সমাজ কী বলবে? মেয়েদের পক্ষে বলবে নাকি বিপক্ষে? কিংবা এই সমাজেই ভেদাভেদ, বর্ণবিদ্বেষের শেষ নেই। আজও, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে নানা সমস্যা, সাঁওতাল সমাজকে নিয়ে নাক কুঁচকানো, কতশত মন্তব্য! আকাশ আট চ্যানেলের দুর্গা সোরেন কি পারবে মানসিকতায় বদল আনতে? নাকি...
'আদালত ও একটি মেয়ে', এই ধারাবাহিকের লুক নিয়েই কিন্তু প্রথম থেকে চর্চা। একজন আদিবাসী আইনজীবী, যিনি কোর্টে যাচ্ছেন, কিন্তু সাজের মধ্যে বেশ অন্যরকম ভাব। মাথায় পালক, নাকে নোলক...প্রশ্ন উঠেছে এসব নিয়েও। কিন্তু, বাস্তবের অভিনেত্রী কঙ্কনা হালদার, নিজেকে দুর্গা সোরেন হিসেবে কতটা মিলিয়ে দিতে পারল, সেটাই তো আসল কথা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় নানা কিছু ইঙ্গিত করলেন তিনি। রিল এর সঙ্গে রিয়েলকে মিলিয়ে দিলেন।
এই চরিত্রটা বেছে নেওয়ার পেছনে কি কোনও উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার?
একদমই তাই! তবে, কাস্টিং হওয়ার আগে কিংবা পরে আমি কিন্তু গোটা মানুষটাই এমন। খুব প্রতিবাদে বিশ্বাস করি। কারণ, একটা ছোট ঘটনা না বললেই নয়। আমি এই শুটিং চলাকালীন ঝর্না মাসির যে চরিত্র করছেন দিদি তাঁর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। এবার উনি নামতে যাবেন গাড়ি থেকে একজন হঠাৎ পরেই না বুঝে গাড়ির দরজাটা ঠেলে বন্ধ করে দেন। আমি তো খুব রেগে গিয়েছি। যে, একজন বয়স্ক মানুষ, তিনি নামছেন একটু দেখব না কেউ? এটাও হয়? কেন হবে? উনি তো আমায় খুব সরি সরি বললেন, তারপর উনাকে আমি ছেড়েছি। আমি জানি না কেন, কিন্তু আমি চরিত্রের মধ্যে এতটা ঢুকে গিয়েছি যে আর কি বলব... ( হাসি )
তো, এই প্রতিবাদের ভাষা কি ছোটবেলা থেকেই বলতে শুরু করেছিলে?
হ্যাঁ হ্যাঁ! একদম। আমি মানুষটাই খুব অন্যায় অপছন্দ করি। একটা জিনিষ সবসময় মাথায় ঘোরে, কেউ অন্যায় করবে কেন? কেন একটা অপরাধ হবে? এবং অপরাধী শাস্তি পাবে না কেন? আমরা মেয়েরা বিশেষ করে, নানা জায়গায় শারীরিক হেনস্থার শিকার হই, আমার মনে আছে এমন একবার হয়েছিল যেখানে আমি গিরিশ পার্ক এলাকায় একজন লোককে রীতিমতো আঘাত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম এবং সেটা কোর্ট অবধি চলে গিয়েছিল।
দুর্গা সোরেন কি শুধু মেয়েদের জন্য লড়ে নাকি সকলের ন্যায়বিচার করে?
না না, সকলের ন্যায় বিচার করে। আমি আগেই বলে দিচ্ছি শুধু যে মেয়েদের জন্য লড়ব এমন কোনও ব্যাপার নেই। সামনের দিনেই দেখা যাবে একজন বাচ্চার জন্য আমি প্রতিবাদ করছি, সবটাই আরকি। যেখানে অন্যায় দেখে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আদিবাসী সম্প্রদায়কে আজও নানা বক্তব্যের শিকার হতে হয়, তাদের নিয়ে নানা বিশেষণ থাকে? ওদের আমাদের যে বিষয়টা, হিট করে তোমায়?
এখানেই তো প্রথম প্রশ্ন, যে ওদের আমাদের কেন? সকলেই তো আগে লেজ বিশিষ্ট ছিল। আমরা মানুষ হয়েছি অনেক পরে। এমন অনেকে আছেন যারা নেপালি বা সিকিমের মানুষদের দেখলে চাইনিজ বলে.. এটা কেন? কালো ফর্সা, জাত পাত নিয়ে এত কথা কেন হবে? আমি পাকুরে ছিলাম কিছুদিন, সেখানে ঝাড়খণ্ডের ওপরে পুরোটাই সাঁওতাল। সেখানে আমি ওদের সঙ্গে এত মিলে গিয়েছিলাম যে কী বলব আর। সেখানে একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয় ও অনার্স করছে। ওই এলাকার প্রথম মেয়ে ও। আমি এত অনুপ্রেরণা পেয়েছি ওকে দেখে। ওর আরও পড়ার ইচ্ছে। আমি ওকে বলে এসেছি, নম্বর দিয়ে এসেছি। যে যদি কলকাতায় এসে পড়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে যেন যোগাযোগ করে। যোগ্যতা থাকলে, ট্যালেন্ট থাকলে সেটা বেরিয়ে আসবেই।
আদিবাসী 'আইনজীবী', তারপরেও ফার্স্ট লুকে মাথায় পালক আর নাকে নোলক কেন? এরকম তো দেখা যায় না....
না! এটা কিন্তু আমার ইচ্ছে নয়। সবটাই চ্যানেলের ইচ্ছে। তবে, বিষয়টা আমার খারাপ লাগেনি। কারণ একটাই, আমায় মনে হয়েছিল জিনিসটা যদি এমন না হতো... অর্থাৎ, আমার মাথায় যদি পালক আর নাকে নোলক না থাকত তাহলে সবাই ভাবত যে একটা মেয়ে যে কাজ করছে। সাঁওতাল বিষয়টা উঠেই আসত না। কারণ, আমি বলেছিলাম যে দুর্গা সোরেন, যে সমাজের জন্য কাজ করে। এটা কিন্তু একটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া, বিজ্ঞাপন বা পোস্টার এর ক্ষেত্রে মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য এগুলো হয়েই থাকে। আমি যখন ঝাড়খন্ডে ছিলাম, এমনও দেখেছি যে ওনারা খেতে পারছে না। কিন্তু রুপোর গয়নার ওপর খুব ভালবাসা। চকচকে রুপোর গয়না পরে ওরা সারাদিন থাকে।
কিন্তু, সোরেন পদবীটি শুনলেই কি মানুষটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের এটা বোঝা সম্ভব না?
সম্ভব! কেন সম্ভব না। এখন যখন টেলিকাস্ট হচ্ছে তখন তুমি দেখতে পারবে আমি কিন্তু কোর্ট এলাকায় এভাবে যাচ্ছি না। একদম সাধারণ ভাবে যাচ্ছি। মানে নাকে নোলক বা কিছুই নেই। পুরো বিষয়টি কিন্তু মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য করা হয়েছে। আর কিছু নেই! আমরাও জানি, সমস্ত পেশার একটি নির্দিষ্ট পোশাক রয়েছে। তাই, যারা দর্শকরা আমার লুক দেখেই মন্তব্য করেছিলেন তারা হয়তো উত্তর পাবেন।