লক্ষ্মীবারে ভোটবাক্সে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী কৌশানী মুখোপাধ্যায় (Koushani Mukherjee)। তবে বুথ পরিদর্শনে গিয়েও ভোটারদের মুখে মাস্ক রয়েছে কিনা, সেদিকে কড়া নজর অভিনেত্রীর। নির্বাচনী-রণক্ষেত্রের লড়াই তো থাকবেই, কিন্তু মানুষের প্রাণটা আগে, মত তৃণমূলের (TMC) তারকাপ্রার্থীর। তাই প্রত্যেকটি বুথে কোভিড বিধি মেনে ভোট হচ্ছে কিনা, তদারকি করছেন খোদ কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
রাজ্যের ষষ্ঠ দফা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election 2021 6th Phase) আজ বৃহস্পতিবার ভোটবাক্সে ভাগ্যগণনার লড়াই কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের। নদিয়ার কৃষ্ণনগর (Krishnanagar) উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দী তিনি। বিধানসভা ভোটের মুখে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিয়েই নির্বাচনী টিকিট পেয়েছেন। উপরন্তু প্রতিপক্ষও হেভিওয়েট। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা ডাকসাইটে নেতা মুকুল রায়। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নীরিখে কৃষ্ণনগর উত্তরে যেখানে পদ্ম শিবির এগিয়ে ছিল, সেই জমিতে ঘাসফুল ফোটানো বেজায় চ্যালেঞ্জিং-ই বটে! কাজেই একটা চাপা টেনশন তো রয়েইছে। তবে প্রথমবারের ভোট-পরিক্ষার্থী কৌশানী মুকুল রায়ের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নির্ভীক। সকাল বেলা স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিয়েই ময়দানে নেমে পড়েছেন। এলাকার বিভিন্ন বুথ পরিদর্শনে যাচ্ছেন। কোথাও কারও ভোট দিতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে কিনা, খোঁজ নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ভোটাররা যথাযথ সুরক্ষাবিধি মেনে ভোট দিতে এসেছেন কিনা, সেদিকেও কড়া নজর কৌশানীর। কেউ মাস্ক না পরে এলেই তৃণমূলপ্রার্থী এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, "মুখে মাস্ক নেই কেন?"
লড়াই কঠিন হলেও ভোটের দিনে কৌশানী যে ময়দান ছেড়ে যাওয়ার পাত্রী নন, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর মন্তব্য, "সকাল অবধি শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হচ্ছে। আমি চাই, মানুষ নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক। আর তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্যই আমি প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন এলাকার বুথে বুথে যাচ্ছি। গত দেড় মাস ধরে এখানকার মানুষের সঙ্গে একটা আলাদা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। তাই আজ ভোটের দিনে আমি লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই।"
এদিন কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথে ইভিএম কাজ করছিল না। খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান কৌশানী। জানিয়েছেন, "সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে আপাতত। আমি নিজে বা তৃণমূল এজেন্টরা বিভিন্ন বুথে যাচ্ছি। কারও কোনও সমস্যা হলে দেখব।"
প্রতিদ্বন্দ্বী মুকুল রায়কে নিয়ে একেবারে নীর্ভিক-ই দেখা গেল তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে। কণ্ঠেও একশো শতাংশ আত্মবিশ্বাস। বললেন, "আমি স্বচ্ছতার প্রতীক। আমি কৃষ্ণনগরের ঘরের মেয়ে। এতদিন এখানে থেকে যা বুঝেছি যে, বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়। প্রতিদ্বন্দী মুকুল রায় বলে ভয় পাইনি। অন্য কোনও প্রার্থী দিলেও একইরকমভাবে ময়দানে লড়ে যেতাম। গত দেড় মাস ধরে কৃষ্ণনগরের মানুষরা ব্যক্তিগত কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে দেখেছেন। তারকা তকমাটাকে ভেঙে দিয়েছি। এটা বিধানসভা নির্বাচন। গত লোকসভায় মানুষ মোদীজিকে দেখে হয়তো ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এবার মানুষ দিদিকেই চাইছেন। তৃতীয়বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) আসুন, সেটাই ইচ্ছে সবার।"
একদা তৃণমূলের (TMC) দুঁদে সংগঠক মুকুলের উদ্দেশে কৌশানীর সপাট উত্তর, "উনি কোনওদিন ভোটে জেতেননি", তাই কঠিন লড়াই কিংবা কোনওরকম চ্যালেঞ্জ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না! অবশ্য ভাল সংগঠক হলেও ভোটের ময়দানে যদিও মুকুল রায় (Mukul Roy) ততটা পরীক্ষিত নন। কারণ, ২০০১ সালে জগদ্দল কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়িয়ে হারতে হয়েছিল তাঁকে। এবার দীর্ঘ ২০ বছর পর ফের ভোটে লড়ছেন তিনি। তবে এই যাত্রায় মোদির বঙ্গ-সেনাপতি হয়ে। কৌশানী বনাম মুকুলের লড়াইয়ে কৃষ্ণনগরে শেষ হাসি কে হাসবে? উত্তর মিলবে ২মের নির্বাচনী মার্কশিটেই।
প্রসঙ্গত, আজ চার জেলার মোট ৪৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। সংশ্লিষ্ট দফার প্রার্থীতালিকায় তারকামুখের তুলনায় সবুজ-গেরুয়া দুই প্রতিপক্ষ শিবিরের ডাকসাইটে নেতাদেরই ভীড় অপেক্ষাকৃত বেশি। ভোটবাক্সে পদ্ম শিবিরের কোনও তারকাপ্রার্থীর ভাগ্যগণনার লড়াই নেই, তবে তৃণমূলের দুই তারকাপ্রার্থী রাজ চক্রবর্তী এবং কৌশানী মুখোপাধ্যায় কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন সংশ্লিষ্ট দফায়।