সিঁড়ি... ওঠা নামার এক অদ্ভুত সাক্ষী এই সিঁড়ি। তা সে টপ ফ্লোর হোক অথবা একদম নীচু প্রান্তে, এই সিঁড়ি কিন্তু একমাত্র আদর্শ প্রমাণ জীবনের এক অদেখা অধ্যায়ের। এবার, এই সিঁড়ি বেয়েই ওঠার পালা তুহিনা দাসের। না! সিঁড়ি বেয়ে এই প্রথম উঠছেন এমন না কিন্তু, বরং তাঁর নতুন ছবির নাম 'সিঁড়ি'।
নতুন একটি ছবি তাঁর সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ অবশ্যই! কারণ? এই ছবিতে যে চরিত্রে তিনি অভিনয় করছেন সেটি নিয়ে সমাজের বুকে নানা কথা বলা হয়ে থাকে। তথাকথিত, মেয়েদের নানা বিশেষণে বিদ্ধ করা হয়। তুহিনা সবসময় নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। যদিও, এটা তাঁর যে কেবল নিজস্ব পছন্দ এমন না, কিন্তু সবসময় তাঁকে এহেন স্ট্রং চরিত্রেই বেছে নেন পরিচালকরা। এই ছবিতে এমন একজন মেয়ের ভূমিকায় তিনি অভিনয় করছেন যে কেরিয়ারের প্রয়োজনে সবকিছুই করতে পারে। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছে তাঁর। এবং নিজেকে টপ পজিশনে দেখার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত।
এপ্রসঙ্গে তুহিনা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে বলেন, "সমাজে মেয়েদের সবসময় সুযোগ সন্ধানী, সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এসব বলেই চিহ্নিত করা হয়। একটা মেয়ের ট্যালেন্ট থাকলেও, যদি সে প্রগ্রেস করে, সেটাকে খারাপ ভাবেই নেবে সকলে। এটা একটা সামাজিক ধারণা হয়ে আসছে। আমি চাইলেও বদলাতে পারব না। 'সিঁড়ি'তে আমার চরিত্রটা অনেককে অনেক মেসেজ দেবে। মানুষের পরিস্থিতি থেকে, এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে যে কতগুলো পর্যায় সেটা জানাবে। মেয়েদের অবজেকটিফাই করা খুব সহজ। যে যা পারে বলে দেয়।"
'সিঁড়ি' একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের বেড়ে ওঠার গল্প। জীবনের নানা পর্যায়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় বেশ নতুন কিছু মানুষ। সম্পর্কের ভাঙাগড়া থেকে শুরু করে, একটা সময় ধর্ষণ! এর মধ্যে দিয়েও যেতে হয় তাঁকে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিষয়টাকে কিভাবে দেখেন তুহিনা ব্যাক্তিগত জীবনে? অভিনেত্রী বলেন, "আমি নিজে মেদিনীপুরের একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ ছিল না। আমায় সবসময় এহেন নারীকেন্দ্রিক চরিত্রের নিরিখেই ভাবা হয়েছে। এতে আমি ধন্য। তবে, একটা কথা বলতেই হয়, আমায় একটু অন্যরকম দেখতে। আমায় গায়ের রং, মুখের গঠন একটু অন্যরকম। তুমি বিশ্বাস করবে না, আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কোনোদিন কাস্টিং কাউচ কী জিনিস বুঝি নি, তবে হ্যাঁ! এত আজগুবি ফোন পেয়েছি, আমায় শুধু চেহারার কারণে বেলি ড্যান্স করার অফার দেওয়া হয়েছিল। লোকজন এটা বোঝেও না যে এটা একটা ড্যান্স ফর্ম, এটা শিখতে হয়। অনেক সময় লাগে। জানি না কেন? মানুষ খারাপ-ভালর হিসেবটা নিজেরাই সাজিয়ে নিয়েছেন। তবে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এমন একটা বিষয় যেটা মানুষকে নানা পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেয়। আমরা কিন্তু কাউকে বিচার করতে পারি না সেকারণে।"
'সিঁড়ি'তে রয়েছে আরও একটি টুইস্ট। জীবনের তিনটি সময়, ভিন্ন বয়সে অভিনয় করেছেন তুহিনা। ৬০ বছর বয়সেও সমান মানিয়েছে তাঁকে। কাঁচা পাকা চুল, চোখের তলায় কালি। অল্প বয়সী নায়িকাদের কাছে কি এটা এখন ট্রেন্ড, বয়স্ক সাজার? এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, "ট্রেন্ড কিনা জানি না। আমায় আমার পরিচালক এসে বলেছিলেন, যে এই চরিত্রে আমি তোমায় ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না। আর সত্যি বলতে গেলে, আমায় লোকজন সিনেমায় দেখলে বয়সে একটু বড়ই ভাবে। একেই আমার গলা ভারী। আমি যখন বৃন্দা করেছিলাম, তখনও সবাই ভেবেছিল যে আমার হয়তো অতটাই বয়স কিন্তু, তারপর... সামনে দেখে চমকে গিয়েছেন। সবসময় আমি আমার থেকে বেশি বয়সের মহিলার চরিত্রই করি।"
উল্লেখ্য, এই ছবিতে ডেবিউ হতে চলেছে বউ কথা কও অভিনেতা ঋজু বিশ্বাসের। এক গুরুত্বপূর্ন চরিত্রে দেখা যেতে চলেছে তাঁকে। ন' দিন শুটিংয়ের মাঝেই ঘটেছে তুহিনার ট্রানজিশন। ভিন্ন মেকাপে, ভিন্ন সময়ের নিরিখে ক্যামেরায় ধরা দিয়েছেন তিনি।