টেলিভিশনে অভিষেক হয়েছিল বেশ অনেকদিনই। কিন্তু, জনপ্রিয়তা এসেছিল নেতাজীর হাত ধরে। মানুষ অভিষেক বসুর পাশাপাশি তাঁর অভিনয় দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, টেলিভিশনের লিডিং হিরো হওয়ার পরেও তাঁকে মেগা বাদ দিয়ে সিরিজ কিংবা সিনেমাতে দেখা যায় না কেন? সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি রিয়ালিটি শোয়ের মঞ্চে ঠিক কী চলছে? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে গল্প করতে করতে উঠে এল নানা কথা।
শুটিং এর চূড়ান্ত ব্যস্ততা। সঙ্গে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে ফুলকি। অভিষেক কি চরিত্রের মধ্যে দিয়েই নিজের জীবনটা বেঁচে নিতে শিখে গিয়েছেন? কী কী বললেন নানা প্রসঙ্গে..?
এই কি শুটিং শেষ হল?
না না, হয়েছে অনেকক্ষন! আজকে একটু সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম...
বারবার মেগা সিরিয়াল কেন? সিনেমা কিংবা সিরিজ নয় কেন? কোনও বিশেষ কারণ?
বিশেষ কোনও কারণ নেই। আমার একটাই জিনিস মাথায় থাকে যে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রটা। আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ন সেটা। সেই বিষয়টা বুঝে নেওয়া আমার কাছে আসল। নইলে সিনেমা যেটুকু করেছি বা দেখা গিয়েছে সেইসময়, আমার মনে হয়েছে যে ওই চরিত্রটা গুরুত্বপুর্ন তাই। আর একটা কথা কী, মেগা করতে করতে না সিনেমা কিংবা সিরিজ করা হয় ওঠে না। যেহেতু নিত্য দিনের একটা বিষয়। এবার, সেই শুটিং টা যাতে মুশকিলে না পড়ে সেটা দেখতে হবে। কখনও কখনও ছাড়া যায় না। কাজে যাতে হ্যাম্পার না হয় সেটা দেখতে হয়।
আবার আমার ক্ষেত্র আমি বলছি, বেশিরভাগ এমনই হয় যে একটা সিরিয়াল শেষ হলে আরেকটা তো আমরা সঙ্গে সঙ্গে ধরি না। দুই তিন মাস সময় থাকে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত সেই ফাঁকা সময়েও আমি কিচ্ছু করতে পারিনি। ফুলকি শুরু হওয়ার পরেই একটা দারুন চরিত্র পেয়েছিলাম কিন্তু ওই যে কমিটমেন্ট। একটি সিনেমায় পেয়েছিলাম, কিন্তু হয়ে ওঠে নি। কম্প্রোমাইজ করার তো দরকার পড়েনি।
একটি জনপ্রিয় সিরিয়ালের সেকেন্ড লিড থেকে ফার্স্ট লিড - কতটা কসরত করতে হয়?
এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত। একটা জায়গা যেই তুমি পেয়ে যাবে না, সেখান থেকেই কসরত শুরু হবে। আমি যে কিছু পারি, এটা প্রমাণ করা বা ধরো, মানুষের কাছে নিজেকে তুলে ধরা যদি সফল হয়, সেটা কিন্তু গুরুদায়িত্ব। এটা এই কারণেই বলছি, কারণ এটা অনেক বিরাট ব্যাপার। তবে, আমার মাইন্ডসেট যদি বল, আমি সবসময়ই আরেকটু বেশি কিছু চাই। কিংবা বলতে পারো, হলে অসুবিধা নেই। নিজেকে ডিটারমাইন্ড করে এগোনোই যাই। যেটা করছি সেটাই শেষ বা এটুকু হলেই হবে এমন কিন্তু না।
আমি কিন্তু কোথাও বিষ্ণু হয়েছি, কোথাও অর্জুন হয়েছি...আমি কিন্তু খুব উপভোগ করেছি। এটা আমার কাছে মজা। তারপর ধরো সীমারেখা। সেখানে আমি কিন্তু কেউ না। শুধু একটা পরিবারের সদস্য। কিন্তু, সেখানে পরবর্তী সময়ে আমায় হিরো বানিয়ে দেওয়া এবং একটা সংলাপের বদলে ১০ লাইন বলানো, এগুলো বড় পাওয়া।
এরপর তো নেতাজী... তাঁকে পোর্ট্রে করতে গিয়ে চাপ লেগেছিল?
ভয় লাগে নি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, আমি যদি ঘুম উড়িয়ে চেষ্টা করি তাহলে কিছু একটা আউটকাম আসবেই। আমার চেষ্টা বৃথা যাবে না। একটা জিনিস নিয়েই ভেবেছিলাম যে আমার মুখ। আমার মুখটা লম্বাটে। সেখানে নেতাজীকে একদম অন্যরকম দেখতে। আমায় যখন বলেছিল যে ওরা লুক টেস্ট করবে, আমি তো ভাবিই নি। যে এও সম্ভব? আমি আমার গাল ধরে বলেছিলাম, আমায় মানাবে? এবার যখন আমার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হল তখন সব ঠিক। এবার প্ল্যান করে করলে তো মহা বিপদ। উনার চোখ - জ লাইন কেমন ছিল সেটা তো দেখলে চলবে না। আমি শুধু এটুকু বলেছিলাম আর্টিফিসিয়াল কিছু করতে হবে না। আমি যা করার অভিনয়ের সময় করে নেব।
এই যে ফুলকিতে হালকা হালকা রোম্যান্স, স্ক্রিনে রোম্যান্স করতে সুবিধা হয় নাকি ভেবে নাও সামনে কে আছেন?
সামনের মানুষ যদি পূর্ব পরিচিত হয় তাহলে তো একটু সুবিধা হয়। কিন্তু, বিষয়টা হচ্ছে আজ অবধি আমার কোনও নায়িকা রিপিট হয়নি। এমনি রোম্যান্স করতে অসুবিধা হয় না। অভিনেতা বন্ডিং তৈরি হয়ে গেলে আমার অসুবিধা হয় না।
পর্দায় রোম্যান্স করতে দেখলে বাস্তবের কাছের মানুষটি সমালোচনা করে নাকি রেগে যায় নাকি বাহবা দেয়?
না না, প্রশংসা করে। জেলাস হয় না। খারাপ হলে বলে। এটা একটু বলে। যে এই জায়গাটা এমন কেন করলি না। এরম হতে পারত। তবে, ফুলকিতে এখনও এতটা রোম্যান্স দেখানো হয়নি।
পর্দার চরিত্রটা করতে করতে নিজস্ব সত্ত্বা ভুলে গিয়েছ কোনোদিন?
একটা সত্যি বলি, লুকটা ম্যাটার করে আমার কাছে। আমি নরমাল ভাবেই থাকি। কিন্তু, যতক্ষন আমি ক্যারেক্টারের মধ্যে থাকব ততক্ষন কিন্তু, আমি সেই মানুষটা হয়ে থাকব। বাকি সবসময় আমি নিজের মতো। এই যে, নেতাজীর ক্ষেত্রেই ধরো, চশমা পরে, ধুতিটা পড়লে আমি পুরো নেতাজি হয়েই বেরতাম।
অভিনয়-নাচ ছাড়া আর কোনও ভাললাগা?
গান। আমি ১২ বছর ক্লাসিকাল গান শিখেছি। ভোরবেলা উঠে রেওয়াজ করতাম। অনেকবছর শিখেছি।
তাহলে গান কেন পেশা হিসেবে নয়..?
অভিনয় - গান কিন্তু প্যাশন ছিল। দুটোই পারফর্ম করতে ভালবাসতাম। কিন্তু, অভিনয়ের সুযোগ আগে পেয়েছিলাম। সত্যি বলতে এদিকে এগিয়ে ছিলাম ভাল। গান এখনো গাই।
রিয়ালিটি শোয়ের মঞ্চে আর মেন্টর হতে ইচ্ছে হয়?
মেন্টর হিসেবে চাপ থাকে কিনা জানি না। তবে, এটুকু বলতে পারি ওই ইনোসেন্ট ট্যালেন্টগুলোর একটা দায়িত্ব থাকে। তারা আমাদের জন্য কষ্ট করে। ওরা যখন কেউ বাদ চলে যায়, খুব অসহায় লাগে গো। যে, ওদের জন্য কিছু করতে পারছি না। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
রোহিত তো বক্সিং জগতের মানুষ, তোমার খেলার প্রতি ভালোবাসা আছে?
হা হা! আমি ছোট থেকে ক্রিকেট খেলতাম। আর সত্যি বলি, আমার বাবা ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার। খেলার প্রতি আমার খুব ঝোঁক। অবসরে খেলাই দেখি।
বাবা যখন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলার, তাহলে নিশ্চই লাল-হলুদকেই সাপোর্ট করা হয়?
আসলে কি বলোতো, বাবা যেহেতু সেই দলে খেলতেন আমার সেই দলের প্রতি একটু টান রয়েছে। কিন্তু, বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল - মোহনবাগান কিংবা বাঙাল ঘটি এভাবে কিন্তু বড় হইনি। বাবা সবসময় বলেন যে একটা ভাল খেলা দেখব। ব্যস! আমি ক্রিকেট, অলিম্পিক, প্যারা অলিম্পিক, কোনও লাইভ স্পোর্ট হলেই দেখি।
ব্যাক্তিগত আলোচনা নাকি কাজের প্রতি সমালোচনা - কোনটা ভাল লাগে তোমার?
কাজের প্রতি সমালোচনা। আমার জীবনের প্যাটার্ন নয় অন্যকে নিয়ে আলোচনা করা। বড্ড রুচিতে বাঁধে। আমার আলোচনা হল সিনেমা, ক্রিকেট এসব। আমি তাই নিজেও চাই না যে কেউ এসব নিয়ে কথা বলুক।
অনেকেই বলছেন এই জেনারেশনের যারা সদ্য অভিনয় করতে আসছেন তাঁরা নাকি অভিনয় কম রিলস বানাতে বেশি ব্যস্ত, তোমার অভিমত?
দেখো, বিষয়টা হচ্ছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসার তাদের জন্য কিন্তু রিলস খুব দরকারী। তাদের সেসব বিষয়ে মাথা ঘামালেও চলবে। কিন্তু যারা অভিনেতা, তাদের অভিনয়টাই ফোকাস রাখা উচিত। রিলস বানাতে গিয়ে যেন অভিনয় হ্যাম্পার না হয়, তাহলে সেটা উচিত হবে না। অভিনয় মন দিয়ে করো। বাকি সময় ভেবে দেখবে। আমিও মাঝে মধ্যে করতে থাকি। তাতে কিছুই না, আমার নাচের চর্চাটা হল, আবার সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু এক্টিভ থাকলাম।