লাইটস ক্যামেরা অ্যাকশন...রুপোলি পর্দায় যখন রোমান্টিক মেজাজে শাহরুখ খান তখন তৎকালীন কিংবা বর্তমান বঙ্গ তনয়াদের মনের ধুকপুকানি বাড়বে এটা তো খুব স্বাভাবিক। সিনেমাটিক অ্যাঙ্গেলে এন্ট্রি, চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছেন এমন হিরোর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু সময় যখন ২০২৩, মেয়েদের মনে জায়গা করে নেওয়া নিতান্তই সাধারণ ঘটনা নয়। ধারাবাহিকের এক হিরো, যেভাবে বাঙালি নারীদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তাতে কিন্তু বলাই চলে...বাজিমাত!
টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে আগে দেখা গেলেও কিংবা ওয়েব সিরিজে নিজের দক্ষতা দিয়ে কনটেন্টকে উচ্চতা দিলেও এবার যেন ডোডো চরিত্রেই অর্পণ হয়ে উঠেছেন সকলের নয়নের মণি। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে নিয়ে যা উত্তেজনা কিংবা প্রশংসা তাতে এটুকু পরিষ্কার, বঙ্গ তনয়াদের প্রেমের মানুষ হয়ে উঠেছেন তিনি। কিন্তু এই যে যাত্রাপথ, কতটা সহজ ছিল কিংবা 'হোস্টেল ডে'স এর পরীক্ষিত থেকে 'মেয়েবলা'র নির্ঝর হয়ে ওঠার নেপথ্যে কতটা স্ট্রাগল? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে আড্ডায় অর্পণ ঘোষাল।
শুটিংয়ের খুব ব্যস্ততা তো?
একদমই! কতদিন ধরে যে কাজ চলছে, থিয়েটার - সিরিয়াল... সময়ই হচ্ছে না।
থিয়েটার নাকি টেলিভিশন, কোনটা বেশি কঠিন?
কঠিন সহজের ঠিক বিষয় নয়, যেটা ব্যাপার সেটা হল সিরিয়ালের দিক দিয়ে কিংবা সবকিছুরই একটা নম্বর গেম থাকে। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে আমার চরিত্রটা শুধু প্রথম দিকে একটা আন্দাজ পেয়েছিলাম, পরের দিকে প্রয়োজনে কোনদিকে সেটা যাবে এটা তো আমি বুঝতে পারি না এখন থেকেই। থিয়েটারের ক্ষেত্রে সেটা হয় না।
ডোডোর চরিত্রে অর্পণ কতটা পারদর্শী?
হুম! বেশ কিছু পরিবর্তন তো হয়েছে। যেটা আমি করার চেষ্টা করেছি সেটা হল যা সংলাপ পেয়েছিলাম তাতেই এদিক ওদিক করে, আমার যখন মনে হয়েছে যে ডোডো নামক এই চরিত্রটা কোথায় কী বলতে পারে করতে পারে, সেভাবেই করেছি। লোকের কাছে যেন মিথ্যে বার্তাটা না পৌঁছায়।
ডোডো আর অর্পণ কতটা এক? নাকি একদম আলাদা?
না, এক তো একটু হলেও হতেই হবে। একজন আর্টিস্ট যখন একটা চরিত্র অভিনয় করেন তখন সে নিজের ভাবনা চিন্তা গুলোকে মেলানোর চেষ্টা করে। হয়তো আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে, সংলাপ এক থাকত কিন্তু ভাবনা চিন্তা, পোর্ট্রেট এর বিষয়টা বদলে যেত। কিছুটা একরকম, আবার অনেক জায়গায় আলাদা। যিনি লিখেছেন তিনি তো চরিত্রটা বর্ণনা করে দিয়েছেন আমি শুধু জাস্টিফাই করছি।
থিয়েটারের অর্পণ নাকি টেলিভিশনের অর্পণ?
পারফর্ম করার চাপটা দুটোতেই থাকে। আমি যখন থিয়েটার করতে গিয়েছিলাম, তখন চাপটা অনুভব করেছিলাম। থার্ড বেল পরে গেল মানেই আমার জীবনে যাই ঘটুক, মুড ভাল খারাপ ওসব মানে রাখে না। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে প্রতিদিন অভিনয় করা। আমায় টিপটপ দেখাতে হবে। হাসিমুখে শুট করতে হবে এটা চাপ তো বলাই যায়।
অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করছ, যেমন চিত্রা সেন...অভিজ্ঞতা কেমন?
উনার থেকে শেখার এটাই যে, বয়স হলেও একবিন্দু প্রফেশনালিজম শব্দটার খামতি নেই। শারীরিক সমস্যা সবকিছু এড়িয়েও উনি যেভাবে আমাদের সঙ্গ দিচ্ছেন। একটুও বিরক্ত হন না, শেষ মুহূর্তের শুটিংয়ে তাড়াহুড়ো হলেও নিজেকে শান্ত রাখেন। নিজেকে রিলাক্স রাখা, এগুলো খুব দরকার।
তুমি তো ওয়েবসিরিজেও বেশ জনপ্রিয় ছিলে, তাহলে টেলিভিশন কেন বেছে নিলে?
একটা ব্যাপার কি, আমাদের চারপাশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিটা একটু অন্যরকম। ওয়েব সিরিজটা সব জায়গায় পৌঁছায় না। ধর, কলকাতা কিংবা মফসসল...তবে টেলিভিশনটা কিন্তু অনেক মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যায়। শহরের চৌহদ্দির বাইরে টিভিই সব। আর এই কাজের যখন অফার আসে, আমি অনেক ভেবেছিলাম। কারণ, সময় বিষয়টা আমার কাছে খুব দাবি রাখে। যেহেতু আমি থিয়েটারের মানুষ। নতুন নাটক না করি, পুরনো গুলোও চালানো যাবে না। কিন্তু এই শোয়ের যারা কর্মকর্তা তাঁরা আমায় বলেন যে না, থিয়েটারের রিহার্সালে কোনওরকম অসুবিধা হবে না। আর যদি জিজ্ঞেস করো, তবে যা অর্থবর্ষ যাচ্ছে...একটা সিকিওরিটি। আর টেলিভিশন এক্সপেরিয়েন্স করি নি, তাই ইচ্ছেও ছিল।
চাপ বুঝতে পারছ কিছু?
চাপ তো ধরে নাও হচ্ছেই! প্রতিদিন আসো, দিনের পর দিন অভিনয় করো। এটা চাপ না, এটা একটা একঘেয়েমি। ভাল হলেও একনাগাড়ে কাজ...নিজেকে ডিপ্রেশনে না ফেলে কাজ করাই আসল। যারা প্রতিদিন এটা করে চলেছেন তাদের হ্যাটস অফ! এর কোনও বিরাম নেই। এরম হয় না, আমি কাউকে বললাম যে ব্যথা পেয়েছি আজকে আসতে পারব না। আমার কমিটমেন্ট রাখতেই হবে।
ডোডোর কারণেই কি 'হোস্টেল ডে'স এর পরীক্ষিত আজ জনপ্রিয়?
সত্যি বলি? আমি না জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কিছুই করি নি। প্রথম দিকে ছিল, এখন সেই মোহটা নেই। নিজের কাজটুকু করতে পারলেই হল। তবে, হ্যাঁ! হোস্টেল ডেস করতে গিয়ে চূড়ান্ত মজা করেছিলাম। কোনটা কার জন্য ফেমাস হয়েছে আমি সত্যিই বলতে পারব না।
মেয়েরা বলছে ডোডো খুব হ্যান্ডসাম, আর ছেলেরা বলছে এত বাড়াবাড়ির কী আছে? পরিস্থিতি সামলাচ্ছ কীভাবে?
( হাসি ) আমি হ্যান্ডেল করছিই না। সত্যি বলছি! বাইরের জগতের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ নেই। বইপত্র পড়ি, শুটিং করি। রিহার্সাল থাকে। আমার তো মনে পড়ে না, যে বাড়িতে শুয়ে বসে শেষ কবে কাটিয়েছি। যাই হোক, ওসব হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আমি তো যেচে পড়ে কাউকে ভাইরাল করতে বলি নি।
পার্টনারের কাছ থেকে সময় দেওয়া নিয়ে কথা শুনতে হয়?
আমি ওকে ক্লাস টেন থেকে চিনি। আগে আমরা বন্ধু ছিলাম। তারপর সেটা প্রেম-বিয়ে। আমাদের মধ্যে ওই প্রেমিক প্রেমিকা বিষয়টা নেই। আর সময়ের কথা যেটা বলছ, হ্যাঁ! এটা একটা হয়...কিন্তু ম্যানেজ হয়ে যায়, আমি আর ও নিজেদের কাজ সেরে হঠাৎ বেরিয়ে পড়লাম। আমার চাপটা ও মেনে নিয়েছে।
একইসঙ্গে একইসময়ে সিরিজ এবং সিরিয়ালের সুযোগ এলে...
আমি জানি না, সত্যি! থিয়েটার করতে করতে যেটা করা যায় সেটাই করব। ওয়েব সিরিজের একটা শর্ট স্প্যান থাকে। তবে, এটুকু বলতে পারি 'মেয়েবেলা' শেষ হলে আগামী একবছর আর কোনও সিরিয়াল হয়তো করব না।
অনেক বেশি সময় যায় বলেই কি তারকারা এখন টেলিভিশনের তুলনায় সিরিজে বেশি ঝুঁকছে?
সকলের কথা বলতে পারব না। তবে, আমার দিকটা বলতে পারি। কাজ ছাড়াও আমার নিজস্ব কিছু স্বপ্ন আছে। সেটাকে পূরণ করতে গেলে বা আমার স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে টেলিভিশনে লাগাতার কাজ করা চলবে না, বা সেই প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারব না। আমার ঘুরে বেড়ানোর খুব একটা শখ নেই, আমার বউ বলে আমি খুব বোরিং।