বাংলা সিরিয়ালে শাশুড়ির চরিত্র নিয়ে নানা আলোচনা হয়েই থাকে। কখনও ছেলের বউয়ের ওপর অত্যাচার, আবার কখনও ভয়ঙ্কর সব প্ল্যান... কূটকচালি লেগেই রয়েছে। কথায় বলে, এহেন সব দৃশ্যায়ন নাকি যত্ত ঝামেলার কারণ। শেষ কিছুদিন এই বিতর্ক আরও বেড়েছে। 'মেয়েবেলা' সিরিয়াল থেকে সরেছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। একরকম গল্প শোনানোর পর বর্তমানে সেটি অত্যাচারী শাশুড়িতে পরিণত হয়েছেন! অভিযোগ এনেছেন অনেক।
দীর্ঘ অনেকদিন পর রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ধারাবাহিকে ফিরেছিলেন। তাঁকে নাকি শুভাকাঙ্খীরা এমনও বলেছিলেন, এইধরনের চরিত্রে কেন অভিনয় করছেন? কিন্তু ধারাবাহিকে অভিনয় করতে গেলে, কিছু তো অদল বদল থেকেই যায়। অনেক সময় চরিত্রের প্রয়োজনে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় গল্প। এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা যোগাযোগ করেছিল বাংলা ধারাবাহিকের তিন জনপ্রিয় শাশুড়ির সঙ্গে। স্বাগতা মুখোপাধ্যায় থেকে ত্রমিলা ভট্টাচার্য এবং মানসী সিনহা কী বলছেন তারা?
দীর্ঘদিন, টেলিভিশন থেকে সিনেমা এমনকি থিয়েটার এর মঞ্চে তাঁরা অভিনয় করেছেন। দর্শকদের কীভাবে আকর্ষণ করতে হয় এই বিষয়ে তাঁরা ভীষণ অভিজ্ঞ। প্রসঙ্গেই স্বাগতা মুখোপাধ্যায় এর বক্তব্য, "আমি আমার বাস্তবের জীবনে এসবের সম্মুখীন না হলেও টেলিভিশনে কিন্তু এগুলো লেগেই থাকে। সিরিয়ালের শুরুতে একটা গল্প মানুষকে শোনানো হলেও পরবর্তীতে সেটা পাল্টাতে পারে। আর তাঁর থেকেও বড় কথা, এগুলো সবকিছুই নির্ভর করে প্রোডাকশন এবং দর্শকদের ওপর। শাশুড়ি মানেই যে অত্যাচারী এটা কিন্তু নয়। তবে, এটা নিয়ে এত খারাপ মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই। কারণ, সবটাই অভিনয়। আর সিরিয়াল কি বলতো? মানুষ রুটি বেলতে বেলতে সিরিয়াল দেখে। থিয়েটার দেখতে কটা মানুষ যায়? আদতে, একটু ইন্টার টুইস্ট লাগে।"
আরও পড়ুন < ‘আমি চিৎকার করলেই…’, রণবীরকে ‘সাধু’ বলে তুলোধনা ‘বিরক্ত’ আলিয়ার >
অন্যদিকে, 'পঞ্চমী' ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন ত্রমীলা ভট্টাচার্য। তিনি তো শাশুড়ি চরিত্র করতে করতে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তার কথায়, "আমি তো অনেক অল্পবয়স থেকে অভিনয় করছি শাশুড়ি হিসেবে। এখন তো যথেষ্ট কনফিউজ, সাপেদের মধ্যে কাকে বিয়ে করবে। তবে, আমি কিন্তু শাশুড়ীদের একটা পরিস্থিতিতেই দেখি সেটা হল ছেলেকে নিয়ে তাদের খুব অবসেশন। যখনই ছেলের কিছু হয়, তখনই বউদের দোষ। আর তাঁর থেকেও বড় কথা, এটা আমাদের সমাজে হয়েই থাকে। কিন্তু, বেশিরভাগ সময়েই দেখেছি এই যে চরিত্রয়ন গুলো, প্লট অনুযায়ী পাল্টায়। মানুষ যখন যেমন চাইছেন, তখন কিন্তু বদলে দেওয়া হয়। অনেকসময় আমরা দেখেছি ৫ মিনিট আগে স্ক্রিপ্ট চেঞ্জ হয়। তাই এটা কিন্তু গল্প লেখার ওপর নির্ভর করে। আর মেগা সিরিয়াল যেহেতু, কিছু তো রাখতেই হবে। আমার মনে হয় পাবলিক অশান্তি করতে পছন্দ করে। যেহেতু নম্বর এর বিষয় থাকে, তাই তাদের ইচ্ছেই শিরোধার্য। অনেকরকম এক্সপেরিমেন্ট করতে হয়। নতুন চরিত্রের যোগ হয়, চমক দিতেই হবে। সবকিছু তো ভাল হতে পারে না। তাহলে তো বন্ধ হয়ে যাবে ধারাবাহিক। নতুন কিছু দিতেই হবে, তার জন্য অনেক খাটনি প্রয়োজন।"
আরও পড়ুন < পদ্মাপাড়েও ‘পাঠান-ম্যাজিক’! দুদিনের সব টিকিট বিক্রি, উত্তেজনায় ফুটছেন শাহরুখ-ভক্তরা >
সিরিয়াল নিয়ে অশান্তিও কিন্তু হতে থাকে। বাংলার মানুষের অনেকেই কূটকচালি পছন্দ করেন। আবার অনেকে আছে একেবারেই নয়। সিরিয়াল মানেই খারাপ কিছু? একই গল্প! মেয়েদের ভিকটিম বানানোর চেষ্টা? তথাকথিত শাশুড়ির চরিত্র নিয়ে হাসিঠাট্টা হতেই থাকে। প্রসঙ্গে 'রাঙা বউ' সিরিয়ালের শাশুড়ি মানসী সিনহা বলছেন, "রূপা দি ভীষণ সিনিয়র আমার থেকে কিন্তু অনেকদিন পর এসেছেন তো, সেই থেকে বলছি। সিরিয়ালে যে শাশুড়ীদের দেখানো হয় ওটা খুব বাস্তব। সাধারণ জীবনেও এটা হয়। নিজেরা না পেয়ে বউকে খোঁটা দেওয়া এটা চলে আসছে বহুবছর। আর তাঁর থেকেও বড় কথা, সিরিয়ালের যে গল্প সেটা তো কারওর ওপর নির্ভর করে না। প্রতি সপ্তাহে গল্প বদল হয়। আমরা বসে থাকি সেটে, শেষ মুহূর্তে স্ক্রিপ্ট চেঞ্জ হয়। দর্শক যেটা চাইবেন তাঁর থেকে বেশি কিছু সম্ভব না। চ্যানেলও কিছু বলতে পারে না এই নিয়ে। আর রূপাদি যে চরিত্রটা করছিলেন, সেটাতে একজন মায়ের কষ্টটা দেখানো হচ্ছিল, এগুলো বাস্তবে হয়।"
উল্লেখ্য, মেয়েবেলা থেকে সরে যাওয়ার পরেই বিস্ফোরক রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে নানা কথা রটেছে। চরিত্রের মারপ্যাঁচ নিয়েও সরব হয়েছিলেন তিনি। তাঁর জায়গায় এসেছেন অনুষ্রী। এখন অন্যদিকে ঘুরছে এই ধারাবাহিক।