ছবি: উড়নচণ্ডী
পরিচালনা: অভিষেক সাহা
অভিনয়ে: চিত্রা সেন, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অমর্ত্য রায়, রাজনন্দিনী পাল
রেটিং: ৩.৫/৫
Uronchondi Bangla Review: মানুষের সহজ সাধারণ বৈচিত্র্যহীন জীবনযাত্রার মাঝখানে ভূমিকম্পের মতো এমন এক একটা ঘটনা ঘটে যায় যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে সেটাকে একটা অসম্ভব অঘটন বলে মনে হয় - শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথাটা যেন অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়ে যায় 'উড়নচণ্ডী' ছবিটার ক্ষেত্রে। আসলে নারী তো অহির মতো দুর্জ্ঞেয়, তাকে কি অরণ্য অশ্বিনীর মতো বশে আনা যায়? সাময়িক করা গেলেও শেষপর্যন্ত বাঁধন ছাড়িয়ে বেরিয়েই পড়ে অজানার উদ্দেশে।
'উড়নচণ্ডী' ছবিতে ছোটু আর বিন্দিয়া পালিয়ে যাচ্ছিল, সঙ্গী একটি লরি। শহরের সুখকে তোয়াক্কা না করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে তারা। রাস্তায় তাদের সঙ্গ নেয় মিনু। বিয়ের পিঁড়ি থেকে পালিয়ে সে যাবে তার প্রেমিকের কাছে। তিনটে মানুষের মধ্যে কেবল মনুষ্যত্বের সম্পর্ক। প্রত্যেকের জীবনের আলাদা আলাদা গল্প আছে। ভিন্ন ভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন তারা। এই সমস্যাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চলে তিনটি মানুষ। একটু ভুল হল, চারজন। পথের আরও এক সঙ্গী এক বৃদ্ধা। ফেলে আসা জীবন তাদের কোথায় নিয়ে যায়, নিজের ভাগ্য তারা নিজেরাই গড়ে নেয় কিনা, সেটাই এই ছবির মূল উপজীব্য।
বাংলা ছবি 'রোড মুভি' শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নই বিশেষ একটা। পরিচালক অভিষেক সাহার ভাবনা আর সুদীপের লেখায় সেটা দেখতে পেলেন বাংলার দর্শক। টানটান চিত্রনাট্য যাকে বলে আর কী! অভিনয়ের কথা বলতে গেলে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কথা বলার ধরণ থেকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনাকে চরিত্রটায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করবে। চিত্রা সেনকে নিয়ে কিছু বলার ঔদ্ধত্য নেই, তাঁর উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিল চর্চাটা তাঁর আজকের নয়।
এবার আসি নবাগতদের দিকে। ছোটু অর্থাৎ অমর্ত্যর দাপুটে অভিনয় একবারের জন্যও ধরতে দেবে না সে ডেবিউ করছে। পরিচালকের ছোটু খোঁজা সার্থক। তবে রাজনন্দিনীর বেশ কিছুটা মাজাঘষার প্রয়োজন। কথার গ্রাম্য টান কিছুটা শহুরে শুনিয়েছে। চিত্রগ্রহণে সৌমিক হালদার নিজের ছাপ রেখেছেন। ড্রোনের ব্যবহারে গ্রাম বাংলার দৃশ্য যা ফুটিয়ে তুলেছেন তা প্রশংসাযোগ্য। টানা বড় বড় টপ শট, বিশেষ করে রাতের অন্ধকারের সিনেমাটোগ্রাফি, বাকরুদ্ধ করে। তবে কালার কারেকশন যেন পুরুলিয়ার কঠোর আবহাওয়াকে একটু ম্রিয়মান করেছে। দেবজ্যোতি মিশ্রের গান রাস্তার রুক্ষতা এবং উড়নচণ্ডীদের মনোবলকে আক্ষরিক অর্থেই আলাদা মাত্রা দিয়েছে। সব মিলিয়ে পরিচালক তাঁর প্রথম ছবিতেই যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন, সত্যি বলতে রান্নাটা ভাল হয়েছে, অভিষেক সাহা।