গ্ল্যামারের হাতছানি। ঝকঝকে, চাকচিক্য জীবনযাপনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার মনোজগত। একের পর এক রহস্যমৃত্যু। ১৫ মে পল্লবী দের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ফ্ল্যাট থেকে। তার দিন দশেকের মাথায় আরেক মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের অস্বাভাবিক মৃত্যু। ২৪ ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই আরও এক অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর একই পরিণতি। পল্লবী, বিদিশা, মঞ্জুষাদের মতো তরতাজা প্রাণ কেন অকালেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? ভাবিয়ে তুলছে সমাজকে। মনের স্বাস্থ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও পোস্টের বন্যা। ঠিক একই বিষয়ে উদ্বিগ্ন অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ও।
যে প্রাণোচ্ছ্বল মানুষগুলিকে আমরা চোখের সামনে দেখছি। আদৌ তাঁরা ভিতর থেকে ভাল রয়েছেন তো? চরম পরিণতির আগে এই প্রশ্নগুলো হয়তো আমাদের কারোরই সেভাবে মাথায় আসে না। কয়েকটা হাসিখুশি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট কিংবা রিল দেখে অনায়াসেই সবাই বলে দেন যে, আরে এই মেয়েটি কিংবা অমুক ছেলেটিকে দেখো তো কখনও মনে হয়নি যে সে আত্মহত্যা করতে পারে! মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কষ্ট, অবচেতন স্তরে জমে থাকা না পাওয়ার ক্ষোভ, অভিমান চেপে অনেক সময়েই হাসিঠাট্টা করতে দেখা যায় অনেককে। কিন্তু মনের গভীরে গিয়ে খোঁজ রাখার চেষ্টা এই ব্যস্তজীবনে কেউই সেভাবে করেন না। ফলস্বরূপ, একাকীত্ব-অবসাদে ঘিরে থাকা মানুষটি কখনও কখনও চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ঠিক এমন জায়গা থেকেই গ্ল্যামার জগতের অন্দরমহল নিয়ে চিন্তাপ্রকাশ করেছেন ভাস্বর। যিনি টেলিপর্দার 'লোকনাথ' হিসেবে আজও বেজায় জনপ্রিয় দর্শকমহলে।
<আরও পড়ুন: ‘মনের দরজা খুলে রাখুন’, অবসাদে ভাল থাকার পাসওয়ার্ড দিলেন মীর>
পল্লবী দে'র পর বিদিশা দে মজুমদার, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মঞ্জুষা নিয়োগীর অস্বাবাবিক মৃত্যু। কেন বারবার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে গ্ল্যামারজগতে? অভিনেতা ভাস্বরের কথায়, "এদের অনেকের সঙ্গেই আমরা কাজ করি,চেহারা মনে থাকে না। এক-দুটো সিনের জন্য ছোট রোল করতে আসেন। চোখে অনেক স্বপ্ন, কিন্তু বাস্তবের মাটিতে পা দিয়েই বোঝেন কত সংগ্রাম এখানে। কেউ কারোর জন্য এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ! অনেকেই মফঃস্বলে নিজের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় থাকেন। সেখান থেকে বদ সঙ্গ, নেশা, একাকীত্ব, ভুল পথে পা বাড়ানো। হয়তো এঁদের অত নাম নেই বলেই গুঞ্জন কম, তবে রোজ এমন খবর কানে আসছে আর অসম্ভব খারাপ লাগছে।"
ভাস্বরের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে আরেকটি মেয়ের সংগ্রামের কথা। যিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে অভিনয়ের টানে এসেছিলেন। অভিনেতা লিখলেন, "বছর খানেক আগে সরকারি চাকরি ছেড়ে অভিনয় করতে এসেছিল একটি মেয়ে। ভীড়ের দৃশ্যে বা কখনো পথচলতি রোল এইসবই তাঁর ভাগ্যে জুটত। একদিন ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাল চাকরি ছেড়ে কেন এলে? সে বলল- আমি হিরোইন হব। পরে শুনলাম, সে এই ছোট কাজগুলো করার জন্য কম্প্রোমাইজ করতেও শুরু করেছে। আর তাকে এখন দেখি না। হয়তো বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে সরে গিয়েছে।
কিন্তু যারা সরে যেতে পারছে না, তারা অবসাদে ভুগছে, আত্মহত্যা করছে। কারণ তারা নানা বঞ্চনার শিকার। ক'দিন আগে শুনলাম একটি ছেলে ৭ লাখ টাকা এক প্রতারককে দিয়েছিল হিরো হবে বলে, ব্যাস সব শেষ।"
শুধু তাই নয়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় যখন ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন, তখনও এক মহিলা প্রযোজককে সর্বস্ব খোয়াতে দেখেছিলেন। অভিনেতার কথায়, "একজনের পাল্লায় পড়ে বাড়ি বন্ধক রেখে ছবি বানিয়েছিলেন ওই মহিলা প্রোডিউসার। ছবি কোথাও রিলিজ করাতে পারেননি। আমাদের কাছে এসে হাউহাউ করে কান্নাকাটি করে বলেছিলেন- আমার সব গেল।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন