'ফেলুদা' আর নেই। সারা দেশ, অনুরাগীকূলের প্রার্থনা আর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরাতে পারল না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে (Soumitra Chatterjee)। রবিবার বেলা ১২টা বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রবীণ অভিনেতার প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া বিনোদন জগতে। ভেঙে পড়েছেন 'ফেলুদা'র অনুরাগীরাও। বেলা ১টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেনও। কথা বললেন সৌমিত্রবাবুর মেয়ে পৌলমী বসুর সঙ্গে।
দীপাবলির দিনই চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে চিকিৎসায় আর সাড়া দিচ্ছেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রতঙ্গই আর কাজ করেছে না। মাল্টি অর্গান ফেলিওরের পরই সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল বর্ষীয়ান অভিনেতাকে। পূর্ণ মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা একেবারে কমে গিয়েছিল। রক্তচাপও কমছে শরীরে। কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হার্ট কাজ করছে না। ডায়ালিসিস ও প্লাজমাফেরাসিসেও ফল মিলছে না। অভিনেতার মস্তিষ্কের স্নায়ুর সচেতনতা অর্থাৎ গ্লাসগো কোমা স্কেল প্রায় ৫-এর নীচে। ফলে পরিস্থিতি যে জটিলের থেকেও ভয়ঙ্কর পর্যায় পৌঁছেছিল, তা ডাক্তাররা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল।
শনিবার রাতেই সৌমিত্রবাবুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাঃ অরিন্দম কর জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকদের বিভিন্ন রকম চেষ্টা সত্ত্বেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। গত প্রায় ৪০ দিন ধরে তাঁরা চেষ্টা চালিয়েছেন। বিভিন্ন রকম চিকিৎসা পদ্ধতিতে অভিনেতার চিকিৎসা করা হয়েছে। স্টেরয়েড, প্লাজমা থেরাপি, করা হয়েছে। চিকিৎসকদের বড় দল তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য কাজ করেছে। স্নায়ু, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলজি, সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি- সব স্তরের চিকিৎসকদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। "তবে আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই যে, তাঁর শরীর চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে না। পরিবারের সদস্যদেরও এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে। সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থা নিয়ে সবাই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন পুরো বিষয়টি। তবে আমরা শেষ চেষ্টা করছি। এই অবস্থায় মিরাকেলও কার্যত অসম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা", বলেছিলেন অরিন্দম কর।
প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেদিন থেকেই তাঁর আরোগ্য কামনায় রত ছিল সারা বাংলা তথা গোটা দেশ। তাঁদের প্রার্থনার জোর যে ফেলুদাকে এই পরিস্থিতি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেই, তাতে আশাবাদী ছিলেন সৌমিত্র-অনুরাগীরা। কিন্তু তা আর হল না। হাসপাতাল থেকে বাড়ি আর ফিরতে পারলেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০২০ সালে একের পর এক খ্যাতনামা তারকার বিদায় যেন আর কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। সত্যিই বিনোদন জগতের আকাশে যেন এক কালমেঘ ঘনিয়েছে।