সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হতে পারে। এই যুক্তিতে রাজ্যে দ্য কেরালা স্টোরি ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নিয়ে সোমবার শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এবার পাল্টা দিলেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন এবং নির্মাতা বিপুল অমৃতলাল শাহ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা আইনি পথে হাঁটবেন বলে সাফ জানিয়ে দিলেন।
Advertisment
ছবির প্রযোজক বিপুল শাহ সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, "তিনি যদি এটা করে থাকেন, তাহলে আমরা আইনি পথে হাঁটব। আইনে যা থাকবে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ করব।" ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেন বলেছেন, "নিষিদ্ধ শব্দটাই ভুল। ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। আর সেন্সর বোর্ডের সাংবিধানিক স্বীকৃতি রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছবির প্রদর্শনী বন্ধ করা যাবে না। নিষিদ্ধ বিষয়টা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ হতে পারে। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেব।"
পরিচালক আরও জানিয়েছেন, "এই ধরনের সিদ্ধান্ত একেবারেই অবৈধ। যে ছবিকে সেন্সর বোর্ড পাশ করেছে এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই ছবি দেশের নাগরিকদের দেখার অধিকার রয়েছে। সেই ছবির স্ক্রিনিং বন্ধ করার কোনও আইন আছে কি না আমার জানা নেই। তবে ভারতের বিচার ব্যবস্থার উপর আমার আস্থা আছে। আমরা আইনের পথেই সবকিছু করব।"
Advertisment
প্রসঙ্গত, সোমবার বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের তৈরি সিনেমার সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ বিজেপির উদ্দেশ্য প্রণোদিত উস্কানি বলেও দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে এ রাজ্যে নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করতে মুখ্যসচিবকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শান্তি সৌহার্দ্য বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ বলে খবর।
সোমবার নবান্ন সভাঘরে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে নিশানা করেন। বলেন, ‘ওরা বিভাজনের রাজনীতি করছে। কেন দ্য কাশ্মীর ফাইলস বানালো ওরা? এক শ্রেণির মানুষকে কটাক্ষ করার জন্য। এখন কেরালা স্টোরি বানিয়েছে। ওটা সিপিএম-এর রাজ্য। আমি ওদের একেবারেই সমর্থন করি না। ওরা বিজেপি-র সঙ্গে পথ চলে।’
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে উদ্দেশ্য করে মমতা বলেন, ‘ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি, এটা ভীষণ দুঃখজনক বিষয়। আপনার পার্টি বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায় কী ভাবে? ওই বিজেপিই তো কেরালা স্টোরির মতো সিনেমা দেখাচ্ছে। বিকৃত গল্প সব!’
এরপরই বাংলা নিয়ে সিনেমা তৈরির দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘বিজেপি মনোনীত কিছু তারকা তো বাংলাতেও এসেছিলেন। তাদের টাকা দেয় বিজেপি। তথ্য বিকৃত করে তারা নাকি বেঙ্গল ফাইলস নামের একটি ছবি বানাচ্ছে। আগে তো কাশ্মীরের মানুষদের ঠেস দিয়ে কাশ্মীর ফাইলস বানিয়েছিল। এবার বাংলার মানুষদের তাতাচ্ছে। নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী গল্প বলছে ওরা।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘এবার বাংলাকে অপমান করার চেষ্টা করছে। ওরা বলছে, সেভ বেঙ্গল। কেন? শান্তিপ্রিয় একটা রাজ্য বাংলা। বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে কেন? এখানে মানুষ পুজোও করে, ঈদ উদযাপনও করে। গুরুদ্বারও আছে, গির্জাও আছে। আমরা একসঙ্গে পথ চলতে পছন্দ করি।’