বলিউডের সুপারস্টার তিনি। জার্নি শুরু করেছিলেন টেলিভিশনের পর্দা থেকে। হাতে ছিল যৎসামান্য টাকা। আর বুকভরা স্বপ্ন। দিল্লি থেকে আরবসাগরের তীরে মুম্বইতে পাড়ি জমানোর লড়াইটা দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছিলেন একাই। মাঝে ৩০ টা বছর। তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। বলিউডের তিন খানের তালিকায় আজও শীর্ষে শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan)। নিজের যোগ্যতায়, মানবিকতায় দর্শক-অনুরাগীদের ভালবাসা কুড়িয়ে এসেছেন। যে রাস্তার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন, আজ সেখানেই শোভা পায় তাঁর উপার্জনের টাকায় গড়ে তোলা প্রাসাদোপম বাংলো মন্নত। প্রত্যেক ইদে, জন্মদিনে, উৎসবে সেখানে জমায়েত করেন কিং খান অনুরাগীরা। তবে আজ সেই বাংলো নিস্তব্ধ। ছেলে আরিয়ান খান (Aryan Khan) মাদককাণ্ডে জড়িয়ে জেল হেফাজতে। কষ্ট করে গড়ে তোলা বিগত তিন দশকের সমস্ত যশ-খ্যাতিতে একলহমায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। চিন্তায় বিনিদ্র রজনী কাটাতে হচ্ছে শাহরুখকে। ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন তিনি। তাঁর নাম-যশের জন্য যেন কখনও ভুগতে না হয় সন্তানদের।
বছর খানেক আগের এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ নিজেই জানিয়েছেন যে, "ভয় পাই, আমার নাম-যশের জন্য যেন কখনও আমার সন্তানদের ভুগতে না হয়।" সব বাবা-মায়েরাই চান, তাঁদের সন্তান যেন দুধে-ভাতে থাকে। শাহরুখের কাছে তেমনই। তাঁর তিন সন্তান তাঁর হৃদয়ের টুকরো। সেই সাক্ষাৎকারে কিং খান বলেছিলেন, "সন্তান পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে আমার কাছে আমার শরীরের থেকে হৃদয়ের একটা টুকরোকে বাইরে হাঁটতে দেওয়া। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আমার সম্পর্ককে আমি এভাবেই পর্যালোচনা করি। যদি আমার খুব কাছের এক বন্ধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন, আর তাঁর দিকে চলন্ত গাড়ি ছুটে আসে, আমি সবার আগে ঝাঁপ দিয়ে তাঁকে বাঁচাব। এমনকী, গৌরী হোক কিংবা আমার বোন, তাঁদের সঙ্গেও যদি এমন ঘটনা ঘটে, আমি দু'বার ভাবব না, ঝাঁপ দিতে। নিজে আঘাত পাওয়ার চিন্তাই মাথায় আসবে না।"
এরপরই সেই কথোপকথনে তিনি যোগ করেন, "আর সেটা যদি আমার সন্তানদের সঙ্গে হয়ে থাকে, তাহলে নিজেই ওই চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যাব। কিন্তু ওদের ওপর কোনও আঁচ আসতে দেব না। আমার সবথেকে বড় ভয়, আমার নাম-ডাকের জন্য কখনও ওদের জীবন নষ্ট না হয়। আমি সেটা কখনও হতে দেব না। আমার ছায়ার বাইরেও যাতে ওরা স্বচ্ছ্বলভাবে চলতে পারে, তার ব্যবস্থা করা আমার কর্তব্য।" "আমার কাছে সবার আগে আমার সন্তানরা, বাকি সব পরে", বলেছিলেন শাহরুখ খান। আর আজ যখন ছেলে আরিয়ান খান মাদককাণ্ডে জড়িয়ে জেলে, তখন শাহরুখের সেই পুরনো সাক্ষাৎকারের ভিডিও-ই আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। আগেভাগেই তিনি আঁচ করেছিলেন যে, তাঁর যশের প্রভাব পড়তে পারে ছেলে আরিয়ান, আব্রাম কিংবা মেয়ে সুহানার ওপর। কিন্তু সময় আর বিধির লিখন খণ্ডাবে কে?
বৃহস্পতিবার তাই না পেরেই জামিন মামলার শুনানির আগে আর্থার রোডের জেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ছেলে আরিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে। ছুঁতে পারেননি তাঁকে। জেলে কোভিড বিধি মানতে টেলি-ইন্টারকমেই কথা বলতে হয়েছে আরিয়ানের সঙ্গে। যত বড় সুপারস্টারই হোন না কেন, বাবার মন হাজার হোক, তাই সবকথার মাঝেই ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছেন, "ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া করছ তো?"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন