Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

Tarikh Movie Review: মৃত্যুকে অতিক্রম করে যায় স্মৃতির টাইমলাইন

Tarikh Movie Review in Bengali: শাশ্বত-ঋত্বিক-রাইমা অভিনীত, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি তারিখ এমন একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া সম্পর্কের গল্প, যা বোনা হয় বাস্তব ও ভার্চুয়াল জীবনের স্মৃতির টানাপোড়েনে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tarikh Movie Review

ছবিতে শ্বাশ্বত-রাইমা

ছবি: তারিখ

Advertisment

পরিচালনা: চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

অভিনয়: শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, রাইমা সেন

রেটিং: ৩.৫/৫

Churni Ganguly Directorial Tarikh Movie Public Review: কিছু স্মৃতি অগোছালো, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। ঘরের এমন কোনও কোণে তার উপর ধুলো জমতে থাকে, যেখানে দৈনন্দিনতার আলো পৌঁছয় না। আবার কিছু স্মৃতি গোছানো থাকে আলমারিতে পাট করে রাখা শাড়ির ভাঁজে অথবা রান্নাঘরের কৌটোয়। তেমনই গুছিয়ে রাখা স্মৃতির টাইমলাইন ধরে যদি হেঁটে যাওয়া যায়, তবে গোটা একটা চলচ্চিত্র হয়। এ এমন এক ছবি, যার চিত্রগ্রাহক সময় স্বয়ং, এবং চিত্রনাট্য অনির্দিষ্ট। মুশকিল হলো, এই ছবির কিছু মিনিট, ঘণ্টা এবং নির্দিষ্ট পার্সপেক্টিভ থেকে ধরা পড়া বিশেষ কিছু ফ্রেম ফিরে দেখা সম্ভব, পুরোটা নয়। তাই জীবন নামক সেই জার্নির প্রত্যেকটি মুহূর্ত, প্রত্যেকটি তারিখ-কে সেলিব্রেট করার কথা বলে শাশ্বত-রাইমা-ঋত্বিক অভিনীত, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি 'তারিখ'।

১২ এপ্রিল মুক্তিপ্রাপ্ত, ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের এই ছবির মেরুদণ্ড তৈরি করে দেয় ফেসবুক স্মৃতির ঝাঁপি। মূল চরিত্র তিনটি - অনির্বাণ (শাশ্বত), স্ত্রী ইরা (রাইমা) এবং অনির্বাণের ছোটবেলার বন্ধু রুদ্রাংশু (ঋত্বিক)। অনির্বাণের জীবনকেই ফিরে দেখা এই গল্পে, বেশ কিছুটা তার ফেসবুক প্রোফাইলের টাইমলাইন বরাবর। সেই টাইমলাইনে ভেসে ওঠে বিশেষ কোনও স্টেটাস, প্রোফাইল ছবি বা বিশেষ চ্যাট রেকর্ড। আর সেই স্মৃতির পিঠে স্মৃতি এঁকে এগিয়ে চলে ছবির গল্প।

Tarikh Movie Review in Bengali

Tarikh Movie Review Tarikh Movie Review

বছর তিন-চারেক আগে হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার একটি বিশেষ দিক সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়। সেই সময়ে দেশি-বিদেশি একাধিক মাধ্য়মে সমালোচিত হতে শুরু করে ফেসবুকের মতো নেটওয়ার্কিং সাইট। বলা হয়, অচিরেই এগুলি হয়ে উঠবে ভার্চুয়াল কবরখানা। জীবন ফুরিয়ে গেলেও ভার্চুয়াল স্পেসে থেকে যাবে মানুষের অগুনতি স্মৃতি। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে বিমুখ করে তুলছে, সেই নিয়ে বিতর্ক চলছে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। 'তারিখ' সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্য়ালেঞ্জ জানায়, সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়া নামক এই আশ্চর্যকে।

আরও পড়ুন: বাংলা ছবির গর্ব মধুরা, এবার পাড়ি ‘কান’-এ

অপেরা মুভিজ প্রযোজিত এই ছবি বলে, সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরায় না, বরং বাস্তব জীবনের প্রত্য়েকটা তারিখ, সময়, ঘণ্টা-মিনিট যে কতটা অমূল্য, তা আর একবার মনে করিয়ে দেয়। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাবটেক্সট রয়েছে এই ছবিতে যা দক্ষতার সঙ্গেই বুনেছেন পরিচালক-চিত্রনাট্যকার। আদর্শবাদী বুদ্ধিজীবীর পলায়নপ্রবণতা, ভাবনার বিরোধাভাস থেকে ব্যক্তিগত সুখ-অসুখের দোলাচল, পুরুষতান্ত্রিক ঘেরাটোপ, প্যারালাল সম্পর্ক - অনেক কিছুই উঠে আসে ছবিতে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই ছবি স্মৃতির সংরক্ষণ দিয়ে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়ার কথা বলে।

চিত্রগ্রহণ এবং বুনন খুবই সময়োপযোগী। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় ছবির এডিটিংয়ের কথা। ছবির সেরা ট্রিটমেন্ট, কফিনবন্দি হয়ে মৃত চরিত্রের তার শহরে ফিরে আসা। সেখানে ক্যামেরা হয়ে ওঠে তার চোখ। কফিনের ঘেরাটোপ ভেদ করে সে যেন দেখছে তার শহরকে, চিত হয়ে শুয়ে, আকাশের দিকে চেয়ে। সঙ্গীত পরিচালনা এবং আবহ বেশ ভাল। রূপঙ্করের কণ্ঠে 'বন্ধু' গানটিও ভারি সুন্দর। বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী এই ছবির গল্পের সূত্রধর, তাদের উপস্থিতি ও স্বকণ্ঠে গান এই ছবির মাধুর্যকে বাড়িয়ে তোলে।

Tarikh Movie Review Tarikh Movie Review

আসলে এই ছবি তো প্রবীণ প্রজন্মের উপলব্ধি থেকে পরের প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা, তাই মৃত্যুকে পেরিয়ে জীবনের বহমানতা এবং তারুণ্যকে বারবার ফিরিয়ে এনেছেন পরিচালিকা। শাশ্বত চট্টোপাধ্য়ায়, রাইমা সেন এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী, তিন তারকাই অভিনয়ে অনবদ্য়। অন্যান্য প্রধান চরিত্রে রয়েছেন অলকানন্দা রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়, অর্ধেন্দু বন্দ্যোপাধ্য়ায়, জুন মালিয়া, অনসূয়া মজুমদারের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং শিশুশিল্পী অ্যাডোলিনা।

আরও পড়ুন: Vinci da movie review: স্বমেজাজে রহস্যভেদ করলেন সৃজিত

একটি বিষয়ে শুধু খটকা রয়ে গেল। সাধারণত কোনও ইউজার মৃত, এই সংবাদটি ফেসবুকের কাছে এলে, ফেসবুক তা নিশ্চিত করতে কিছুদিন সময় নেয়। তার পরে তার নামের সঙ্গে রিমেমবারিং শব্দটি জুড়ে দেয়। বাংলায় এই প্রোফাইলগুলিকে স্মরণীয় প্রোফাইল বলা হয়। ছবির একেবারে শুরুর সিকোয়েন্সে এবং শেষে, যখন কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রায় দুবছর আগে মৃত, সেই সময়ে কিন্তু তার প্রোফাইল নামের ঠিক উপরে রিমেমবারিং শব্দটি চোখে পড়ল না। শুধু তাই নয়, লেগাসি কনট্যাক্ট নির্বাচনের প্রসঙ্গটিও ছবির গল্পে কোনওভাবে বুনে দেওয়া গেলে ভালই হতো।

Raima Sen Bangla Movie Review saswata chatterjee Ritwick Chakraborty Bengali Cinema Movie Review
Advertisment