Mrinal Mukherjee Dead: প্রয়াত মৃণাল মুখোপাধ্য়ায় যে অসুস্থ সেকথা ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জানতেন না। তিনি কাউকে জানাতে চাইতেন না। বিনোদন জগতের একাধিকজন স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চেয়েছেন এই কাজপাগল মানুষটি। অভিনয় ও গান তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল যে তিনি কিছুতেই এই দু'টিকে ছেড়ে বাঁচার কথা ভাবতে পারতেন না। পাঁচ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে ৭ মে বিকেলে তাঁর জীবনাবসান হয়। ৮ মে সোশ্য়াল মিডিয়ায় তাঁর মেয়ে টিনা মুখোপাধ্য়ায় শেয়ার করলেন একটি ভিডিও, যেখানে শিল্পী গাইছেন 'জিন্দেগি কা সফর...'। সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি, তাঁর শারীরিক কষ্ট উপেক্ষা করে যখন গেয়ে ওঠেন, 'মওত সে ভি মুহব্বত নিভা লেঙ্গে হম...', বোঝা যায়, জীবনের প্রতি কী অপরিসীম ভালবাসা থাকলে তবেই ওভাবে গাওয়া যায় এই পঙক্তি।
তিনি বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে এসেছে। চিত্রনাট্য়কার-পরিচালক দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত জানালেন, গত জানুয়ারি মাসে একটি ছবির আউটডোর শ্য়ুটিংয়ে গিয়ে সহশিল্পীদের বলেছিলেন, ''মনে হয় ঝাড়খণ্ডের আউটডোরটা অবধি টানতে পারব না।'' তবু কাজ করে গিয়েছেন, অদম্য প্যাশন থেকে। তাঁর এই প্য়াশন ও কাজের প্রতি নিষ্ঠাই নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে এতটা আদরণীয় করে তুলেছিল তাঁকে। সর্বোপরি ছিল তাঁর দিলদরিয়া মেজাজ। সবাইকে আপন করে নিতেন, গান শোনাতেন, গল্প শোনাতেন। বর্ষীয়ান শিল্পীসুলভ উন্নাসিকতা কোনওদিনই ভর করেনি তাঁকে।
আরও পড়ুন: বাংলা বিনোদন জগতে পাঁচ দশকেরও বেশি যাত্রা শেষ
যখন মারণ রোগ তাঁর শরীরকে ক্রমশই আরও ভঙ্গুর করে দিচ্ছে, তার মধ্য়েও শ্যুটিং করেছেন। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত 'কেলো' ছবিকেই, এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবনের শেষ ছবি বলা যায়, যেটির মুক্তি তিনি দেখে যেতে পেরেছে। তার পরে বেশ কিছুদিন 'আমলকী' ধারাবাহিকে অভিনয় এবং তখন থেকেই স্বাস্থ্য়ের আরও অবনতি। জনপ্রিয় অভিনেতা ঋতজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় 'কেলো' ছবির নায়ক এবং প্রয়াত মৃণাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন ছবির তিন খল-নায়কের একজন। অত্য়ন্ত শোকাহত ঋতজিৎ জানালেন, প্রয়াত শিল্পীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথা।
''ওঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ 'রাশি' ধারাবাহিকে কাজ করার সময়। ওখানে একমাসের জন্য় একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তখনই ওঁর সঙ্গে একই মেকআপ রুমে বসতাম। খুব গল্প করতেন, গান গাইতেন। 'কেলো'-র শ্যুটিং করার সময়ে আরও অনেকটা সময় ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম। আমি বলব আমি খুব লাকি, যে ওঁর মতো একজন গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য় পেয়েছি'', বলেন ঋতজিৎ।
আরও পড়ুন: সঞ্জয় দত্তের জীবনকে নতুন করে দেখা, প্রকাশিত রাম কমলের নতুন বই
ওই ছবিতে বেশ কিছু অ্য়াকশন সিন ছিল। ঋতজিৎ জানালেন, প্রয়াত অভিনেতা যেহেতু অনেকটাই বর্ষীয়ান তাই অ্য়াকশন সিনের আগে বেশ উদ্বিগ্ন থাকতেন ঋতজিৎ। একটি সিনে ঋতজিতের আঘাত করার কথা ছিল প্রয়াত অভিনেতাকে এবং আঘাত পেয়ে ছিটকে যাবেন তিনি, এমনটাই ছিল চিত্রনাট্যে। ঋতজিৎ ইতস্তত করছেন দেখে মৃণাল মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ''মাসলটা দেখ, জাস্ট হোল্ড ইট।'' ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে প্রিমিয়ার দেখতে এসেছিলেন। ইন্টারভ্য়ালের সময় বেরিয়ে যেতে বাধ্য় হন। ''তখনও কেউ জানত না ওঁর জ্বর, হাতটা ধরতে গিয়ে তবেই বুঝতে পারলাম। এটাই প্রফেশনালিজম, ছবি মুক্তি পেয়েছে আর প্রিমিয়ারে আসবেন না? শেষ পাঁচদিন রোজ হসপিটালে গিয়েছি। অমন সুপুরুষ চেহারাটা এমন ভেঙে গিয়েছিল, দেখা যেত না'', জানালেন ঋতজিৎ।
৭ মে রাত এগারোটা পর্যন্ত প্রয়াত শিল্পীকে রাখা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অনেকেই সেখানে এসে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় প্রয়াত অভিনেতাকে। মহাসিন্ধুর ওপার হতে ভেসে আসা শেষ সঙ্গীতের আহ্বানে, ওইখানেই হয়তো নতুন করে যাত্রা শুরু করলেন তিনি!