অলংকার যোশী, যিনি শিশুশিল্পী হিসেবে 'মাস্টার অলংকার' নামে পরিচিত ছিলেন, ১৯৭০-এর দশকে হিন্দি সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা এই অভিনেতা দিওয়ার (১৯৭৫), মজবুর (১৯৭৪), এবং সীতা অর গীতা (১৯৭২)-র মতো সিনেমায় তাঁর স্মরণীয় পারফরম্যান্স আজও দর্শকের মনে গেঁথে রয়েছে।
অলংকার হলেন অভিনেত্রী পল্লবী যোশীর ভাই এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রীর শ্যালক। সম্প্রতি ফ্রাইডে টকিজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, পল্লবী শৈশবের এক মূল্যবান মুহূর্ত স্মরণ করেন, যখন তারা যশ চোপড়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাতেই অলংকারকে দিওয়ার-এ ছোট বিজয়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়। পল্লবী বলেন, "আমি, আমার ভাই এবং মা একসাথে যশজির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। অমিতজি তখনই আমার ভাইকে দেখে বলে ওঠেন, 'আরে, কেমন আছো?' তারপর যশজিকে অনুরোধ করেন অলংকারকে তাঁর ছোটবেলার চরিত্রে নেওয়ার জন্য।"
অলংকারের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাও প্রশংসার দাবি রাখে। অমিতাভ বচ্চনের একটি দৃশ্য – ‘ম্যায় ফেঁকে হুয়ে পয়সে নেহি উঠাতা’ – দেখার পর, অলংকার যশ চোপড়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি একইভাবে শার্টে গিঁট দিতে পারেন? এটি দেখিয়ে দেয় তার অভিনয় নিয়ে আগ্রহ এবং দক্ষতার গভীরতা। তবে, শৈশবের সাফল্য প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ধরা দেয়নি। পল্লবীর ভাষায়, "বড় হয়ে, অলংকারও অভিনয়ে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শৈশবে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, তা আর পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি পরিচালনা ও প্রযোজনার দিকে মন দেন এবং একজন সফল মারাঠি সিনেনির্মাতা হয়ে ওঠেন। যদিও ক্যামেরার পেছনে যাওয়ার ইচ্ছা তার ছিল না।"
অভিনয় ছাড়াও, অলংকার পড়াশোনাকে সমান গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সফটওয়্যার প্রোগ্রামিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। দুই বছর একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করার পর, এক বন্ধুর সঙ্গে নিজের কোম্পানি গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি ৩৫ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং সেখানে সফলভাবেই জীবনযাপন করছেন।
আজ অলংকার যোশীর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা, বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী। তাঁর তিন সন্তান- এক ছেলে ও যমজ কন্যা। বড় মেয়ে অনুজা যোশী নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং মুম্বাইতে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি অ্যামাজন এমএক্স প্লেয়ারের থ্রিলার ওয়েব সিরিজ হ্যালো মিনিতে অভিনয় করেছেন। ছেলে সংগীতের প্রতি আগ্রহী এবং একজন গায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।তার বড় বোন পদ্মশ্রী যোশীও মারাঠি সিনেমায় একজন অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত।
২০২৪ সালে টাইমস নাউ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অলংকার বলেন, “আমি নিজেকে একজন প্রাক্তন ক্রীড়াবিদের মতো ভাবি, যে অভিনয় এবং তার সাফল্যের জন্য মনে রাখা হয়। এখন আর খেলছি না, তবে স্মৃতিগুলো আমার সঙ্গেই আছে।” লাইমলাইট মিস করেন কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “না, খুব একটা মিস করি না। কারণ আমি সবসময়ই লাইমলাইটের কাছাকাছি থেকেছি।”