/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/22/rani-2025-09-22-21-04-42.jpg)
কে এই অভিনেত্রী?
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি পরিচালক কে.জি. জর্জ, ১৯৭৬ সালে, 'স্বপ্নাদানম' ছবির মাধ্যমে পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন। সাদা-কালো এই মনস্তাত্ত্বিক নাটক মালয়ালম সিনেমায় এক নতুন ভিজ্যুয়াল ভাষা ও বর্ণনাশৈলী এনেছিল। "সাইকো" মহম্মদের গল্প অবলম্বনে, পাম্মান ও জর্জের চিত্রনাট্যে নির্মিত এই সিনেমা সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
ছবিটি কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের সম্মান জেতে। পাশাপাশি সেরা মালয়ালম ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পায়। একইসঙ্গে, ছবির নায়িকা রানী চন্দ্র পান সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মাত্র ২৭ বছর বয়সে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় তার জীবন শেষ হয়ে যায়, ফলে তিনি আর সাফল্যের পূর্ণতা ভোগ করতে পারেননি।
১৯৪৯ সালে তৎকালীন ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের তিরুকোচিতে জন্ম নেওয়া রানী চন্দ্র ছিলেন, ছয় ভাইবোনের একজন। কলেজ জীবনে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে, তিনি প্রথম মিস কেরালা খেতাব অর্জন করেন। মনোমুগ্ধকর নাচের দক্ষতার সুবাদে সিনে-দুনিয়ায় প্রবেশ করেন তিনি। প্রথম সিনেমা পাভাপ্পেট্টাভাল-এ তিনি 'মিস কেরালা' নামেই পরিচিতি পান। পরবর্তীতে তিনি একটি নাচের দল গঠন করেন, যেখানে তাঁর বোনেরাও সদস্য ছিলেন। তবে বাবার ব্যবসা ভেঙে পড়লে সংসারের দায়ভার নিতে রানী অভিনয় ও নাচে পুরোপুরি মন দেন।
শীঘ্রই তিনি প্রেম নাজির, মধু, শ্রীবিদ্যা প্রমুখ তারকার সঙ্গে একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। নেল্লু (১৯৭৪)-তে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি পরিচালক কে.জি. জর্জের নজরে আসে, যা তাঁকে স্বপ্নাদানম-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে সুযোগ করে দেয়। চেম্বারথি, দেবী, আরাধিকা, সৌন্দর্য পূজা ইত্যাদি চলচ্চিত্র তাঁকে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন দেয়। পাশাপাশি তামিল ছবিতেও তিনি কমল হাসান ও শিবকুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেন।
কিন্তু ১৯৭৬ সালের ১২ অক্টোবর, বোম্বে থেকে মাদ্রাজগামী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭১ বিধ্বস্ত হলে রানী চন্দ্র, তাঁর মা ও তিন বোন- সহ প্রায় ৯৫ জন প্রাণ হারান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৭। ভদ্রকালী সিনেমার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, যা পরবর্তীতে বডি ডাবল ও আগের ফুটেজ দিয়ে শেষ করতে হয়। স্বল্প জীবনে তিনি প্রায় ৭০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
রানী চন্দ্রকে সহকর্মীরা সবসময় সরল ও নিষ্ঠাবান শিল্পী হিসেবে স্মরণ করেছেন। কেজি জর্জ বলেছিলেন, “তিনি যেকোনো চরিত্র নিয়ে গভীরভাবে মনোযোগ দিতেন, পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শট দিতে চাইতেন। তাঁর অভিনয় ছিল স্বাভাবিক, অতিরঞ্জনহীন। যা সেই সময়ে একেবারেই বিরল।” অকালপ্রয়াত এই অভিনেত্রী তাই আজও রয়ে গেছেন মালয়ালম সিনেমার এক উজ্জ্বল স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।