লকডাউনের মধ্যেই শিথিল হয়েছে নিয়ম। চালু হয়ে গিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি অফিস। ৮ জুন থেকে খুলেছে শপিং মল-রেস্তোরাঁ। আগামীকাল, ১০ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা সিনেমা-সিরিয়াল ও ওয়েব সিরিজের শুটিং। কিন্তু ৮ জুন সন্ধ্যারাতে আর্টিস্টস ফোরামের পাঠানো বার্তা অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত নতুন নিয়মাবলী নিয়ে কোনও সই করা গাইডলাইন এসে পৌঁছয়নি ফোরামের হাতে। তাই শিল্পীরা ১০ জুন থেকে ধারাবাহিকের শুটিংয়ে যাবেন কি না সেই বিষয়টি তাঁদের নিজেদেরই বিবেচনা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছে ফোরাম। পাশাপাশি ফোরামের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনাগুলিও প্রকাশ করা হয়েছে ফোরামের সোশাল মিডিয়া পেজে।
বিগত কয়েকদিন ধরেই চলছে টলি ও টেলিপাড়ায় শুটিং শুরুর প্রস্তুতি। শুটিং ফ্লোরগুলি পরিষ্কার করা ও স্যানিটাইজ করার কাজ চলছে। ঠিক কী কী নতুন নিয়মাবলী মেনে শুটিং চালু হবে বাংলায়, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ৪ জুন। টেলিপাড়ার একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের খবর ছিল, ওই মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু বিষয়ে সহমত হননি। তাই সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সই করা নতুন নির্দেশিকা এখনও আর্টিস্টস ফোরামের হাতে আসেনি। সোমবার সন্ধ্যারাতে, সদস্যদের পাঠানো বার্তায় সেই কথাই উল্লেখ করল আর্টিস্টস ফোরাম, যা ৬ জুন প্রকাশিত একটি বার্তাতেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সচল টলিপাড়া! ১০ জুন থেকেই শুরু সিনেমা-ওয়েব সিরিজের শুটিং
৮ জুন সন্ধ্যারাতে আর্টিস্ট ফোরাম তাদের নথিভুক্ত শিল্পী-সদস্যদের কাছে যে এসএমএস বার্তাটি পাঠায় তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-
প্রিয় সদস্যবন্ধু,
অনুগ্রহ করে স্মরণে রাখুন, ১০ জুন শুটিং শুরু হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও স্বাক্ষর-সহ কোনও নির্দেশিকা এখনও পর্যন্ত আমাদের হাতে আসেনি। এই অবস্থায় আর্টিস্টস ফোরাম আপনাদের কোনওভাবে পরামর্শ দিতে বা শুটিং সংক্রান্ত দায়িত্ব নিতে অক্ষম। এটা আপনার জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন। তাই আমাদের অনুরোধ, নিজ দায়িত্বে সিদ্ধান্ত নিন অথবা অনুমতি ও স্বাক্ষর-সহ নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করুন। যদিও এখনও পর্যন্ত আমাদের জানা নেই, ঠিক কবে এই নির্দেশিকা পাওয়া যাবে।
ধন্যবাদান্তে
ডব্লিউবিএমপিএএফ
এই বার্তাটি সন্ধ্যারাতে ফোরামের সদস্যদের কাছে পৌঁছনোর পরে বেশ খানিকটা চিন্তিত শিল্পীরা। অনেকে সোশাল মিডিয়াতেও এই বার্তাটি প্রকাশ করে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। এই প্রসঙ্গে ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক সপ্তর্ষি রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, ''আমরা তো একটি ইলেক্টেড বডি, আমাদের ৩০০০ সদস্যের স্বার্থটা আমাদেরই দেখতে হবে। শুটিং শুরু করার নতুন নির্দেশিকা নিয়ে চারটি পক্ষের বৈঠক হয়েছিল-- চ্যানেল, প্রযোজক, ফেডারেশন ও আর্টিস্টস ফোরাম। এই চারটি পক্ষের সম্মতিক্রমে তৈরি গাইডলাইনে চারটি পক্ষেরই সই থাকতে হবে। যতক্ষণ না সই করা সেই গাইডলাইন আমরা হাতে পাচ্ছি, ততক্ষণ শুধুমাত্র মুখের কথায় তো আমরা আমাদের সদস্যদের শুটিংয়ের বিষয়ে কোনও গাইডলাইন দিতে পারি না। আমরা তাই আমাদের অসহায়তার কথা সদস্যদের জানাতে বাধ্য হলাম।'' পাশাপাশি কী কী প্রস্তাবনা রয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকে, সেই কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। দেখতে পারেন নীচের এমবেড লিঙ্কটি--
যেহেতু শুটিং করতে গিয়ে যে কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন হলে ফোরামের সদস্য শিল্পীরা ফোরামকেই বিষয়টি জানান এবং ফোরাম মধ্যস্থতা করে সমাধান বার করার চেষ্টা করে, তাই ফোরামের সদস্য-শিল্পীরা ফোরামের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। লকডাউন চলাকালীন যতদিন না পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে শুটিং শুরু করার অনুমতি এসেছে, ততদিন ফোরাম বার বার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে যে সরকার অনুমতি না দিলে ফোরাম তার সদস্যদের শুটিংয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেবে না।
৪ জুন চারটি পক্ষের প্রথম বৈঠকের পরেও যে সই করা গাইডলাইন ফোরামের হাতে এসে পৌঁছয়নি, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৬ জুন ফোরামের সোশাল মিডিয়া পেজ-এ। ওই দিন একটি বার্তায় জানানো হয়- ''আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এখনও দু-চারটে বিষয় নিয়ে জটিলতা না কাটায় আমরা এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ SOPটি প্রকাশ করতে পারছি না। আশা করি শীঘ্রই আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। এবং আমরা তৎক্ষণাৎ তা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। শুধু একটিই অনুরোধ, যতক্ষণ না ফোরাম SOP প্রকাশ করছে ততক্ষণ কারও কথায় বিভ্রান্ত হবেন না এবং অপরকে বিভ্রান্ত করবেন না। সাবধানে থাকুন।''
আরও পড়ুন: জীবাণুমু্ক্ত করা হল ‘কপালকুণ্ডলা’ ধারাবাহিকের সেট! টেলিপাড়া সরগরম প্রস্তুতিতে
রবিবার আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় টলিপাড়ায়, যেখানে সিনে ফেডারেশনের অন্তর্গত সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অরিন্দম শীল, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শিল্পীদের জন্য তৈরি হওয়া ২৫ লক্ষ টাকার জীবনবিমার তহবিলের বিষয়টিও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে ৫০ শতাংশ ব্যয় বহন করবেন প্রযোজকরা ও বাকি ৫০ শতাংশ ব্যয় শিল্পীদের।
ইতিমধ্যে যেমন বহু শিল্পী শুটিং ফ্লোরে যাওয়ার জন্য উন্মুখ, তেমনই অনেকে এখনই শুটিং শুরু করতে ভয় পাচ্ছেন। সোশাল মিডিয়াতেও তাঁরা প্রকাশ্যে আলোচনা করছেন বিষয়টি নিয়ে। এর মধ্যেই আর্টিস্টস ফোরাম জানিয়ে দিল তাদের অসহায়তার কথা। তাই ১০ জুন থেকেই টলি ও টেলিপাড়া পুরোপুরি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে কি না, সেই নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন