দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা তনুরুচি শীল সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন যে উনি পরিচালক অরিন্দম শীলের আইনসম্মত স্ত্রী এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে যার কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। পাশাপাশি উনি লিখেছিলেন যে যৌথভাবে কেনা একটি ফ্ল্যাটের অর্ধেক মালিকানা নিয়ে অরিন্দম শীলের সঙ্গে তাঁর একটি কেস চলেছিল যার অর্ডার বেরিয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু এখনও ওই বাড়ির অর্ধেক মালিকানা বাবদ প্রাপ্য টাকা পাননি বলেই অভিযোগ করেছিলেন তনুরুচি শীল। এই সমস্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে তাঁর একান্ত কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ--
আপনি তো ফেসবুকে লিখেছেন যে দীর্ঘদিন ধরে আপনাদের ফ্ল্যাটের ওনারশিপ কেসটা চলেছে, তার পরে ২০১৯ সালে কোর্ট অর্ডার দিয়েছে। কিন্তু এত বছর ধরে চলল কেন কেসটা?
আমাদের কেসটা অনেকদিন ধরেই চলেছে, বেশিরভাগ দিনই উনি আসতেন না। প্রচুর টাকা আমার এর জন্য গেছে। এটা আনপার্টিয়েবল বাড়ি। সেজন্য পয়সা খরচা করে কমিশন করানো হল যে এটা পার্টিয়েবল না, ৫০ শতাংশ আমার। উনি তো প্রথমে বলেছিলেন যে আমি কোনও টাকাই দিইনি। কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি যে আমার প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তোলা হয়েছে, আমার নামে লোন নেওয়া হয়েছে। প্রমাণ করা গেছে সেটা, কোর্ট রায় দিয়েছে যে আমি ফিফটি পারসেন্ট ওনার। স্ত্রী হিসেবে এমনিই আমি ফিফটি পারসেন্ট ওনার। কিন্তু আমি প্রমাণ করেছি যে এটা আমার হার্ড-আর্নড মানি। সিপিএমের সময়, লোকাল কমিটির সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই তালা উনি ভেঙে ফেলেন ক্ষমতার জোরে। তার পরে সেই বাড়িতে উনি প্রথমে থাকছিলেন। আমি পুলিশেও প্রচুর রিপোর্ট করেছি। বেলেঘাটায় যেখানে কনভেন্ট রোড ক্রস করছে, ওইখানে ফ্ল্যাট। একদম মেন রোডে, প্রাইম লোকেশনে। ওটা 'কোলে'-দের প্রপার্টি। 'কোলে'-দেরও ওরা খুব সাপোর্ট পেল যেহেতু ওদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। আর শুক্লার বাবা এয়ার ফোর্সে চাকরি করতেন আগে। ওদের সিকিউরিটি এজেন্সি ছিল। পরে ওরা ওই ফ্ল্যাটেই ওই এজেন্সির অফিস করে। ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া বাবদও তো কিছু টাকা আমার প্রাপ্য হয়! যাই হোক, তার পরে সেই কেস চলল। কোর্টের ব্যাপার জানেনই তো। গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি... ডেটের পর ডেট...
আরও পড়ুন: রূপাঞ্জনা-অরিন্দম বিতর্ক: ঠিক কী ঘটেছিল দুবছর আগে, জানালেন দুপক্ষই
আপনি ১৬ বছর ধরে ধৈর্য্য রেখে কেসটা চালিয়ে গেলেন?
আমি ধৈর্য্য রেখেছি। আর ওই মেয়েটি তো আমার অফিসেই কাজ করত। পুরো 'লারসেন অ্যান্ড টুব্রো'-র লোক সাক্ষী যে ২০১১ সালে ওই অফিসের পিকনিকে, ওরা আমার সামনে রুম শেয়ার করে ছিল।
২০১১ তো অনেক পরে। আপনি ফেসবুকে লিখেছিলেন যে ৯৯-এ আপনি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন...
হ্যাঁ, ৯৯-এ আমি আমার বাবার কাজে চারদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। তখন থেকেই শুক্লার এন্ট্রি। ও আমার বান্ধবীই ছিল। সেজন্য একটা মানুষ তো কিছুটা বিশ্বাস করবে। তলে তলে যে ওদের মধ্যে অন্য কিছু ছিল, সেটা তো আর বুঝিনি। অতিরিক্ত খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল অরিন্দম, তার পরে আমার সামনে দিয়ে ওরা দার্জিলিং চলে গেল নিজেরা টিকিট কেটে।
আপনি তার পর নিজেই বেরিয়ে এলেন?
ওই মানসিক অত্যাচারে থাকা যেত না। আমার দাদা কথা বলতে গিয়েছিল। আমার দাদাও ফিল্ম জগতের সঙ্গে যুক্ত। তখন পুলিশ বলেছিল দেখুন আমরা বাইরে প্রোটেক্ট করতে পারি। যদি ওখানে আপনার বোনের কিছু হয়ে যায়, আপনি হয়তো কেস লড়বেন কিন্তু আপনার বোনকে কি পাবেন? এই ভরসায় কে রেখে আসবে বলুন তো। ওটাও আমাদের পুলিশে নোটিস করা আছে। দাদা লিখে নিয়ে এসেছে আমাকে এক কাপড়ে এবং অরিন্দম কোর্টেও স্বীকারও করেছে যে আমার সব জিনিসপত্র নাকি ও ফ্ল্যাটের বাইরে রেখে দিয়েছিল। কেন রেখে দেবে। আমি তো ওর বিবাহিত স্ত্রী, আর ওই ফ্ল্যাটে আমার টাকাও আছে। তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার উকিল ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি যে পাঠিয়েছেন জিনিসপত্রগুলো তার লরি রিসিপ্ট বা ওরা যে রিসিভ করেছে তার কোনও পেপার আছে। বলেছিল না। কী করে হতে পারে সেটা। রাখেনি তার মানে। হয়তো বিক্রি করেছে। নাহলে আজ আমার জিনিসপত্রগুলো দিতে পারছে না কেন। আমার আর আমার বাবার হার্ড-আর্নড মানি। কোনও অসৎ উপায়ে আমরা কোনওদিন টাকা রোজগার করিনি। আপনি আমার বাড়িঘর দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আমরা খুব সাধারণ ঘরের মানুষ। আমার বাবাও খুব কষ্ট করে রোজগার করা টাকায় ওই জিনিসগুলো দিয়েছিল বিয়েতে... তার পরে হঠাৎ অরিন্দম তৃণমূলে ঢুকে গেল। বাড়িটাকে দখল করে রইল। বাড়িটার অর্ডার কবে বেরিয়ে গিয়েছে। প্রথমে আমি বলেছিলাম যে বাকি ফিফটি পারসেন্টটা আমি কিনে নিচ্ছি। তখন বলল যে না, এখনকার মূল্যে দিতে হবে। পরে ওর লইয়ার বলল যে আমার ক্লায়েন্টের ফ্ল্যাটটা নিয়ে একটা ইমোশনাল ব্যাপার আছে, তাই আমার ক্লায়েন্ট কিনবে বলেছে। আসলে কিছুই না, ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দিলে তো সিকিউরিটি অফিসটা উঠে যাবে। আমি ওই দ্বিতীয় প্রস্তাবেও রাজি হলাম। তার পর এমাস নয়, ওমাস নয়, আমি আপনাকে দেখাতে পারি ওর উকিলকে কতবার আমি হোয়াটসঅ্যাপ করেছি। ও লিখেছে না আর একটা সংবাদমাধ্যমে যে আমি একটা দিন মিস করেছি? কেউ যদি সত্যিই টাকা দিতে চায় তাহলে কোর্টে একটা দিন মিস হলে অসুবিধা হয়? আমার উকিল আছে, ওর উকিল আছে। দুজন উকিল কথা বললে যেদিন রেজিস্ট্রি করার করতে পারতাম। আজকের ডেটে ও ফ্ল্যাটটা দখল করে আজ না, কাল না করে যাচ্ছে। আমি তো একটা সাধারণ চাকরি করি। মাসের পর মাস চার হাজার, পাঁচ হাজার করে আমার উকিলের ফিজ দিতে হচ্ছে। ডিভোর্স কেসটা ডিসমিস হয়ে গেছে কারণ উনি কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি আমার বিরুদ্ধে। উনি আসতেনও না। তার মানে কি এটাই যে ওনার ডিভোর্স দেওয়ার ইচ্ছেই নেই কারণ ডিভোর্স দিলে কাউকে হয়তো বিয়ে করতে বাধ্য হবেন, তখন হয়তো ওনার অসুবিধে হয়ে যাবে?
কিন্তু ডিভোর্সের কেসটা তো উনিই করেছিলেন?
করেছিলেন তখন কিন্তু পরবর্তী সময়ে হয়তো উনি দেখেছেন যে ডিভোর্স না দেওয়াটা ওনার পক্ষে লাভজনক। এই স্টেজটাকে উনি বেশি উপভোগ করছেন। কারণ কারও কাছে কোনও দায়ভার নেই ওনার। এটা আমার ধারণা।
আমরা কিন্তু ওনার সমস্ত ছবির প্রিমিয়ারে শুক্লাদিকে দেখেছি, ২০০০ সালের আশেপাশে টেলিভিশনের একটা ফ্যামিলি রিয়্যালিটি শো-তেও কিন্তু শুক্লাদিকেই ওনার স্ত্রী হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
জানি। সেটা কোর্টে বলাও হয়েছে। তখন উনি বলেছিলেন যে পেপারওয়ালারা যদি লেখে ওয়াইফ তো আমি কী করব। তখন আমার পক্ষের উকিল তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওনাকে সওয়াল করেছিলেন যে আপনি তার প্রতিবাদে সেই সব কাগজের দফতরে কোনও চিঠি লিখেছিলেন যে যাকে-তাকে আমার ওয়াইফ বলছেন কেন? তখন কিন্তু তার কোনও উত্তর দেননি। সোনিকাকে বলছে দত্তক নিয়েছে। যখন আমার লইয়ার জিজ্ঞাসা করেন আপনি ওয়াইফের মানে তনুরুচি শীলের কোনও অনুমতি নিয়েছেন? আপনি দত্তকের কোনও কাগজ দেখাতে পারবেন?-- না! কিছুই দেখাতে পারবেন না। উনি শুক্লাকে যদি বিয়ে করে থাকেন, কোনও কাগজ দেখাতে পারবেন?
আপনি তো বললেন যে খুব মানসিক অত্যাচার ও বিষাক্ত পরিবেশের কারণে আপনি বেরিয়ে এসেছিলেন ৯৯ সালে যৌথ মালিকানার ফ্ল্যাটটি থেকে। তার পরে যদি অরিন্দমবাবু ডিভোর্সের কেসটা না করতেন, আপনি নিজে থেকে কি ডিভোর্স কেস করতেন?
না, আমাদের তো সামাজিকভাবে, হিন্দুমতে বিয়ে হয়েছে। সবাই সর্বদিক দিয়ে গুণী হয়, তা না। কিন্তু আমাদের বাড়িতে এই ডিভোর্সের চলটাই নেই। আমি ভেবেছিলাম যে হয়তো ক্ষণিকের জন্য অরিন্দমের মতিভ্রম হয়েছে। হি উইল রিয়্যালাইজ ওয়ান ডে। কিন্তু এটাই যে ওর নেচার, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। অনেকে বলছেন যে আমি লাইমলাইটে আসার জন্য এসব করছি। আমি তো অলরেডি সিরিয়াল জগতের সঙ্গে যুক্তই ছিলাম। আমার বিয়ের ঠিক আগে আমার হাতে ছবির অফারও ছিল কিন্তু তখন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ঠিক রাজি হননি যে বিয়ের পরে আমি অভিনয় করি সিনেমায়, তাই আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম। লাইমলাইটে আসার জন্য অরিন্দম শীলের কুৎসার সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে কী লাভ হবে? যখন রূপাঞ্জনা লিখল, তখন মনে হল যে আমার বিষয়টাও সকলের জানা দরকার। নাহলে ও তো এরকমই করে বেড়াবে। নাহলে আমার টাকা, আমার ফ্ল্যাট, আমার সব জিনিসপত্র... অ্যান্ড হি ইজ এনজয়িং ইট। আমি একটা ভুল লোককে এতদিন ভালবেসে আঁকড়ে থেকেছিলাম!
আপনাদের তো প্রেম করে বিয়ে, যেটা আগে লিখেছিলেন ফেসবুকে।
আমি ৮৯-এ জোছনদার (জোছন দস্তিদার) দলে অভিনয় করতাম। আমি ওনার খুবই প্রিয় ছাত্রী ছিলাম। ওই সময় 'চতুরঙ্গ' বলে একটা সিরিয়াল হয়। ওই কাজটা করতে গিয়েই প্রথম অরিন্দমের সঙ্গে আলাপ হয়। তার পরে একটা টেলিফিল্মে কাজ করার সময়ে ও আমাকে প্রোপোজ করে।
উনি প্রোপোজ করেছিলেন?
হ্যাঁ, তার পরে দুই বাড়ির মতামত নিয়ে সামাজিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। ৯৩ সালে যে রেজিস্ট্রি হয়, সেখানে খেয়ালী দস্তিদার, সব্যসাচী চক্রবর্তী সবাই ছিলেন। আর এই ঘটনার সাক্ষী 'লারসেন অ্যান্ড টুব্রো'-র প্রত্যেকটা লোক। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন ফেসবুকে যে পোস্টটা করেছি, সেখানে কতজন লোক লিখছেন যে পাশে আছি। কিন্তু ও যেহেতু সব সময় ক্ষমতার সঙ্গে থাকে... জলে বসে কুমিরের সঙ্গে আমি কীভাবে লড়াই করব? যখন দেখলাম যে সবাই মিলে বলছে, তখন আমি ফেসবুকে লিখলাম। আর উনি একবারও প্রতিবাদ করছেন কি? উনি তো নিজেই বলছেন যে ফিফটি পারসেন্ট মালিক আমি। একদিন ডেট যদি মিস করে কেউ, তার জন্য উনি টাকা দেবেন না? আমি তো বলব, ২০১৪-তে ভ্যালুয়েশন হয়েছিল। তার পর এতদিন সময়টা খেয়েছে। এবার আজকের ডেটের ভ্যালুয়েশনে আমাকে টাকা দিতে হবে। ওটা আমার অনেক কষ্টের টাকা। আমি তো সৎপথে বিচারের দ্বারে গিয়েছিলাম। ২০১৯-এ কোর্ট ফাইনাল অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। তার পরে উনি উপরের কোর্টে যাচ্ছেন, নীচের কোর্টে যাচ্ছেন... জাস্ট হ্যারাসমেন্ট আর কিছুই না।
ফাইনাল অর্ডার কোন কোর্ট থেকে দিয়েছে?
শিয়ালদহ কোর্ট থেকে আর ডিভোর্স কেসটা আলিপুর জাজেস কোর্ট থেকে।
এরকম কি কোনও কথা হয়েছে যে উনি এই অর্ডারটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাবেন?
যেতেই পারে, আমার কোনও অসুবিধা নেই। তবে হাইকোর্ট সব কেস নেয় না। যখনই দেখবে যে অলরেডি সিনিয়র কোর্ট ঘুরে, জুনিয়র কোর্টে এসে গেছে... হাইকোর্ট কী বলবে? উনি তো নিজেই স্বীকার করছেন যে আমি ফিফটি পারসেন্ট ওনার। তার পরে আর কী যাওয়ার আছে হাইকোর্টে? কী বলবে হাইকোর্ট? স্ত্রী হিসেবেও আমি ফিফটি পারসেন্ট ওনার আর ফ্ল্যাট কেনার জন্য যে আমি টাকা দিয়েছিলাম, তার সব প্রমাণও দেখিয়েছি।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আপনার তাহলে দাবিগুলি কী?
প্রথমত ফ্ল্যাট বাবদ আমার যে প্রাপ্য টাকা, আজকের ডেটের ভ্যালুয়েশনে দাঁড়িয়ে, সেটা আমাকে দিক। সেকেন্ডলি, আমার বাবা বিয়ের সময় যা যা ফার্নিচার দিয়েছে, আমার যা জিনিসপত্র ওই ফ্ল্যাটে রয়ে গিয়েছিল, সেগুলো আমাকে ফেরত দিক, যদি না বেচে দিয়ে থাকে। যদি বেচে থাকে, তার সমান মূল্য আমাকে ফেরত দিক। আমি তো সুবিচার চাইছি, আর কিছু চাইছি না। আমি তো ২০ বছর শুধুই ন্যায়ের পথে লড়েছি।
বিয়ের পরে আপনার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল?
খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল, ওনারা আমাকে খুবই ভালবাসতেন। বিশেষ করে শ্বশুরমশাই। প্রথমদিকে ওনারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন। প্রথম যখন মিটিং হয় দুপক্ষের, সেই মিটিংয়ে ওনারাও ছিলেন। কিন্তু যা হয়, নিজের ছেলে তো আফটার অল। তাই আর পরে যোগাযোগ থাকেনি।
যদি এই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন হয় যে অরিন্দমবাবু আবার ফিরে আসতে চাইছেন আপনার কাছে, আপনি কি ওনাকে গ্রহণ করবেন?
না না, প্রশ্নই নেই। আমার টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দিক। অরিন্দম শীলের স্ত্রী হয়ে যে আমার খুব একটা সুনাম বাড়ছে তা নয়, বরং এটা আমার কাছে লজ্জার। আমি কম রোজগার করতে পারি কিন্তু আমার আত্মসম্মান রয়েছে। কারণ ওটাই আমাদের একমাত্র অ্যাসেট। কেউ বলতে পারবে না, আমার থেকে এক পয়সা পায়। আমার যা রোজগার, আমি সেই অনুযায়ী চলি। আমি তো আইনের পথে ভদ্রভাবে লড়ে গিয়েছি। ডিভোর্সের কেসটা ডিসমিস হয়ে গিয়েছে, সেই কেস আবার রিওপেন করিয়েছে আমাকে হেনস্থা করার জন্য। কুড়ি বছর ধরে আমি লড়ে গিয়েছি। কত ডেট পড়েছে, আমি যে অফিসে চাকরি করি, সেই কোম্পানি আমাকে প্রত্যেকটা ডেটে কেন ছেড়েছে বলুন তো। কারণ ওরা জানে সবটা আর ওরা আমাকে মেন্টালি প্রচণ্ড সাপোর্ট করেছে। আমার পুরো জীবনটাকে নষ্ট করে দিল। ও বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ায় না যে শুক্লা-সোনিকা, ওরাই ওর সব। সব মানে কী? কাগজ দেখাতে পারছে না কেন তাহলে?
যদি আপনাদের ডিভোর্স হয়ে যেত এবং উনি লিভ-ইন করতেন?
হ্যাঁ, তাতে আমার কি যায় আসে? আমার অর্ধেক সম্পত্তি দখল করে, জাস্ট পাওয়ার দেখিয়ে উনি এটা করতে পারেন না। আজ আমি সাধারণ ঘরের চাকরিজীবী মেয়ে। চাকরিটা আছে বলে লড়তে পারছি কেসটা। একজন সাধারণ ঘরের গৃহবধূর সঙ্গে এই ঘটনা যদি হয়, সে কীভাবে লড়বে। এমন তো হচ্ছে চারদিকে। আজ চাকরি না থাকলে আমি কোথায় যেতাম বলুন তো!
কিন্তু ডিভোর্সটা ফাইনালি হল না, এটা তো খুবই আশ্চর্যের বিষয়!
আমি তো চাইলে যে কোনও সময়েই ডিভোর্স দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমি ডিভোর্স দিয়ে দিলে আমার যা যা প্রাপ্য সেটা কোনওদিন দেবেই না আর। এতেই দিচ্ছে না আমার ফ্ল্যাটের প্রাপ্য টাকা, আমার বাবার কিনে দেওয়া ফার্নিচার, আমার অন্যান্য সব জিনিসপত্র যা পড়ে আছে ওই ফ্ল্যাটে। ডিভোর্স দিলে তো আরও কোনও সম্ভাবনা নেই। একদিনের ডেট চেঞ্জে কারও টাকাপয়সা না দিলেও চলে? আর ভ্যালুয়েশনের পরে পাঁচ বছর কেসটা টেনে গিয়েছে। আমি তো আজকের ডেটের ভ্যালুয়েশনে আমার প্রাপ্য টাকাটা চাই। সেটা যদি ও দিতে না পারে, বাড়ি নিলাম হয়ে যাক, কারও থাকবে না!