পাঁচের দশকের কথা। 'হারানো সুর'-এর শুটিং চলছে। অভিনয়ে হিট জুটি উত্তম-সুচিত্রা। লোকেশন টালিগঞ্জ স্টুডিও। গুরুত্বপূর্ণ এক দৃশ্যের শুটিং হবে। তার আগেই ঘটে গেল এক কাণ্ড!
১৯৫৬ সালের কথা। সেই সময়ে টালিগঞ্জের চেহারা কীরকম ছিল তা আজ চিন্তারও অতীত। বিরাট বিরাট গাছ-গাছালি। সন্ধে হলে পথঘাটে সেরকম লোকজনও দেখা যেত না। আর রাত হলে তো কোনও কথাই নেই! নিস্তব্ধতা, অন্ধকার ঘিরে ধরত স্টুডিও চত্বরকে। তারকাদের অনেকের কাছেই সেই পরিবেশ খানিক ভয়ঙ্কর ঠেকত। তো এক সন্ধেয় টালিগঞ্জ স্টুডিওতে 'হারানো সুর'-এর এক গানের দৃশ্যের শুট চলছে…।
উত্তম-সুচিত্রা জুটির অন্যতম হিট গান 'শুধু এক বার বলো…'র শুটিং। পরিচালক অজয় কর একেবারে শশব্যস্ত। ক্যামেরা, প্রপস .. ইত্যাদি প্রয়োজিনীয় জিনিস সব প্রস্তুত কিনা কড়াভাবে খুঁটিয়ে দেখছেন। সেখানেই এক গোল বাঁধল! কী না, গানের দৃশ্যে প্রয়োজন দুটো মালার। আর সেখানে রয়েছে একটি মালা। এদিকে সন্ধে গড়িয়েছে অনেকক্ষণ। গাড়ি-ঘোড়ার সমস্যা। আশেপাশে কোনও বাজার তো দূরঅস্ত, একটা ফুলের দোকানও সেইসময়ে খোলা পাওয়া যাবে না। বাসও একটাই চলে তখন ওই রুটে। ৬ নম্বর। ব্যস!
<আরও পড়ুন: উত্তম-সৌমিত্র ছাড়াও শকুন্তলার ‘রুই ভাপা’র ভক্ত হয়েছেন অনিল কাপুরও>
টালিগঞ্জ থেকে তখন কাছাকাছি বাজার বলতে শুধু লেক মার্কেট। এদিকে উত্তম-সুচিত্রা তৈরি 'শুধু এক বার বলো…' গানের দৃশ্যে শুটের জন্য। পরিচালক অজয় করের তো তখন মাথায় হাত! কারণ, মালা প্রয়োজন দুটো। সেখানে রয়েছে একটা। আর সেটা যদি শুধু উত্তম কুমারকে দেওয়া হয়, তাহলে আর রক্ষে নেই মিসেস সেনের হাত থেকে! প্রচণ্ড রাগারাগি করবেন। আবার যদি শুধু সুচিত্রার গলায় মালা দেওয়া যায়, তাহলেও উত্তম কুমারের মনোক্ষুণ্ণ হতে পারে। অতঃপর অজয় কর একজনকে পাঠালেন মালা জোগাড় করতে।
মালা এল। গানের দৃশ্যের শুটিংও দিব্যি সুন্দরবাবে উতরে গেল। তখনও কিন্তু উত্তম কুমারের অজানা যে সেই মালাটি কোথা থেকে আনা। পরবর্তীকালে পরিচালক অজয় কর দুঃখ করে ঘনিষ্ঠমহলে বলেছিলেন, "আজও উত্তম কুমারকে জানাতে পারিনি যে সেদিনের ওই গানের দৃশ্যের মালাটি ক্যাওড়াতলা শ্মশান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।" আসলে শুটিং যাতে ভেস্তে না যায়, তাই বোধহয় সেদিন চুপ করে গিয়েছিলেন পরিচালক অজয় কর।
ভাবা যায়, বাঙালির একমেবাদ্বিতীয়ম 'ম্যাটিনি আইডল'-কে কিনা শ্মশান থেকে আনা মালা পরে শুটিং করতে হয়েছিল? আজ ৩ সেপ্টেম্বর উত্তম কুমারের জন্মদিনে তেমনই এক অজানা গল্প রইল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন