Tanhaji movie cast: অজয় দেবগণ, সইফ আলি খান, কাজল, শরদ কেলকর, লিউক কেনি
Tanhaji movie director: ওম রাউত
Tanhaji movie rating: ২/৫
মধ্য ভারতের কোনও এক অজ্ঞাত স্থানে, মধ্য-সপ্তদশ শতাব্দীতে, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সৈন্যদলের বিরুদ্ধে একমাত্র ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মহাপরাক্রমশালী মারাঠা বাহিনী।
মারাঠাদের বীরত্বের কাহিনি নতুন কিছু নয়, কিন্তু ইদানীং যেন বন্যার স্রোতের মতোই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে 'মারাঠা মহত্বের' চর্চা। গত সপ্তাহেই আশুতোষ গোয়ারিকরের 'পানিপথ' ছবিতে বড়পর্দা জুড়ে শোনা গেল 'হর হর মহাদেব'-এর হুঙ্কার। মোটামুটি সেই একই পথে হাঁটে 'তানহাজি'। তফাৎ এইটুকুই যে, প্রধান তিন চরিত্রে আছেন যে তিন অভিনেতা, তাঁরা তুলনায় বেশি 'হেভিওয়েট'। অজয় দেবগণ হলেন সবদিক-থেকে-ভালো, মহাবীর তানহাজি মালুসারে (রবি ঠাকুরের কবিতায় 'তানাজি মালেশ্বর'), কাজল তাঁর পরমাসুন্দরী, কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রী সাবিত্রীবাঈ, এবং সইফ আলি খান সবদিক-থেকে-খারাপ, চরম ভিলেন উদয়ভান রাঠোড়।
চারদিক থেকে গর্জিত ভাষণের মাঝে মাঝেই গর্জে ওঠে ঘোড়ার খুরও। হওয়াই উচিত, যেখানে এই লোকগাথার প্রধান চরিত্র এমন এক ঐতিহাসিক চরিত্র যিনি মূলত যোদ্ধা হিসেবেই পরিচিত। ছবির শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, এই ছবির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন একাধিক বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, যাঁদের উপদেশ মেনেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে অদ্যাবধি 'অখ্যাত' তানাজির পুনরুত্থানের, যাতে মারাঠা বীরদের সারিতে নিজের উপযুক্ত স্থান ফিরে পান তিনি।
এ তো গেল উদ্দেশ্যের কথা, এবার রাস্তা ক্লিয়ার, শুরু হোক নাচগান এবং নিরন্তর অ্যাকশনের ধুম। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই ঘুরেফিরে আসে 'ভাগওয়া ধ্বজ'-এর (গেরুয়া পতাকার) পবিত্রতা সংক্রান্ত ভারী ভারী ডায়ালগ, যাতে ঠিক কী ধরনের ছবি দেখছেন, তা যেন কোনোভাবেই ভুলে না যান আপনি।
এতদিনে আমরা বলিউডি ব্র্যান্ডের দেশভক্তদের দ্বারা আমাদের গৌরবময় অতীতের পুনর্নির্মাণে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এতটাই, যে ছবিতে বর্ণিত দুষ্টু লোকেরা যে 'বহিরাগত' মুসলমানই হবে, তা বলাটা বাহুল্যই মনে হয়। এই ছবিতে ব্যাপারটা সোজা; হয় তুমি ওদের দিকে, নাহয় আমাদের দিকে।
বাজার গরম করে দেন ঔরঙ্গজেব (ভারী ব্রোকেডের পোশাক পরা কেনি), যখন দাক্ষিণাত্য মালভূমি অর্থাৎ 'ডেকান' অঞ্চলে তিনি শাসন করতে পাঠান তাঁর 'ওয়াফাদার' (বিশ্বস্ত) উদয়ভানকে। এর পাল্টা হিসেবে শিবাজি (কেলকর, একেবারে যথাযথ) সেখানে পাঠান তাঁর বিশ্বস্ত তানাজিকে, অতএব খেলা শুরু। মুশকিল হলো, আমরা কখনোই জানতে পারি না, ঠিক কে এই উদয়ভান, কোথা থেকে এসে হাজির হয়েছেন। কেন তিনি মুঘলদের প্রতি এতটা অনুগত। কিন্তু এসব তুচ্ছ প্রশ্নে উদয়ভানের কিছু যায় আসে না, কারণ তিনি মহা উৎসাহে খারাপ হতে ব্যস্ত, একদিকে কাউকে কেটে টুকরো করছেন, তো অন্যদিকে বন্দিনী যুবতীকে দেখে জিভের জল ফেলছেন (কে এই যুবতী? কোত্থেকে এলেন?), আবার আরেকদিকে ভাজা কুমিরের মাংসে কামড় দিচ্ছেন। ঠিকই পড়লেন।
যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, তাতে মনে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত জমকালো পোশাক-আশাক পরে, হাতের তলোয়ার ঝনঝনিয়ে, পতাকা উঁচিয়ে এগিয়ে যান আমাদের বীর পূর্বপুরুষরা, ঐতিহাসিক ছবির বাজার সুনিশ্চিত। কিন্তু তাই কি? কাহিনির উৎস ব্যাপারটা কি উঠেই গেল? সইফের আধপাগল ভিলেন চরিত্রটি উপভোগ্য, তবে ইদানীংকালে এই ধরনের মাংসখেকো, শয়তানের প্রতিমূর্তি, নিষ্ঠুর দুশমন (রণবীর সিং, সঞ্জয় দত্ত) বাজার মাত করছে বলিউডে। দেবগণ এবং কাজলের মধ্যে কিছু কোমল মুহূর্ত দেখা যায় অবশ্য।
তারপরেই রে রে করে চলে আসে ক্লাইম্যাক্স, উপচে পড়ে যুদ্ধ, সিজিআই, এবং যুদ্ধনীতি। অসম্ভব রকমের খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠে যান ডজন ডজন সৈনিক, ছুটে যান তীর-ধনুকের বৃষ্টি ভেদ করে। তানাজি নিজে ছুটে যান সাক্ষাৎ ধ্বংসের পথে, কিন্তু জয়ের পথেও, এবং 'ধান্দাবাজ পাষণ্ড' ভিলেনকে যথোচিত, এবং সগর্জন, শাস্তি দিয়েই শেষ হয় ছবি।
অতীতের সরলীকৃত, জমকালো চেহারা সমানে ভাসতে থাকে যাঁদের মনে, তাঁদের জন্য আদর্শ ছবি বটে।