ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর এক হাসিতেই মারিতং জগৎ। তাসনিয়া ফারিন, এপারেও বেশ জনপ্রিয়। এবং বলাই বাহুল্য নিজেকে সিনেমার দরুণ তিনি নানাভাবে ফুটিয়ে তুলছেন। Bongo-র নতুন ছবি 'অসময়'। তাতে উর্বি, প্রধান চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। এবার, তাঁর মতামত আর অভিজ্ঞতাই এপার বাংলা থেকে শুনল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
সময়ের কাজে বিশ্বাস করো নাকি অসময়ে যেটা হয় সেটাই ভাল?
আসলে, কোনটা সময় আর কোনটা অসময় সেটা বোঝাই খুব মুশকিল জানো তো। কোন কাজটা কোন সময় হবে সেটা বিচার করা একটু মুশকিল। তবে, এটুকু বলতে পারি এখন যেহেতু অসময় ভাল যাচ্ছে, তাই 'অসময়' - ই ( হাসি )।
তাসনিয়ার কোনটা পছন্দ, খুব স্ট্রং ক্যারেকটার পর্ট্রে করা নাকি এমন কিছু যেটা তোমার নিজের সঙ্গে যায়?
আমার মনে হয় সব ধরনের চরিত্রই আমার ভাল লাগে। খুব স্ট্রং চরিত্র বারবার করতে শুরু করলে তো একঘেয়ে হয়ে যাবে। আমার এমন চরিত্র ভাল লাগে যেটা আমায় খুব চ্যালেঞ্জ করবে। যেটা আমি আসলে নই। সেটা আমার খুব প্রিয়। মনস্তাত্বিক যে বিষয়টা সেটায় গবেষণার প্রয়োজন। আর এই ধরনের চরিত্র গুলো করতে গেলে সেটা রিসার্চের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তো হ্যাঁ, এগুলোই...
অভিনেত্রী হিসেবে চ্যালেঞ্জ কিছু ফেস করেছ?
অবশ্যই! অনেক চ্যালেঞ্জ ফেস করেছি। কারণ প্রতিটা চরিত্র আলাদা। আর তাদের মেন্টাল স্টেটাস আলাদা। গঠন আলাদা। চারপাশে যারা থাকে সেই মানুষগুলো আলাদা। আসল চরিত্রের চ্যালেঞ্জ হল গ্রাফ তৈরি করা। আমি যেভাবে দেখতে চাইছি কিংবা পরিচালক যেভাবে দেখতে চাইছেন, সেটার একটা সমন্বয় খুব দরকার। সেটাই পর্দায় ফুটিয়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জ।
বিশেষ করে, এই সিনেমায় একজন কলেজ গোয়িং মেয়ে তাও আবার এতবড় অভিযোগ! মেয়েদের ওপর সমাজের জাজমেন্ট বেশি?
একটু বড় উত্তর দিতে হয়। আমার মনে আছে, আমিও কিন্তু গ্রামের মেয়ে। ঢাকায় এসেছিলাম ক্লাস যখন ৬। কলেজ গোয়িং মেয়ের ভূমিকা এখানে, একটু স্ক্রিন ইমেজটা কমিয়েছি। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বদলেছি। তারপর ধরো, একটু ডায়েট করেছি। একদম নো মেক আপ লুক, এগুলো একটু করার চেষ্টা করেছি। কোথাও যেন কিছু অংশ আমার নিজের কলেজ জীবনের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল।
এবার, আসি মেয়েদের ওপর সমাজের বিচার বিবেচনা। হ্যাঁ, এটা তো অবশ্যই মেয়েদের ওপর সমাজের জাজমেন্ট বেশি। মেয়েরা মায়ের জাত বলে বলে এমন হয়ে গিয়েছে না। যেন সে কোনও মানুষ না। একটা মেয়ে মানেই যেন বিরাট ব্যাপার। যেন তিনটে লিঙ্গ সমাজে, মানুষ ছেলে এবং মেয়ে। তুমি মেয়ে বলে এটা ওটা করতে পারবে না, এটা তো আমরা দেখে এসেছি। মেয়েরা যদি, মুখ ফুটে বাবা মায়ের সঙ্গে সবটা শেয়ার করতে পারত, তবে তাদের জীবনের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আসত না।
সুশীল সমাজের ব্যাখ্যা আর তার পছন্দের কথা, শব্দ দিয়ে বোঝালে কী কী বলবে?
সুশীল সমাজের চোখে তো একটা ভাল মেয়ে মানে, একটা লেভেল অবধি পড়াশোনা। তারপর সংসার করবে। চাকরি থাকলে সেটা সোসাইটি অ্যাপ্রুভড চাকরি। মানে ধরো শিক্ষিকা বা অনলাইন কিছু। এর বাইরে হলেই সে ভাল মেয়ে না। শুধু যে পুরুষরা সেরকম, এটা কিন্তু না। মেয়েরা অনেকেই আছে এমন ভেদাভেদ মানে। সেভাবেই তাদেরকে বড় করা হয়। সেকারণে, এটা চাপ থাকে। যে এইভাবে যদি আমি পোশাক পড়ি, বা সেভাবে মেলামেশা করি তাহলে আমি ভাল গণ্য হবে। এটা সোসাইটির রুল হয়ে গিয়েছে।
উর্বির মধ্যে থেকে কিছু শিখতে পারলে, যেটা তাসনিয়ার পরে কাজে দিতে পারে?
যেটা শিখলাম, সেটা হল জীবনে হাল ছাড়া যাবে না। এবং অবশ্যই যাত্রা চলতে থাকবে। এত কিছুর পর উর্বি যেভাবে নিজের যুদ্ধ চালিয়ে গেল সেটা কিন্তু ভয়ঙ্কর। সে তাঁর বাস্তবটাকে মেনে নিতে পারল না, কিন্তু বাঁচতে শুরু করল সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী। আরেকটা কথা না বললেই নয়, যে এই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে আমি এটুকু বুঝেছি, জীবনে মা-বাবার থেকে বড় কেউ না। তাদের কথা অমান্য করলে বিপদ হবেই।
ছবিতে তোমার দুটি লুক দেখা যাচ্ছে, একটা একদম সাদামাটা, আরেকটা খুব লাউড - জমকালো! পোশাক কিংবা সাজ- কারওর পরিচয় বা ক্যারেকটার জাস্টিফাই করতে পারে?
হ্যাঁ, দুটো লুক অবশ্যই। যখন উর্বি একটা ভাসমান সমাজের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছিল। যদিও পুরোটাই সঙ্গদোষে, ওই শো অফের বিষয়টা আরকি। তাই, চরিত্রের প্রয়োজনে সেটা করা হয়েছে।
একজন অভিনেত্রী হিসেবে কোথাও দাঁড়িয়ে মনে হয় যে ভারতীয় সিনেমায় এক্সপ্লোর করার জায়গা বেশি?
উপমহাদেশে কিন্তু অনেক ধরনের ছবি হয়। গল্প হয়। বাংলাদেশেও ভালভাল সিনেমার কাজ হচ্ছে। আর যেহেতু আমাদের ভাষা এক, সংস্কৃতি অনেকটা এক। সুতরাং একটা সুযোগ আছে। দুই দেশেই দুই দেশের মানুষরা কাজ করেন। সবটাই এক্সপ্লোর করার সুযোগ পান। তো, হ্যাঁ..সাংস্কৃতিক বিষয়টা তো বাদ দিলে চলে না।
তোমার বিয়ে এবং বিয়ের শাড়ি নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না। অভিনেত্রী হিসেবে কী মনে হয়, কাজ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলে ভাল নাকি ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে?
হ্যাঁ, ( হাসি )। আলোচনা ছিল, সত্যিই! তবে, সকলে বিষয়টা খুব পজিটিভ ভাবে নিয়েছিলেন। তাঁরা এও বলেছিলেন যে আমি আমাদের কালচার ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। যেভাবে নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম সেটাই দেখেছিলাম। আর একজন অভিনেত্রী হিসেবে, যেহেতু আমার অনেক অনুরাগী রয়েছেন, তাই তারা যেমন আমার কাজ নিয়ে ভাল খারাপ বিচার করবেন। তেমনই বিয়ের মতো একটা ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়েও যে আগ্রহ থাকবে তাঁদের সেটাই স্বাভাবিক। তবে, চেষ্টা এটাই থাকে, যেন আমার ব্যাক্তিগত এবং প্রফেশনাল জীবন মিশে না যায়। একটার জন্য আরেকটা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।