অস্তমিত ঊষা। বৃহস্পতিবার সকাল বয়ে নিয়ে এল এমনই এক মর্মান্তিক দুঃসংবাদ। প্রয়াত বিশিষ্ট নাট্যকার ও বহু মানুষের কাছের ঊষাদি (ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়)। কলকাতার থিয়েটার জগতের ইন্দ্রপতন বললে কম বলা হবে না। তাঁর কাছের মানুষদের একজন নাট্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। এদিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে স্মৃতিমেদুর দেবেশ।
স্মৃতি উস্কে বলে চলেন যে আমার সঙ্গে ঊষাদির দীর্ঘদিনের পরিচয়। এই তো সেদিনও লকডাউনের মধ্যে ফোন করে বলছেন, আমার এক বন্ধু রয়েছে বিহারে, তারা ইন্টিমেট স্পেসে কাজ করেছে, আমি কেন করছি না! ওনার ইন্টিমেট স্পেস ব্যবহার করে নাটক করতে বলেছিলেন আমাকে। ওনার প্রত্যেকটা নাটকের ভিডিও ডক্যুমেন্টশন আমার করা। কোনও কাজে বাইরে থাকলেও ধমকে বলতেন, তুমি না থাকলে হবে না। ছেলের মতো ভালবাসতেন। থিয়েটার জীবনে ওনার মতো কিছু মানুষ পেয়েছি এটা আমার কাছে আনন্দের।
আরও পড়ুন, কলকাতা থিয়েটারে ইন্দ্রপতন, প্রয়াত ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়
দেশের তো বটেই, আর্ন্তজাতিক থিয়েটারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাছাড়া কেবলমাত্র প্রসেনিয়াম নয়, মঞ্চে বিভিন্ন ধাঁচে কাজ করেছেন তিনি। বহু পথনাটক করেছেন, আবার পাশাপাশি ইন্টিমেট থিয়েটারও করেছেন, এত বহুমুখী প্রতিভা খুব কমজনের দেখা যায়।
আমার যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, বাংলা থিয়েটারে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, বলা ভাল বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে মানুষ হিসাবে নিজের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠা করা, এটা কিন্তু কম কথা নয়। আমরা যদি একটু খেয়াল করি সেই সময়ে বাংলা থিয়েটারে যাঁরা পরিচালক তাঁরা প্রত্যেকে পুরুষ, একমাত্র ঊষাদি নারী এবং তিনি হিন্দি ভাষায় নাটক করছেন।
আরও পড়ুন, ‘বাংলার আবার এপার ওপার কী?’ কত আগেই বাঙালিকে জানান দিয়েছিলেন
প্রথম যখন কেয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে কাজ করি, তখন ঊষাদি আমাকে ফোন করে বলেন, ''তুমি এস আমার বাড়িতে।'' নিজে খাইয়েছিলেন, বলেছিলেন, ''তুমি এত ভাল কাজ করেছ তার জন্যই আনন্দ হচ্ছে।'' কেয়াদির খুব ভাল বন্ধু ছিলেন উনি। নাটকের বাইরে এই ব্যক্তি মানুষটিকে চিনেছি।
সাংঘাতিক আকাঁড়া প্যাশন ছিল ঊষাদির। কখনও খুশি হতেন না। প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ। অনেকে বোধহয় জানে না, ওকে নিয়ে আমি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলাম। দুটি খণ্ডে ঊষাদির এই ডক্যুমেন্টরি অনলাইনেও রয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন