শেষযাত্রায় কোনও আড়ম্বর চাননি তিনি। ফুল-মালার আতিশয্য থাকবে না। শোকের বাড়াবাড়িও নয়। শেষ ইচ্ছা মেনেই তরুণ মজুমদার চললেন সংসার সীমান্তের পারে। বড় প্রিয় ছিল সিপিএমের লাল নিশান। সেই লাল পতাকা গায়ে জড়ানো থাকল শেষবেলায়। বুকের উপর শেষ ইচ্ছা মেনে গীতাঞ্জলি।
Advertisment
শেষ বারের মতো কিংবদন্তী পরিচালকের নশ্বর দেহ দেখার জন্য ভিড় উপচে পড়ল টালিগঞ্জের এনটিওয়ান স্টুডিওতে। তার পর সেখান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। সেখানেই দেহদান করা হয়েছে। এনটিওয়ান স্টুডিওতে একে শ্রদ্ধা জানান অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে কলাকুশলীরা। সেখানেও দেখা গেল, ডান-বাম মিলেমিশে একাকার। রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন থেকে শুরু করে স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন শতরূপ ঘোষ, সুজন চক্রবর্তীরা।
শ্রদ্ধা জানান কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, দেবদূত ঘোষঠাকুর, চন্দন সেনের মতো অভিনেতারা। আপোসহীন বামপন্থী ছিলেন তরুণ মজুমদার। শিবির বদলানোকে দুচক্ষে সহ্য করতে পারতেন না। ২০১১ সালে পালাবদলের আগে বহু বামপন্থী এবং বাম মনোভাবাপন্ন বুদ্ধিজীবী, শিল্পীরা একে একে বাম থেকে ডানপন্থী হয়ে যাচ্ছেন (পড়ুন মমতা শিবিরে)। বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই নিয়ে আন্দোলনে নামছেন। তখনও কট্টর বামপন্থা ছাড়েননি তরুণ।
নন্দীগ্রাম পর্বেও পথে নেমেছিলেন তরুণ। কিন্তু হেঁটেছিলেন বামেদের পক্ষে। তাঁর সঙ্গে সেদিন হাঁটা অনেকেই পরে শিবির বদলান। জায়গা পান সরকারি কমিটিতে (আনুগত্যের পুরস্কারস্বরূপ)। কিন্তু তরুণবাবু যাননি. তাই কোনও কমিটিতে জায়গাও পাননি। নিজের ছবিতে শুধু মানুষের কথা বলতেন। দীর্ঘ কয়েক দশকেও বামপন্থাকে ছাড়তে পারেননি। মৃত্যুর পরও শেষযাত্রায় তাই সঙ্গী হল লাল পতাকা, সঙ্গে প্রাণের ঠাকুরের গীতাঞ্জলি।