ছবি: ভিঞ্চিদা
পরিচালক: সৃজিত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়: ঋত্বিক চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, সোহিনী সরকার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋদ্ধি সেন
রেটিং: ৩.৫/৫
ট্রেলারের শেষ দৃশ্যটা মনে আছে? ঋদ্ধির চরিত্র অবলীলায় খুন করে ফোন করে ভবানীপুর থানায়। ছবির শুরুটা এখান থেকেই। প্রথম দৃশ্যে কিশোর আদি বোস পড়ছিল ‘ল অফ ক্রাইমস’। তারপরেই খুন। দর্শক সেই মূহুর্ত থেকেই সোজা হয়ে বসেন। প্রথমেই সৃজিত মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন 'কে' এই সাসপেন্সের উত্তর। সুতরাং, 'কেন'-র উত্তরটা জানতেই ছবিটা দেখতে হবে।
একজন মেকআপ আর্টিস্ট, ভিঞ্চিদা, তাঁর শিল্পীসত্ত্বা নিয়ে আপোষে রাজি নন। তাঁর জীবনে শিক্ষক বলতে বাবা, এবং কালজয়ী শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। আর অন্যদিকে আদি বোস, ছোটবেলা থেকেই আইনের গুণগ্রাহী। প্রথম খুনটা করে জেলে গিয়েও ক্রাইম ল নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। ভিঞ্চিদাই এই গল্পের নায়ক, ন্যারেটারও বটে। কাজটা ঠিক করে জানার বিড়ম্বনাই কোণঠাসা করতে থাকে তাঁকে।
ওহ! বলতে ভুলে গিয়েছি, শিল্পের প্রতি প্রেম ছাড়া আরও একটা প্রেম রয়েছে ভিঞ্চিদার। সে জয়া (সোহিনী)। সমস্ত পদক্ষেপের সঙ্গী সে। এমতাবস্থায় শিল্পীর ক্ষিদে মেটানো যায় এমন পরীক্ষামূলক কাজের প্রস্তাব নিয়ে আসে আদি বোস। সিনেমার প্রয়োজনে প্রস্থেটিক মেকআপের প্রয়োজন, তাই আসা ভিঞ্চিদা'র কাছে। এদিকে শিল্পীও খুশি, প্রমাণ করতে পারার মতো কাজ পেয়ে। কিন্তু ক্রমশ বুঝতে পারেন কাজ নয়, ক্রাইমে যুক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। এরপরেই গল্পটা হয়ে যায় ভিঞ্চিদা আর আদি বোসের।
'উবারমেন্শ' অর্থাৎ 'বিয়ন্ড ম্যান' বা 'সুপার ম্যান', এই শব্দবন্ধই ছবির ভিত। ফ্রেডরিক নিটশের এই তত্ত্বের যুগে যুগে সরলীকরণ করা হলেও এই ছবির ক্ষেত্রে তা থেকে বিরত থেকেছেন পরিচালক। বোঝাতে চেয়েছেন, সাধারণ মানুষই পারে অবক্ষয় আটকাতে। উপরওয়ালা এক্ষেত্রে অক্ষম, মৃত। ভিঞ্চিদা'র সঙ্গে আলাপচারিতায় শব্দটির প্রয়োগ করে আদি বোস। অর্থাৎ কোনও অতিমানব নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করা অন্যায়কারীকে সাজা দেবে মানুষই।
থ্রিলারের প্রশ্নে বরাবরই ভাল মার্কস নিয়ে পাশ করেন। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। নিজস্ব ছাপ বজায় রেখেছেন সৃজিত। পরিসর ছোট হলেও অনির্বাণ, ঋদ্ধি ও সোহিনীর অভিনয় ভাল। ঋত্বিক চক্রবর্তী, কী ভীষণ সাবলীল, সাধারণ। অন্যরকম রুদ্রনীল। সৃজিতের কথা টেনে বলতে হয়, এই ছবিতে তিনি ছাড়া অন্য কেউ চরিত্রটির প্রতি 'জাস্টিস' করতে পারতেন না। তবে সৃজিত জানেন, তাঁর ইউএসপি কোথায়। বিরতি নেওয়ার ফ্রেমটাই ছক্কা হাঁকাবে।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের আবহসঙ্গীত, অনুপমের সঙ্গীত পরিচালনা ও নোবেলের কণ্ঠ, ছবির ডায়ালগ, ক্যামেরা, সবটাই অনবদ্য। মনে ধরবে ডিটেলিং, চরিত্রানুযায়ী ঋদ্ধির ঘরের পোস্টার, উত্তর কলকাতায় বাড়ি হলে ব্যাকগ্রাউন্ডে রাস্তার ফেরিওয়ালার গলা, রাতে টিকটিকির শব্দ, সবটাই। কিন্তু মাঝে মাঝে সেই পরিচালক সুলভ ফ্রেমই একঘেয়েমি আনতে পারে। ধৈর্যচ্যুতির ফলে উসখুস করতে পারেন কিছু জায়গায়, সেগুলো আর একটু স্বল্প দৈর্ঘ্যের হলেও ক্ষতি ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত, টানটান উত্তেজনার বশে হাতের পপকর্নটা শেষ না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।