Ushasie Chakraborty on Utpal Dutt: তাঁকে বাংলা তথা ভারতীয় ছবির কান্ডারী বলা হতো। তিনি থিয়েটার এবং নাট্য মঞ্চের পাশাপাশি সিনে দুনিয়াকে অনেককিছু দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতির দিকে তিনি বামপন্থী পর্যন্ত ছিলেন। তাঁর ডাকসাইটে অভিনয় যেমন মন কেড়েছিল মানুষের, ঠিক তেমনই তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে নানা প্রশংসা সর্বত্র শোনা যায়। কিন্তু, তাঁর জন্মদিনে অভিনেতা রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত তাঁকে নিয়ে লিখেছিলেন...
রুদ্র বাবু এক সংবাদমাধ্যমের পাতায় লেখেন, উনি যে খুব বড় কমিউনিস্ট সেকথা বারবার তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু কেন? তাহলে কি মানুষ তাঁকে বামপন্থী ভাবতেন না? সেই কারণেই বারবার প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতেন তিনি? এছাড়াও তিনি বলেন, "আমার অনুমান তিনি নিজেকে কমিউনিস্ট বলতেন, তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতেন। সেটা করতে গিয়ে কয়েকটা খারাপ কাজ করতেন। তাতে দেশের কোনও উপকার হত না।" আর এমন একজন কিংবদন্তী মানুষকে নিয়ে এহেন কথা বলেছেন যেই, সঙ্গে সঙ্গে আলোচনার ঝড়।
অভিনেত্রী উশষী চক্রবর্তী, যিনি প্রয়াত বামপন্থী নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর কন্যা, সেই পোস্টের নিরিখেই সমাজ মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন। তিনি উৎপল বাবুর রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে নানা কিছু লিখলেন। তাঁর হয়েই উশষী লিখছেন... "উৎপল বামপন্থী হওয়ার চেষ্টা করেননি। বামপন্থী ছিলেন। হাড়ে মজ্জায়। শাসকের চটি চেটে নয় , স্বৈরাচারী শাসকের চোখে চোখ রেখে, একের পর এক নাটক লিখে , নাটক পরিচালনা করে উনি আমাদের মত অনেককেই শিখিয়েছেন মেরুদন্ড একেবারে বিক্রি না করেও কি ভাবে বেঁচে থাকা যায়। সেই প্রজন্মের এখনও অনেকেই হয়ত এখনও আছেন, যাঁরা বলতে পারবেন, কি ভাবে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত 'কল্লোল ' বা 'দুঃস্বপ্নের নগরী ' পাহারা দিয়ে প্রতিরোধ করেছেন শাসকের আক্রমনের।"
অভিনেত্রীকে দেখা গেল, উৎপল বাবুর নীতি ও আদর্শ নিয়ে কথা বলতে। সেই মানুষটি নিজের আর্ট এবং ক্রাফটের মাধ্যমে বহু মানুষকে প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন, তাঁর বুকের পাটা দেখিয়েছেন, সেই মানুষটাকে নিয়ে কেন এহেন সমালোচনা? একজন অভিনেতা হয়ে আরেকজন লেজেন্ডকে নিয়ে কী করে এহেন মন্তব্য করতে পারেন রুদ্র বাবু? এমন একজন অভিনেতা যিনি নিজের অভিনয় এবং দক্ষতার মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাঁর হয়ে অভিনেত্রী আরও বললেন...
"শাসকের আক্রমনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মতাদর্শের কথা বলতে দম লাগে। সবার থেকে সেই দম প্রত্যাশা করি না। কিন্তু তাই বলে নিজে অভিনেতা হয়ে একজন কিংবদন্তী পরিচালন, নাট্যকার,অভিনেতাকে ভাঁড় বলার মধ্যে মনের ও মননের যে দীনতার বহি:প্রকাশ ঘটে তাকে কুরুচিকর, নিন্দনীয় ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে। সন্দেহ জাগে এই বিষোদগার অসূয়াপ্রসূত নয় তো? উৎপল দত্ত ওঁর জায়গায় অমলিন আছেন ও থাকবেন। আমার বলায় বা না বলায় কিছু এসে যাবে না। কিন্ত তাও আমার এই প্রতিবাদ রইল। কারণ উৎপল দত্তের নাটক দেখেই শিখেছি ( যতদূর মনে পড়ছে নাটকটির নাম ছিল একলা চল রে) আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া উচিত। সেই ধারা মেনে আমার প্রতিবাদ রেজিস্টার করিয়ে রাখলাম।"