অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন বহুদিন আগে। একের পর এক হিট মেগা সিরিয়াল, নানান চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী ত্রমিলা ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে টেলি পাড়ার অন্দরের কাহিনী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে জানালেন তিনি।
Advertisment
কেমন আছ ত্রমিলা দি?
ভাল আছি, ঘুরে বেড়াচ্ছি। এদিক ওদিক..শুটিং চলছে। সব মিলিয়ে ওই আছি আর কি।
এখন তোমায় মৌ এর বাড়িতে দেখা যাচ্ছে, চরিত্র টা একদম আলাদা, কেমন লাগছে?
Advertisment
ময়ূরপঙ্খী সিরিয়াল করার সময়, আমায় এত নেগেটিভ দেখিয়েছিলেন লীনা দি ( লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ) যে আমি একদিন বলেছিলাম একটু সিরিয়ালের শেষে আমায় ভাল করো তো। তখন লীনা দি বলেন, এরপর আমায় পজিটিভ কিছু দেবেন। সেই থেকে জিয়ন কাঠি ধারাবাহিকে এক্কেবারে সুন্দর চরিত্র পেলাম। এবং এই যে ব্রেক টা এল তারপরেই মনোরমা। পজিটিভ রোল করতে কার না ভাল লাগে।
নেগেটিভ চরিত্রে খুব দেখা যায় তোমায়, এই নিয়ে কী বলবে?
আমি যেকোনও চরিত্র খুব জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি জানো তো। খলনায়িকা কিংবা নেগেটিভ ভাবে কোনওদিন সেই চরিত্রকে আমি দেখিনি। আমি সবসময় নিজেকে দিয়ে বিচার করি। একটা মানুষের চরিত্রেও ভাল খারাপ দুটো দিক থাকে। এখানেও তাই। আপাতদৃষ্টিতে সেটাকে নেগেটিভ মনে হলেও আদতে সেটা কিন্তু নয়।
তোমার মেয়ে এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখে, যে নেগেটিভ ধরনের চরিত্রে অভিনয় কর?
ওর তো খুব অসুবিধা হতো। মেয়ে হওয়ার পর থেকে নেগেটিভ চরিত্র বেশি করছিলাম। ওর বন্ধুরা আমায় দেখলে ভয় পেত। তখনই ও বলত মা তুমি অন্য ধরনের কিছু করবে গো, সেই থেকেই পজিটিভ রোলের দিকে আরও ঝোঁক বাড়ল।
দর্শকদের কী খুব ভিন্ন ধারণা থাকে যারা নেগেটিভ চরিত্র করেন তাদের প্রতি?
এটা একটা ধারণা থাকে সেটা বলতে পারো। যে যারা নেগেটিভ চরিত্রে কাজ করেন তারা পজিটিভ চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন এই ধারণাটা এক্কেবারেই থাকে না। বিশেষ করে এইসময় আমি সেটা আরও বেশি করে দেখছি। একটা ট্যাবু হয়ে যায় যে, ও! এই ব্যক্তি অভিনয় করছেন তাঁর মানে এটা নেগেটিভ। খুব আগে থেকেই লোকজন বুঝতে পেরে যায় যে এটা হতে চলেছে।
নেগেটিভ চরিত্রে করতে গেলে প্রিপারেশন কী লাগে?
নেগেটিভ চরিত্র করতে গেলে প্রচুর ইমোশনাল ক্ল্যাশ হয়। শারীরিক মানসিক একটা চাপ পরে এটা বলতে পারো। অনেক কিছু মেলানো যায় না। প্রতিদিন মনের সঙ্গে একটা যুদ্ধ চলে। নিজের স্বত্বা থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। তবে এখন আর আগের মত প্রিপেয়ার করি না। আমি আগে বোঝার চেষ্টা করি যে আমি যে চরিত্রে অভিনয় করছি সেটা আমি আসলে নিজে হলে কী করতাম, এই জাস্টিফিকেশন টা আমার প্রয়োজন হয়।
আজ অবধি, কোন চরিত্র সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং লেগেছে?
একক দশক শতক বিমল মিত্রের সেই ধারাবাহিকে কুন্তি বলে একটা চরিত্র করেছিলাম, সেটা চ্যালেঞ্জিং বলতে পারো। একটা অদ্ভুত গল্প ছিল। তাতে আমাদের শুটিং এ কতধরনের শট। কত কষ্ট করে অভিনয় করেছি। এতে অনেকে নতুন মানুষ অভিনয় করেছিলেন। দুটো চরিত্রে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। প্রচুর TRP ছিল।
লিড চরিত্রে যারা অভিনয় করছেন তারা কী ওভার অ্যাক্টিং করছেন এখন?
না, ওভার অ্যাক্টিং বলব কিনা জানি না। তবে ওরা কেউ কেউ এখন অভিনয় টা খুব একটা বেশি পারে না। অনেকে আবার করতে করতে শেখে। কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিচালককে শট দিতে হবে, সেটা ওরা অনেকেই জানে না। আমাদের সময় লিড খুব চাপে থাকত। নতুন নতুন ছেলেমেয়েদের যারা দেখতে ভাল তাদের শুধু নিয়ে নেয়। এবার ডায়লগ বলতে পারলে ভাল নইলে না। কিন্তু সহ অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রচুর প্রেসার থাকে। ওরা আছে বলেই ধারাবাহিক এগোচ্ছে।
ধারাবাহিকের গল্প নিয়ে কী বলবে?
সে তো সব একই ধরনের গল্প। খুব কম ধারাবাহিক রয়েছে যেখানে ভাল এবং নতুন গল্প থাকে। আমার মৌ এর বাড়িতে গল্পটা ইউনিক। একটু অন্য ধাঁচের। সেই দুটো বউ, একই গল্প আর ভাল লাগে না।
এমন কোনও চরিত্র যেটা না করতে পেরে আফসোস হয়েছে?
দুটো চরিত্র রয়েছে। এক আকাশের নীচে ধারাবাহিকের একটি চরিত্র আর দ্বিতীয় তিথির অতিথির একটি চরিত্র। দুটোই ভীষণ বিশেষ আর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল। সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাই বলতে পারো এই দুটো।
পর্দায় বর্তমানে কোনও ঐতিহাসিক চরিত্র করতে হলে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাও?
সত্যি কথা বলতে গেলে সীতা। এই চরিত্রটা যদি করতে পারি তাহলে ভাল লাগবে। অনেক কিছু দেখানোর আছে এতে। আজ অবধি এই চরিত্রে খুব একটা জাস্টিফিকেশন হয় নি। সেটা যদি করতে পড়ি তাহলে ভাল লাগবে।