Sayanta Dhali - Tollywood: মেকাপ মানেই মুখে শুধু রং? নাকি মেকাপ মানে মানুষের অন্তরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলা? একেকজন মেকাপ আর্টিস্টের সাজানোর স্টাইল হয় একেক রকম। কেউ কেউ শুরুই করেন তারকাদের সাজানোর মধ্যে দিয়ে, আবার কেউ কেউ শুরু করেন সাধারণ মানুষকে সাজানোর মধ্যে দিয়ে। কিন্তু, দীর্ঘদিন এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের সাজানোর পর, আর্টিস্ট সায়ন্ত ঢালির আর্টিস্ট্রি নিয়েই জানতে চেয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
বহু অভিনেত্রীকে সাজিয়েছেন। তাঁর মধ্যে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম। সায়ন্ত বললেন, তাঁর মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে যাত্রা শুরুর গল্পটা খুব অন্যরকম। একটু ফিল্মি। এটা ছোট একটা ইন্ডাস্ট্রি ছিল। আমি কলেজে পড়াশোনা করছিলাম। আসলে, মানুষের খুব একটা জ্ঞান ছিল না এই নিয়ে। আর সত্যি বলতে গেলে, আমার পরিবারেরও ছিল না ধারণা। কিন্তু, আমি ভাবছিলাম যে চাকরি করতে হবে। কিন্তু, আমার এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পেছনে মানালির ভূমিকা আছে। ও আমার পাশেই থাকত। ও আর আমি একই কোচিংয়ে পড়তাম। ও একদিন আমায় বলল যে, সায়ন্ত দা তুমি এত ভাল আঁকো, এত সুন্দর মেহেন্দি পড়াও, তুমি চেষ্টা করো, তোমার হাতের কাজ এত ভাল, হবে একদিন। ওই আমায় নিয়ে গিয়েছিল, আমার স্যারের কাছে। ও আমায় সাহায্য করেছিল দারুণ।
কিন্তু, আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাড়ির মত তাঁকেও শুনতে হয়েছিল, জীবনে কী পাবেন এটা করে? এই ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু করার নেই, এত কিছু শুনেও নিজের স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি তিনি। প্রথমে একদম পরিবারের কেউ রাজি ছিলেন না। ২০০৭ সাল থেকে শিখতে শুরু করেন। তারপর ২০১০-২০১১ সালে আস্তে ধীরে মেকাপ সম্পর্কে সবাইকে জানাতে শুরু করেন। এখন সবটা একটু সহজ হয়েছে বলেই তাঁর মতামত। তাঁর কথায়, "আমাদের সময় স্ট্রাগল এটা ছিল যে কোথায় শিখব? কোথায় প্রোডাক্ট খুঁজে পাব, কারণ অর্ধেক মানুষ এই প্রসঙ্গে জানতেন না। এখন এসব বিষয় খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি খুব ভাগ্যবান, যে প্রতিটা পদক্ষেপে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি, একটা সঠিক গাইডেন্স পেয়েছি আমি, যে কী করে এগোতে হবে। আমার শুরুটা চ্যানেল দিয়ে হয়েছিল। জি বাংলা দিয়ে শুরু করেছিলাম।"
সেখান থেকেই হাত পেকেছে তাঁর। দিনের পর দিন চ্যানেলের একটি শো ড্যান্স বাংলা ড্যান্স এর মঞ্চে একের পর এক এক্সপেরিমেন্ট করে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু, ওই যে বলে কাজ জানলে কোনোদিন অভাব হবে না। তাঁর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। কাজের অভাব হয়নি তাঁর জীবনে। তিনি বলেন, "আমার কাছে কাজ নিজে থেকে এসেছে, সেটা অভিনেতা অভিনেত্রীদের তরফে হোক বা অন্যত্র। লোকজন আমার কাজ দেখেছে, তাঁরা ভালবেসে আমায় ডেকেছেন।" কিন্তু নায়িকাদের সঙ্গে বাক বিতন্ডা হয়েছে কোনোদিন? তাঁর দেওয়া লুক কোনওদিন কারওর ভাল লাগেনি এমন হয়েছে? সায়ন্ত সাফ জানিয়েছেন, না!
নায়িকাদের সঙ্গে বাক বিতন্ডা তাঁর খুব একটা হয়নি। বরং, সেই জায়গায় এমন হয়েছে যে হয়তো লুকটা ভাল লাগেনি, তাঁরা জানিয়েছেন। সায়ন্ত বলেন, "সায়ন্তিকা আমার সঙ্গে কাজ করা প্রথম হিরোইন। ও কী করত? আমার মেকাপ হয়ে গেলে মেকআপের ব্যাগ গুছিয়ে দিত। জানতো, আমি খুব পিটপিটে স্বভাবের। আমার কাছে সেজে যে একেবারেই ভাল লাগেনি, সেটা কোনোদিন হয়নি।" কিন্তু, এই যে মেকাপ আর্টিস্টদের কাজ নিয়ে এত সমস্যা, কাজ পেতে তাঁদের ফেডারেশনের দ্বারস্থ হওয়া নিয়ে সমস্যা, সেই প্রসঙ্গে কী দাবি তাঁর? শিল্পীর কথায়, "কোন ইন্ডাস্ট্রিতে সমস্যা হয় না? সর্বত্র সমস্যা আছে। কিন্তু, নিজে ঠিক থাকো, তাহলে কিন্তু ব্যাপার না। আমায় একজন একবার দারুণ কথা বলেছিল, যে তুমি যে এই জায়গাটায় আছ, কাউকে সরিয়ে তুমি আছো। আজ থেকে দশ বছর পর তোমায় সরিয়ে কেউ আসবে। এবার তুমি নিচের দিকে যাবে নাকি ওপরের দিকে, এটা তো তুমি জানো। তোমার মানসিকতার ওপর নির্ভর করে।"
যদিও, তাঁর সব কাজের মধ্যে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় এর বিয়ের সাজ অন্যতম। সেখানে যেন তাঁকে রানীর মত করে সাজিয়েছিলেন তিনি। শিল্পীর কথায়, "শুভশ্রীর মত অন্যরকম ব্রাইড আমি আগে একটাও দেখিনি। ওর লুক নিয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা ছিল না। ও শুধু এটুকু বলেছিল, যে সায়ন্ত আসবে, আমায় সাজাবে। ওর বিয়ের দিন, কী মারাত্মক বৃষ্টি। আমরা সবাই ভয়ে তখন পাগল যে কী হবে। আর ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হা হা করে হাসছিল।"