/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/28/srk-deepshikha-nagpal-2025-08-28-13-26-03.jpg)
কে এই অভিনেত্রী...
সেটে অভিনেতারা যেমন পর্দায় আবেগ ফুটিয়ে তোলার শিল্পে সিদ্ধহস্ত হন, দীপশিখা নাগপাল বাস্তব জীবনেও সেই দক্ষতা আয়ত্ত করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও তিনি বাইরে থাকতেন সবসময় হাসিখুশি। শৈশবে নানা জটিলতা কাটিয়ে বড় হওয়া দীপশিখা সুন্দরী হলেও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভুগতেন। পরিবারের মন জোগানোর তাগিদে বড় বড় ছবির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
শৈশব ও আত্মবিশ্বাসের অভাব
একান্ত সাক্ষাৎকারে দীপশিখা জানান, ছোটবেলায় তিনি অত্যন্ত লাজুক ছিলেন, নিজের কথা বলতে পারতেন না। বাবা-মা দুজনেই অভিনেতা হওয়ায় তাঁরা প্রায়ই বাইরে থাকতেন। মা-কে খুব ভালোবাসলেও মা ছোট বোনকে বেশি আদর করতেন, যা তাঁকে কষ্ট দিত। সবসময় মায়ের মনোযোগ পেতে চাইতেন তিনি। চেহারায় রোগা হওয়ার কারণে প্রায়ই অপমান শুনতে হয়েছে। বলা হতো, এত রোগা হলে কেউ বিয়ে করবে না। তখন তিনি ভাবতেন, এত খারাপ হলে জন্মই বা কেন নিলেন! ইংরেজি মিডিয়াম থেকে গুজরাটি স্কুলে বদল, ইংরেজি না বলতে পারা- সব মিলিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছিল। রান্না-বান্না, ঘর গোছানো কেবল বাবা-মাকে খুশি করার দিকেই মনোযোগ দিতেন। মিস ইন্ডিয়ায় অংশ নেওয়ার স্বপ্ন থাকলেও ইংরেজিতে উত্তর দিতে না পারার ভয়ে পিছিয়ে যান।
ফিল্মি জগতে প্রবেশ ও সংকট
যদিও তিনি কখনও অভিনেত্রী হতে চাননি, ঈশ্বরের অন্য পরিকল্পনা ছিল। ফ্যাশন শো দিয়ে মডেলিং শুরু, গয়নার বিজ্ঞাপন এবং পারভিন ববির সঙ্গে তুলনা হতে হতে সিনেমায় সুযোগ পান। দেব আনন্দের ছবি দিয়ে অভিনয় শুরু করেন, পরে 'বরসাত কি রাত', 'কয়লা', 'বাদশা'—তবে আত্মবিশ্বাসের অভাব ক্যারিয়ারে বারবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অনিল কাপুরের অফার ফিরিয়ে দেওয়া থেকে রাকেশ রোশনের 'করণ অর্জুন'-এর চরিত্র প্রত্যাখ্যান- পরে এগুলোর জন্য আক্ষেপ হয়েছে। শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ভয় পেতেন, কথা বলতেন না, কিন্তু শেষমেশ পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে।
দুর্ঘটনা ও ব্যক্তিজীবনের মোড়
একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ক্যারিয়ার থমকে যায়। কয়লা মুক্তির আগেই তিনি বিয়ে করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ছবি ফ্লপ হওয়ায়, সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ছোটপর্দায় নেতিবাচক চরিত্রে কাজ করতে শুরু করেন, যা নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। “গাড়ি দুর্ঘটনার পর সবকিছু পাল্টে গেল। এর মধ্যেই বিয়ে করলাম। দুর্ভাগ্যবশত ছবিটা ফ্লপ হলো। সুযোগগুলো হাতছাড়া হয়ে গেল।” বেঁচে থাকার জন্য ছোটপর্দার নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় শুরু করলেন। তাঁর কথায়, “মানুষ বলত, এত সুন্দর মেয়ে হয়ে কেন ভিলেন হচ্ছি? কিন্তু সংসার চালাতে তো হতো। তখন লোকে কী বলছে তা শোনার সময় ছিল না।”
সাত বছরের মধ্যে প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়, দুটি সন্তান নিয়ে নতুন করে সংগ্রাম শুরু করেন তিনি। সমাজের কটূক্তি, আত্মগ্লানি, সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব- সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। একসময় থেরাপির সাহায্য নেন, সন্তানদের মনোযোগ দেওয়া শুরু করেন। যদিও দ্বিতীয় বিয়েও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বললেন,প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় শুরু হল। আমি একা মেয়ে, দুই সন্তান নিয়ে লড়াই করেছি। অনেক কটূক্তি শুনেছি। মনে হতো আমি ব্যর্থ। সেই সময় থেরাপির সাহায্য নিয়েছিলাম। না হলে হয়তো টিকে উঠতে পারতাম না।”
পরিবার ও ব্যক্তিগত ক্ষতি
মায়ের অকালমৃত্যু, বাবার অপরাধবোধে মৃত্যু, প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের মানসিক চাপ- সবকিছুই দীপশিখাকে আঘাত করেছে। কখনও মা হিসেবে অত্যন্ত কঠোর হয়েছেন, কখনও নিজেকে ব্যর্থ মনে করেছেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। ধীরে ধীরে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। বললেন, “মা হঠাৎ চলে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম, আমার জীবন শেষ হয়ে গেল। বাবা পরে অপরাধবোধে ভুগতে ভুগতে মারা গেলেন। মাকে বাঁচাতে না পারার দুঃখে ওঁকে কুরে কুরে খেয়েছিল।” এখন তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রকলায় মনোনিবেশ করেছেন। শান্তি খুঁজে পেয়েছেন সেখানে, নিজের শর্তে জীবনযাপন করছেন। অসংখ্য ঝড় পেরিয়ে দীপশিখা আজ অনেক বেশি শক্তিশালী ও পরিণত, নিজের মতো করে বাঁচতে শিখেছেন।