আন্দোলনের সুর গোটা রাজ্য জুড়ে। নানা প্রান্তে, নানা মানুষ নিজেদের মতো করে ডাক দিয়েছেন প্রতিবাদের। গতকাল যেমন টলিপাড়ার তারকারা মাঠে নেমেছিলেন, তেমনই কথা ছিল আজ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সদস্যরা নিজেদের মত করে প্রতিবাদ জানাবেন।
তাঁর জন্য বেশ কিছু বিধিলিপি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যাতে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল, সাদাকালো জামা পরে যেতে হবে। মৌন মিছিল করা হবে। দুটি রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হবে সমবেত ভাবে। আর এত সব নিষেধ দেখেই আওয়াজ তোলেন অনেক শিল্পীরা। যেখানে, এই আন্দোলনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্লোগানে মুখরিত, সেখানে কীসের চুপ থাকা? প্রশ্ন উঠছিল অনেক।
প্রসঙ্গে, রুপম ইসলাম নিজের সমাজ মাধ্যমের পাতায় বিস্তারিত লিখেছেন। তাঁর কথায়, "স্লোগানহীন? নাকি স্লোগানযুক্ত? গান গাওয়া হলে কোন গান? এই দুটি বিষয় নিয়ে চর্চা, তারও বেশি করে শ্লেষ চোখে পড়েছে। যাঁরা আজকের মিছিলের পরিকল্পনায় এই ভাবনাগুলি এনেছিলেন তাঁরা বলেছিলেন—"কণ্ঠশিল্পীরা যখন মৌন হয়ে যান, তখন তা আরও বড় অভিঘাত তৈরি করে। এটা একটা প্রতীকি বিষয়। যাই হোক, আমায় জানানো হল, এই ব্যাপারটা এখন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে যাঁরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে চান, বলবেন। যাঁরা গাইতে চান, গাইবেন। ভিন্নস্বর যখন মতামত রাখেন, আমি আগ্রহী শ্রোতার ভূমিকায় থাকি। আর আমি যখন বলি, তখন অখণ্ড মনোযোগ কামনা করি। তাই জন্যই একটি #ekok মঞ্চ চাইছিলাম। কিন্তু দর্শক শ্রোতার বিনামূল্যে প্রবেশের বিষয়টা কোনও কর্তৃপক্ষই মেনে নিচ্ছেন না। ফলে অডিটোরিয়াম পাচ্ছি না। খোলা জায়গায় গান শোনাতে গেলে বিরাট ও ব্যাপক শব্দযন্ত্র লাগে। সে আয়োজনের সাধ্য আমার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে যা যা গান গাইতে চাই, সবই আমার রচনা। কিন্তু একটা সংগীত মিছিলে তেমন দাবি করা যায় না। ফলে আপাতত আমার ব্যক্তিগত নির্বাচন শোনাতে পারছি না। তবে আপনারা গাইলে আমি গলা মেলাব নিশ্চয়ই। যাঁরা বিভিন্ন আঙ্গিকে এই বিষয়গুলো নিয়ে সরস আলোচনা করলেন, অনেকসময়ই পুরোটা না বুঝে, তাঁদের আলোচনা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সব আলোচকদের এই উদ্যোগ বিষয়ে এতটা সময় নিবেদনের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাই।"
অন্যদিকে, শিল্পী জয়তি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি লিখলেন, "পদযাত্রার কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে সহনাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে, তাই এই লেখা। মোমবাতি বা ইলেকট্রিক ক্যান্ডেল ছাড়াও আসতে পারেন, অসুবিধা নেই। আমরা প্রস্তাবটি দিয়েছিলাম, কারণ কিছু সংখ্যক মোমবাতি আমরা সরবরাহ করতে পারলেও সবার জন্য দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই, নিজেরা আনলে সুবিধা হতো। যদি না আনতে পারেন, দরকার নেই। আমরা ভেবেছিলাম একটি মৌন পদযাত্রা করবো। শোক ও প্রতিবাদের প্রকাশ হিসেবে এই ফর্ম ঐতিহাসিকভাবেই বারবার ব্যবহৃত ও বহুলস্বীকৃত। তবে, সবার যখন আপত্তি, তখন থাক। আমরা দল বেঁধে গান গাইতে পারি, We want justice বা অন্য স্লোগানও দিতে পারি। তবে ওই, উদ্যোক্তারা আপত্তি করলে আশা করি সহায়তা করবেন। ড্রেস কোড-এর বিষয়টি থাকছে না। যে যা খুশি পরে আসতে পারেন।"
আর সমস্ত নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে, শিল্পীদের মিছিল এগিয়ে চলেছে। সঙ্গে রয়েছেন, ইমন চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য, কৌশিকী চক্রবর্তী, উজ্জয়িনি, লোপামুদ্রা, লগ্নজিতা, অন্বেশা দত্তগুপ্ত, অনুপম রায়, সমিধ, রুপম ইসলাম আরও অনেকে।