মেহেরুন্নেসা হয়ে যেতাম। আমার গরম লাগতেই পারে কিন্তু মেহেরুর না।
নাসির সাহেব এবং ধর্মেন্দ্রর থেকে কী কী শিখলে, একটু বলো?
দুজনেই একটা ইনস্টিটিউশন। ওরকম দুজন বর্ষীয়ান অভিনেতা। তারা আমার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করছেন। একবিন্দু বিরক্তি নেই। একই ধরনের কস্টিউম পরে কাজ করছেন। আমি তো, ভয়ে ছিলাম যে আমার সঙ্গে কথা বলবেন কি না, কিন্তু সত্যি বলি! আমি আপ্লুত। এত ভাল মানুষ দুজন। উনাদের উপস্থিতিটা একটা বিরাট শিক্ষা আমার কাছে। আমার জীবনের বড় পাওনা যে ওনাদের আমি আমার সামনে অভিনয় করতে দেখেছি।
সৌরসেনি তো ফিল্মি পরিবারের মেয়ে নয়, তাহলে এই যে এত সাফল্য এটা কি একটা...
হ্যাঁ! এটা ঠিক যে আমি নেপো কিড নয়..( হাসি )। এবার দেখো আমি আর কি বলি। আমার অভিনয় সকলে পছন্দ করেছেন। তোমরা আমায় ভালবাসা দিচ্ছ। বিরাট বড় কিছু কিনা বলতে পারব না। তবে, হ্যাঁ আমি কাজ করতে ভালবাসি, এটুকুই।
সবাই যে বলছে, এখন তুমি একদম টপে?
আমি বিশ্বাস করি না গো! একদম না.. আমার মা কে জিজ্ঞেস করবে তুমি, একদম না। আমি এসব টপ ফপ বিশ্বাস করি না। আমি জানি, আমায় কাজ করতে হবে। আমি মাটির মানুষ হয়ে থাকতে চাই। কোনোদিন ঘ্যাম বাড়াতে চাই না। ওটা হলেই বিপদ। সব শেষ হয়ে যাবে।
মডেলিং থেকে অভিনয়, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সুবিধা হয়?
এটা তো, যে যেমন ভাববে তাঁর ব্যাপার। যদি, আগেও ফিরে যাও তো জিনাত আমান থেকে ঐশ্বর্য্য, দীপিকা পাড়ুকোন সকলেই তো মডেলিং করতেন। এবার অভিনেত্রী আর মডেল দুটো ভার্সন খুব আলাদা। কিন্তু, শিল্পীসত্বাটা থাকা খুব জরুরি।
সামনে কোন বিগ বাজেট বলিউড ছবিতে দেখা যাবে তোমায়?
এখনও জানি না, বিশ্বাস করো! বেশ কিছু কথা চলছে। কিন্তু ঠিক হয় নি। আমি তো খুশি হব যদি বলিউডে বড়পর্দায় আমায় দেখা যায়।