Raas Review: 'রাস' - অপেক্ষার, ভালবাসার, শিকড়ে ফিরে আসার গল্প..

Raas Review: কেমন হল নতুন ছবি? পারিবারিক ছবির সঙ্গে সঙ্গে এই ছবি শিখিয়ে দিয়ে গেল অনেক কিছুই, এছাড়াও এই ছবি এটুকু জানাল পরিবারের স্বার্থে মানুষ কত কি করতে পারে।

Raas Review: কেমন হল নতুন ছবি? পারিবারিক ছবির সঙ্গে সঙ্গে এই ছবি শিখিয়ে দিয়ে গেল অনেক কিছুই, এছাড়াও এই ছবি এটুকু জানাল পরিবারের স্বার্থে মানুষ কত কি করতে পারে।

author-image
Anurupa Chakraborty
আপডেট করা হয়েছে
New Update
raas

কেমন হল রাস?

মানুষ যদি তাঁর শিকড় ছিঁড়ে অন্যত্র গিয়ে বাস করতে শুরু করে, তাহলে সেই জায়গাও বেশিদিন তাঁর সহ্য হয় না। নিজের কাছের মানুষজনদের আপনজন হিসেবে গড়ে না তুলতে পারলে বোধহয়, কোনও মানুষের পক্ষেই পরদেশীকে নিজের করে গড়ে তোলা সম্ভব না। আর পরিবার, সে যাই হোক, কিন্তু পরিবারকে ফেলে নিজেকে নিয়ে ভাবনাটা যে কতবড় স্বার্থপরতা, সেটাই বোধহয় আড়াই ঘণ্টায় বেশ বুঝিয়েছেন পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।

Advertisment

রাস প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে, সবার আগে যেটা বলা উচিত - মানুষ বড়ই অভ্যাসের দাস, কারণ? অভ্যাস মানুষকে ভীষণভাবে বদলে দিতে পারে। রাসের শুরুতেএ দেখা যায় বাড়ির আদরের সন্তান সোম, তাঁর মায়ের মৃত্যুতে যে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়ে তাঁর বাবা পাড়ি দেয় একদম অজানা উদ্দেশ্যে। কলকাতায় বেড়ে ওঠা সমু ( বিক্রম চট্টোপাধ্যায় ) জীবনের অর্থ খুঁজতে বড় হয়ে ফিরে আসে মানিকপুর গ্রামে। যেখানে, রয়েছে তাঁর পরিবার। এই রাসের চক্রবর্তী পরিবার আর পাঁচটা বাড়ির মতোই। যে বাড়িতে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা আছে। পাঁচরকমের মতামত আছে। বাড়ির মেয়েদের সমস্যা আছে, আর দ্বন্দ্ব কোন্দল তো আছেই। কিন্তু, প্রত্যেক পরিবারের মতোই এই বাড়িটাতেও ভালবাসার বেশ কয়েকটা মানুষ আছে।

শহরে বড় হয়ে ওঠা সোম যখন নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে, তখন অত্যন্ত ভালবাসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু সমস্যার শিকার হয়। এক, ছোটবেলার বন্ধু রাই ( দেবলীনা কুমার ) যে একসময় তাঁর অপেক্ষায় নাওয়া খাওয়া ভুলে স্টেশন চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তাঁর মুখোমুখি হয়েই অনেককিছু শুনতে হয় তাঁকে। দুই, তাঁর হঠাৎ আগমন পরিবারে সম্পত্তির ভাগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু, গ্রামে এসে নানাভাবে সে বুঝতে পারে, চেষ্টা, সাহস আর ভালবাসা দিয়ে সমস্তরকম খারাপকে ভাল পথে চালনা করা সম্ভব। দীর্ঘ ২৫ বছর যে সোমু বাড়ির বাইরে ছিল, তাঁকে সহজে আপন করে নেয় পরিবারের বেশ কিছু সদস্যরা। আর রাস, অপেক্ষার গল্প। রাস পরিবারের একজোট হয়ে বেঁধে থাকার গল্প। যারা পারিবারিক ছবি দেখতে ভালবাসেন, তাঁদের এই ছবি বেশ ভাল লাগবে। শহরের সিমেন্ট কংক্রিটের দেওয়াল পেরিয়ে গ্রামের সর্ষে ক্ষেতের ফ্রেশ অক্সিজেন যে মানুষের কতটা প্রয়োজন সেই গল্পই বলবে এই ছবি।

Advertisment

অন্যদিকে রাই, তাঁর জীবনের আবৃত্তে একবার প্রবেশ ঘটেছিল এক ভালবাসার। কিন্তু, তাঁর জেদ এবং ইচ্ছের সামনে সবকিছুই ফিকে। সে মানিকপুরের মুশকিল আসান। নিজের জীবনটাকে আর পাঁচজনের মত বিলাসিতায় না গুছিয়ে নিয়ে, গ্রামের বুকেই মানুষের স্বার্থে পড়ে থাকতে রাজি সে। কিন্তু, নিজের চাহিদা এবং মন সম্পর্কে ক্ল্যারিটি নিয়েই বাঁচে সে। না তো অন্যায় সয় না কাউকে অন্যায় করতে দেয়।

আশা যাক, অভিনয় প্রসঙ্গে। অনুসুয়া মজুমদার, বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য হিসেবে তাঁর চরিত্রের মাধ্যমে এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, যা চোখে গ্লিসারিন ঢেলে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারে। বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং দেবলীনা কুমার নিজের চরিত্রে বেশ সাবলীল। তাঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ খুনসুটি নজর কাড়বে। অনির্বাণ চক্রবর্তী আপন চিন্তায় মগ্ন এই ছবিতে। এমন, সুখী মানুষ আর দুটো দেখা যাবে না এই দুনিয়ায়। অর্ন মুখোপাধ্যায় ও বেশ ভাল। হালকা নেগেটিভ হলেও সামলে দিয়েছেন চরিত্রটিকে। ছবি রনজয় বিষ্ণু রয়েছেন খুব স্বল্প পরিসরে, তবে তাঁর স্মিত হাসিতে বঙ্গ তরুণীদের মন গলবেই। অন্তত, ছবি দেখে বাংলার মানুষ তাঁদের হারিয়ে যাওয়া পরিবারটাকে একবার হলেও খুঁজতে চাইবেন। একবার, একটা ফোন কলে জানতে চাইবেন, ভাল আছো? রাস শেখাবে, মানুষ আপনজনকে কাছে পেলে সব ভুলে যেতে পারে। কারণ, রাস ভালবাসার গল্প, অপেক্ষার গল্প এবং রাস ফিরে আসার গল্প।

  • ছবির নাম: রাস
  • পরিচালক: তথাগত মুখোপাধ্যায়
  • অভিনয়ে: বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, অনুসুয়া মজুমদার, দেবলীনা কুমার, অর্ণ মুখার্জি অনির্বাণ চক্রবর্তী - অন্যান্য।
  • রেটিং : ৩/৫
Bengali Film