সফল অভিনেতা হতে গেলে আসলেই কী প্রয়োজন? ভাল অভিনয় নাকি ভাল স্ক্রিপ্ট নাকি স্ক্রিপ্ট নির্বাচনের ক্ষমতা নাকি অভিজ্ঞতা। একের পর এক ওয়েব সিরিজে বেশ সাবলীল অভিনয়, অল্প বয়সেই বাজিমাত। বিশেষ করে জনপ্রিয়তা 'ডাকঘর' থেকে। 'দ্যা একেন' হোক কিংবা 'গোরা'... অভিনেতা সূহত্র মুখোপাধ্যায় কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে বেশ অটল। ছোটবেলার গল্প থেকে অভিনয় জীবনের প্রতিকূলতা ঝুলি উজাড় করলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে।
স্বভাবে বেশ ইন্ট্রোভার্ট, কিন্তু একথা অবশ্য স্বীকার করলেন যে একবার কারওর সঙ্গে মিশে গেলে কথা বলতে বলতেই তাঁর দিন পার হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই আর পাঁচজনের মত তাঁর বড় হয়ে ওঠা। মাঠে খেলে বেড়িয়ে, কার্টুন দেখে, মায়ের কাছে দু ঘা খেয়েই বড় হয়েছেন তিনি।
অভিনয় জীবন তো অনিশ্চিত, তবে সূহত্র এতে পা কেন বাড়াল?
সত্যি বলি, জাস্ট হঠাৎ করে হয়ে গিয়েছিল জিনিসটা। আমি হঠাৎ করেই অডিশন দিতে চলে গিয়েছিলাম। বলতে পারো, পড়াশোনা থেকে বাঁচতে গিয়েছিলাম। কিছু তো একটা করতে হবে। ওই ১০-৫টার ডিউটি করতে ইচ্ছে ছিল না। তারপর যখন দেখলাম যে হয়ে গেল। আমায় একটা লাইন অনেকবার করে ভিন্নভাবে বলতে দেখে তারাও বেশ খুশি হয়েছিলেন। তারপর থেকেই শুরু হল। আসলে আমাদের শেষ দেখার খুব অভ্যাস আছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করি।
সিরিয়ালে খুব একটা দেখা যায়নি তোমায়, ফরম্যাট পছন্দ হয়নি নাকি কোনও অন্য কারণ?
না, করেছি! আমায় মানুষ চিনতে শুরু করেছেন শেষ কিছু বছর। তবে, একটা সময় সিরিয়াল করেছি। আমার জার্নিটা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সাল থেকে ধর। সেই থেকেই চলছে। তারপর একটা সময় মনে হতো যে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে, সিরিয়াল তাও ধরো ৫-৬ টা করেছি।
সূহত্রকে কোণঠাসা হতে হয়েছে কোনওদিন?
হ্যাঁ...আমার তো ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ ছিল না। বিশ্বাস করো, একটা সময় আমি অনেক নতুন প্রজেক্টে কাজ করার পরেও সেগুলো যখন রিলিজ করত না তখন, খুব আশাহত হতাম। সেটাকে একধরনের রিজেকশন বলাই যায়। এসব অনেক হয়েছে আমার সঙ্গে। কত জায়গায় সংলাপ বলার পরও এডিটে দেখেছি যে আমার সেই দৃশ্যই নেই। স্ট্রাগলটা আমায় একাই করতে হয়েছে।
সূহত্রর Key পয়েন্ট নাকি তাঁর গলার আওয়াজ?
এটা আমি আগেও শুনেছি। অনেকেই আমায় বলত যে গলার আওয়াজটা নাকি অন্যরকম। শুধু তাই নয়, এখন তো মনে হয়, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে কাজ করতে করতে চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গে গলার আওয়াজটা অনেক দরাজ হয়ে গিয়েছে।
চ্যালেঞ্জিং চরিত্র নাকি যেটা মনে নাড়া দেয়?
যেটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। কারণ, আমার সেটা করতেই ভাল লাগে যেটা আমার মত না। সূহত্রকে দুমড়ে মুচড়ে নতুন কিছু একটা তৈরি করা আমার কাছে খুব আরামের। মনে কোনও চরিত্র নাড়া দিলেও যেটায় নতুনত্ব কিছু থাকবে না সেটা আমার খুব একটা ইচ্ছে করে না। আসলে, কী বলতো... অভিনয়ের ক্ষেত্রে সবথেকে কমজোরী মনে হয় একজন অভিনেতাই। কারণ, আমাদের কিছু বলার থাকে না। ধরো, কোনও এক্সপ্রেশন আমার দারুণ লাগল, কিন্তু পরিচালকের ভাল লাগল না। তখন, আমার বলার কোনও দাম থাকবে না। যদি ইন্ডাস্ট্রিতে পাওয়ার না থাকে, তাহলে সম্ভব না।
সিনেমার ক্ষেত্রে কি গোয়েন্দা বিভাগ বেশি পছন্দ সূহত্রর? নাকি রোমান্টিক?
একদমই না। আমরা গোয়েন্দা গল্প পড়ে বড় হতে পারি কিন্তু না। আমার রিয়ালিস্টিক চরিত্র খুব ভাল লাগে। আমি উপভোগ করি ওগুলোই। আর রোমান্টিক যদি বলো, তাহলে বলব আমাদের কাছে রোমান্সের সংজ্ঞাটা খুব ভিন্ন। শাহরুখ খান শিখিয়েছেন রোম্যান্স করা। কিন্তু, বাস্তবে রোম্যান্স খুব আলাদা। ছোট ছোট জিনিস হয় রোমান্সে। তাই ঐদিকে না যাওয়াই ভাল।
জীবনে কঠিন পর্যায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য কোন গোয়েন্দাকে ডাকবে?
একেন বাবু আর গোরাকে তো ডাকব না এটুকু সিওর। দুজনেই আলাদা লেভেলের মানুষ। একেন বাবুর কাছে সমস্যার সমাধান চাইলে উনি আমায় পেঁচিয়ে ফেলবেন। কটু কথা বলবেন। এত চাপ নিতে পারব না। আর যদি, গোরা হয় তবে! আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। কিন্তু, আমার মনে হয় দুজনের কাছেই যাব। টিনটিন আর স্কুবি ডু। এই দুজনের সমাধান করার বিষয়টা দারুণ।
ইন্ডাস্ট্রিতে গোয়েন্দা হতে পারলে?
না! আর হতেও চাই না। আমি খুব সাদামাটা মানুষ। নিজের কাজ নিয়েই থাকি। এত লোকের কথা শুনে লাভ নেই। বরং এতে আমার আরও মাথা গরম হবে। ঠিক করে কাজ করতেও পারব না। তাই, নিজের মত করে থাকায় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
সূহত্রর ব্যাক্তিগত জীবনে কী চলছে? বিয়ে কবে...
সামনের ৪/৫ বছরের আগে তো নয়। বিয়ে করার প্ল্যান এখনও করি নি। ব্যক্তিগত জীবনে কাজ ছাড়া আর কিছুই চলছে না।
রাজনীতি করতে ইচ্ছে করেনি সূহত্রর?
না... করে না। আর আমি মনে করি অভিনেতাদের রাজনীতি করা উচিত নয়। এতে শিল্পে বাঁধা আসে। শিল্প বিঘ্নিত হয়। আমার মনে হয়, একজন রাজনীতিবিদের পরে মানুষকে সবথেকে বেশি যদি কেউ আকর্ষণ করতে পারে সেটা হলেন অভিনেতারা। তাহলে, কেন তাঁদের মনে একটা খারাপ জায়গা সৃষ্টি করা? আমার কাজ অভিনয় করা, মানুষকে আনন্দ দেওয়া। আমি এই রাজনীতি বিষয়টাকে ঠিক পছন্দ করি না।