সোমবার ‘সংসার সীমান্তে’র পরপারের উদ্দেশে যাত্রা করলেন তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar's Death)। স্বামীর প্রয়াণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সন্ধ্যা রায়। কতগুলো বছর একে-অপরকে লালন করেছেন। তরুণ-সন্ধ্যার সম্পর্ক তো শুধু আর স্বামী-স্ত্রীর ছিল না, সংসারের গণ্ডী থেকে বেরিয়ে সেদিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, তাঁদের সম্পর্ক ছিল গুরু-শিষ্যেরও। তরুণের হাত ধরেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি চিনেছিল এক অন্য সন্ধ্যাকে। যে সন্ধ্যা কখনও বাংলা ছায়াছবির পরিবারের দায়িত্বশীল বৌমা, আবার কখনও দুঃখিনী স্ত্রী, আবার কখনও বা জনমদুখিনী মা। সন্ধ্যা রায় (Actress Sandhya Roy) তাঁর ফিল্মি কেরিয়ারের সবথেকে বেশি ছবি করেছেন তরুণ মজুমদারের পরিচালনাতেই।
আজ সেই গুরুবিয়োগে অঝোরে কেঁদে চলেছেন স্বামীহারা স্ত্রী (Sandhya Roy-Tarun Majumdar)। ধরা গলাতেই সন্ধ্যা জানালেন, "সারাজীবন শুঝু কাজ করে গেলেন। কাজের প্রতি এমন নিষ্ঠা, মনোযোগ আর কারও আছে কিনা, বলতে পারব না! বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে একাধিক শিল্পীকে গড়েছেন। কাজের সময় খাওয়াদাওয়া, আড্ডা এসব তাঁর জীবনে ছিল দূরঅস্ত। শেষসময়েও অসুস্থ হয়ে পড়লেন সেই কাজ করতে গিয়েই। কাজের ব্যবস্তার জন্য কতদিন ওঁর মুখটা দেখতে পাইনি…।"
স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বর্ষীয়াণ অভিনেত্রী বললেন, "দিন কয়েক আগেও ঝাড়গ্রামে লোকেশন দেখতে গিয়েছিলেন। লেখান থেকে ফিরেই হঠাৎ অসুস্থ। হাসপাতালেও দেখতে গিয়েছিলাম। অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই ঈশ্বরের কাছে দিনরাত প্রার্থনা করতাম। যেন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়? উনি আর নেই… আর কী বলব আমি?", কথাগুলো বলতে বলতে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন সন্ধ্যা রায়।
<আরও পড়ুন: ‘তরুণদা’কে হারিয়ে শোকবিহ্বল ঋতুপর্ণা, ‘কড়া শিক্ষক’কে মিস করবেন শতাব্দী>
সেটের প্রেম পরিণতি পেয়েছিল ছাদনাতলায়। নিঃসন্তান দম্পতি হলেও কাজের সূত্রই তাঁদের বেঁধে রেখছিল একসুতোয়। কত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একসঙ্গে গড়েছেন দুজনে। তরুণ-সন্ধ্যার (Tarun-Sandhya) প্রশিক্ষণে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছিল দেবশ্রী রায়, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে নয়না, তাপস পালদের মতো একঝাঁক তারকাকে। উত্তরবঙ্গে কতবার দাদা অরুণ মজুমদারের মেটেলির বাড়িতে তরুণ-সন্ধ্যা একসঙ্গে গিয়েছেন ঘুরতে। সেসব আজ স্মৃতি ফ্রেমে বন্দি। স্বামী তরুণ মজুমদারের মৃত্যুশোকে কথা বলতে পারছেন না সন্ধ্যা রায়। বুজে আসছে তাঁর গলা।
<আরও পড়ুন তনুকাকু কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখতেন আমাকে: মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়>
বর্ষীয়াণ পরিচালকের প্রয়াণের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়াতেও। ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ থেকে শতাব্দী-দেবশ্রী প্রত্যেকের মুখেই অভিভাবক হারানোর কথা। আজ তাপস পাল বেঁচে থাকলে 'তনুদা'-বিয়োগে তিনিও যে শোকে মুহ্যমান হতেন, তা বোধহয় আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন