তিনি মহানয়িকা সুচিত্রা সেন। যাঁর ব্যক্তিগজীবন থেকে সিনেজগতে কাজের পরিসর নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই অনুরাগীদের। প্রয়াণের পরও আজও বাঙালির কাছে তিনি দৌর্দন্ডপ্রতাপ 'ম্যাডাম'। যার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত গোটা বাংলা সিনেইন্ডাস্ট্রি তো বটেই এমনকী মহানায়ক উত্তমকুমার নিজেও। সেই সুচিত্রা সেনের কাছ থেকেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল রাজ কাপুরকে।
রাজ কাপুর। পৃথ্বীরাজ কাপুর, RK স্টুডিওর তৎকালীন যোগ্য উত্তরসূরী। ভারতীয় সিনেইন্ডাস্ট্রি তো বটেই এমনকী আন্তর্জাতিক সিনেদুনিয়াতেও তাঁর কাজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। বলিউডের নায়িকারা মুখিয়ে থাকতেন তাঁর বিপরীতে জুটি বাঁধার জন্য। রাজ কাপুরের ব্যক্তিগতজীবনেও কম সুন্দরী নায়িকারা তাঁর প্রেমে পড়েননি। সম্পর্কের ধাঁধায় জড়িয়েও বহাল তবিয়তে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করেছেন কাপুর-নন্দন। সেই রাজ কাপুরের প্রস্তাবই কিনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন টলিউড মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।
পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে তখন ম্যাডাম বাংলা সিনেপর্দা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেরিয়ারে ইতি টানার পরও পর্দার অন্তরালে চলে যান। কেন? সেই রহস্য আজও অধরা। কয়েক দশক লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা সেই অভিনেত্রীকে অনেকেই হলিউড স্টার গ্রেটা গার্বোর সঙ্গে তুলনা টানেন। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি সুচিত্রা সেনের ডাক পড়েছিল বলিউড থেকেও। বেশ কয়েকটা হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ১৯৫৫ সালে দিলীপ কুমারের 'দেবদাস'-এর পর গুলজারের 'আঁধি'তে সবথেকে বেশি নজর কাড়েন। যে চরিত্র কিনা ইন্দিরা গান্ধীর জীবন অবলম্বনে সাজানো হয়েছিল। তবে হিন্দি হোক কিংবা বাংলা, যে কোনও ভাষায় সিনেমা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রমাদেবী ছিলেন বেশ 'চুজি'। পছন্দ না হলে মুখের ওপর না বলে দিতেন। একবার রাজ কাপুরের সঙ্গে এরকম এক কান্ড ঘটে!
<আরও পড়ুন: মেয়ের মুখ দেখালেন বিপাশা, মিষ্টি গুবলু দেবীকে ‘আদর-বাসা’ অভিষেক, দিয়া, মালাইকাদের>
মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তখন রাজ করা রাজ কাপুরের সিনেমার প্রস্তাব তৎক্ষণাৎ না করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "পুরুষদের সৌন্দর্য আমি দেখি না। দেখি ওঁদের বুদ্ধিমত্তা এবং তুখড় বাচনভঙ্গী। একবার আমার বাড়িতে এসেছিলেন রাজ কাপুর। একটা সিনেমার লিড রোলে আমাকে কাস্ট করবেন, সেই প্রস্তাব নিয়ে। আমি চেয়ারে বসতে যেতেই, আচমকাই আমার পায়ের নিচে এসে বসে পড়েন উনি। হাতে ফুলের বোকে নিয়ে সিনেমার লিড চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দেন। আমি তৎক্ষণাৎ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলাম। ওঁর ব্যক্তিত্ব আমার পছন্দ হয়নি। আমার পায়ের সামনে বসে যে আচরণ করেছিলেন, তা ভাল লাগেনি।"
তবে 'আঁধি' কোস্টার সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের ভাল বন্ধুত্ব ছিল। একজন অভিনেতা তথা মানুষ হিসেবে সঞ্জীবকে খুব পছন্দ করতেন রমাদেবী।
তিনি কলকাতায় আসলেই সুচিত্রা সেনের বাড়িতে দেখা করে যেতেন। এই ছবির পর আর মাত্র ২টো ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা- 'দত্তা' ও 'প্রণয় পাশা'। এরপর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আচমকাই উধাও হয়ে যান রমাদেবী। 'আমার বন্ধু সুচিত্রা সেন' বইয়ের লেখক অমিতাভ চৌধুরিই এই অজানা তথ্য ফাঁস করেন।