বড় বড় চোখ, পাঁকানো গোঁফ - মহিষাসুরের সঙ্গে এতটা মিল বোধহয় আর কোনও মানুষের ছিল না। তখন দূরদর্শনের পর্দায় হত মহিষাসুরমর্দিনী। আর মহিষাসুর অমল চৌধুরীর সেই অট্টহাসি আজও যেন ঘোরের মত বাঙালির কাছে। কিন্তু আজ আর তাঁর কোনও খোঁজ নেই। প্রথম মহিষাসুর হারিয়েছেন দিনের পরিবর্তনে।
অশোকনগরের বাসিন্দা অমল চৌধুরী পরিচিতি লাভ করেছিলেন অমল অসুর নামে। তার সেই চেহারা নজরে এসেছিল দুই টেকনিশিয়ানের। তারপর থেকেই দীর্ঘ কয়েকবছর একাধারে অভিনয় করে গিয়েছেন মহিষাসুর রূপে। কিন্তু দিন পেরিয়েছে, আজ আর তাকে কেউ চেনে না। খোঁজ করে না শিল্পীর। একসময়ের টেলিভিশনের পর্দার বিখ্যাত সেই শিল্পী কেমন আছেন আজ?
কোঁকড়া চুল, বিরাট পেশীবহুল চেহারা, চোখের চাহনি - অমল বাবুকে দেখলে তখন ভয় পেত শিশুরাও। তার সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকত একজন শিল্পীর দক্ষতা। কালের নিয়মে তিনি হারিয়েছেন দর্শকদের মাঝে, তবে মা দুর্গার আগমনে আজও যেন স্মৃতিরা ভিড় করে। পুরনো দিনের কথা মনে করতেই ভারাক্রান্ত হয়ে যান অমল বাবু। অভাবের সংসারে আজ শুধু তিনি আর তাঁর অসুস্থ বোন। দাদা নেই আজ প্রায় অনেকদিন হল। পেটের দায়ে আজ রং-তুলিই তাঁর ভরসা।
ছোট বাচ্চাদের আঁকা শেখান অমল বাবু। সেইভাবেই চলছে সংসার। পুরনো সেই মহালয়ার দিনের কথা মনে পড়লেই কষ্ট ঘিরে ধরে তাঁকে। আত্মীয়রা আজ মুখ ফিরিয়েছেন। কোনোমতে চলছে দিনযাপন। এদিকে, একসময় নাট্যচর্চায় নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমেই সারা ফেলেছিলেন তিনি। তাঁকে টিভির পর্দায় দেখলেই আনন্দে আত্মহারা হতেন অশোকনগরের মানুষরা। কিন্তু আজ সবই অতীত। বয়স হয়েছে, চুল দাঁড়িতে পাক ধরেছে। এখন আর কেউ ডাকে না। মনে রয়েছে হাজার অভিযোগ, এভাবেই দিন কাটছে তার।
কখনও মহিষাসুর, কখনও যমরাজ আবার কখনও অসুর সেনাপতি হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। কাজ করেছেন বাংলা সিনেদুনিয়ার অনেকের সঙ্গেই। তবে আজ বড় অর্থাভাব। কিন্তু অমল চৌধুরীকে আজও চিনতে পারেন অনেকেই। কেউ কেউ এই প্রশ্নও করেন মহালয়া করছেন কিনা। সেই প্রশ্নের জবাব না দিতে পেরেও মন খারাপ হয়ে যায় অমল অসুরের।