বাংলা টেলিভিশন মাধ্যমে মহিলা নেপথ্যকর্মীদের সংখ্যা প্রচুর। বিশেষ করে গল্প-চিত্রনাট্য রচনা ও কার্যনির্বাহী প্রযোজনার কাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারাই অগ্রগণ্য। প্রথম সারির চারটি চ্যানেলে যে সর্বোচ্চ পদগুলি রয়েছে, সেখানেও মহিলাদেরই প্রাধান্য বেশি। অর্থাৎ এই জগতের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা-পরিচালক-চিত্রগ্রাহক-সম্পাদক-প্রযোজনা সহায়করা, লিঙ্গ নির্বিশেষে, পেশাগত ভাবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হন মহিলাদের দ্বারা। একে কিছুটা হলেও নারীর ক্ষমতায়ন বলা যায়। কারণ বাংলা ছবির জগতে কিন্তু চিত্রটা ঠিক উল্টো।
বাংলা টেলিজগতে এমন অনেক নারীরা রয়েছেন যাঁরা বিগত দুদশক অথবা তারও বেশি সময় ধরে এই মাধ্যমের এক একটি স্তম্ভ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের হাতে যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ঘটেছে, তেমনই তাঁরা বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী-চিত্রনাট্যকার-পরিচালকের পেশাগত জীবনের ভিত তৈরি করে দিয়েছেন। তেমন তিন নারীর কথা নিয়েই আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এই বিশেষ প্রতিবেদন-- লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, সাহানা দত্ত এবং স্নিগ্ধা বসু।
আরও পড়ুন: নারী শরীর বিজ্ঞাপিত হবে, অথচ পিরিয়ড নিয়ে এখনও ফিসফাস
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়
প্রযোজক-পরিচালক, ম্যাজিক মোমেন্টস প্রযোজনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার এবং চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কর্মজীবন প্রায় দু'দশকের। অধ্যাপনার পাশাপাশি টেলিভিশনের নন-ফিকশন অনুষ্ঠানের জন্য লেখালেখি শুরু করেন মিলেনিয়ামের গোড়ার দিক থেকেই। কিন্তু একটি ধারাবাহিক লেখার অনুরোধ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই ধারাবাহিকটি ছিল 'সোনার হরিণ'। ''এই কাজটার আগে আমারও টেলিভিশন নিয়ে একটা উন্নাসিকতা ছিল। বিশেষ করে ফিকশন শুরু হলে আমি নিজেই টিভি বন্ধ করে দিতাম। 'সোনার হরিণ' এতটাই সফল হয় এবং তার পরে এত কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে যে একটা সময় পরে অধ্যাপনা ছেড়ে এই কাজটা শুরু করি। আর এখন তো টেলিভিশন বাদ দিয়ে কিছু ভাবতে পারি না। ২০০৯ সালে আমরা 'ম্যাজিক মোমেন্টস' তৈরি করি। তিনটে প্রযোজনার কথা বলব, যে তিনটেই চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে এবং আমাদের কাছে'', বলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, ''প্রথম ইটিভি-র জন্য 'বিন্নি ধানের খই'। তখন একটা ধারণা ছিল যে হিন্দু-মুসলিম প্রেমের গল্প মানুষ দেখবে না। ইটিভি-র পরে জি বাংলা-র কাছে নিজেদের প্রমাণ করতে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল 'কেয়া পাতার নৌকা'।''
'কেয়া পাতার নৌকা' বাংলা টেলিভিশনের একটি কাল্ট ধারাবাহিক। ঠিক তেমনই ট্রেন্ডসেটার ধারাবাহিক ছিল 'ইষ্টিকুটুম' যা কি না স্টার জলসা-য় এই সংস্থার প্রথম ধারাবাহিক। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যে শুধুমাত্র প্রতিভাবান চিত্রনাট্যকার-প্রযোজক নন, পাশাপাশি একজন স্টারমেকারও, তার একটি বড় উদাহরণ এই ধারাবাহিক। 'ইচ্ছেনদী', 'কুসুমদোলা' থেকে আজকের 'শ্রীময়ী', 'মোহর', 'কোড়া পাখি'-- তাঁর লেখনীতে বরাবর উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের কথা।
বহু তারকার জন্ম হয়েছে তাঁর হাতে। যেমন ধরা যাক বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের কথা। 'ইচ্ছেনদী' ও 'ফাগুন বউ'-এর নায়ক বিক্রম জীবনের প্রথম অডিশন দিয়েছিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। ''সাত পাকে বাঁধা'-র অডিশন দিতে এসে লীনাদির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। আমার তখন বাংলা খুব খারাপ ছিল। খুব টেনশনে ছিলাম। লীনাদি অডিশনের আগে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে রাজা চরিত্রটা ঠিক কেমন। সেই তখন থেকেই ওনার স্নেহ পেয়েছি। লীনাদি প্রথম সাত মাস 'সাত পাকে বাঁধা' লিখেছিলেন। আর এই প্রথম কাজেই দর্শকের প্রচুর ভালবাসা পেয়েছিলাম। এটা সবার কপালে থাকে না'', বলেন বিক্রম, ''লীনাদির লেখনীর জোর যে কতটা সেটা বুঝেছিলাম 'ইচ্ছেনদী' করতে এসে। ততদিনে আর একটু বোঝার ক্ষমতা বেড়েছে। ওঁর দক্ষতা আর ওঁর কাজের ইমপ্যাক্ট এতটাই শক্তিশালী... আমার কেরিয়ারে যত ভালবাসা পেয়েছি, যত জনপ্রিয়তা হয়েছে 'ইচ্ছেনদী' তার একটা বড় কারণ। আমি চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞ ওঁর কাছে। মায়ের জন্য যে ভালবাসাটা থাকে, তার সমতুল্য যে শ্রদ্ধা, ততটাই শ্রদ্ধা করি আমি এই মানুষটিকে। আমার জীবনের অত্যন্ত কঠিন সময়েও লীনাদি আমার পাশে থেকেছেন। এখনও যে আমি দাঁড়িয়ে আছি, কেরিয়ারের স্বপ্নটা দেখে চলেছি, ভালবাসা পেয়ে চলেছি, সেটা লীনাদির জন্য।''
সাহানা দত্ত
দুটি ধারাবাহিকের নাম উল্লেখ করলেই পাঠক বুঝবেন এঁর প্রতিভার ব্যাপ্তি-- 'দুর্গা' এবং 'ভুতু'। এই দুটি ধারাবাহিকই বাংলা টেলিভিশনে কাল্ট হয়ে রয়েছে। আরও বহু ধারাবাহিক রয়েছে তাঁর প্রায় দু'দশকের কর্মজীবনে। বর্তমানে এসভিএফ এবং হইচই-এর কনটেন্ট হেড সাহানা দত্ত বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে প্রতিভাময়ী চিত্রনাট্যকারদের একজন যিনি বার বার পাথব্রেকিং ভাবনা এনেছেন ধারাবাহিকে। বাংলা ধারাবাহিকে দর্শক শুধুই শাশুড়ি-বউমার গল্প দেখেন, এমন অভিযোগ যখন ঘনিয়ে ওঠে, তখনই তিনি নিয়ে আসেন 'গোয়েন্দা গিন্নি' এবং 'জয় কালী কলকত্তাওয়ালী'-র মতো ধারাবাহিক।
আরও পড়ুন: ভালোবাসাতে না পারলে কোনও চরিত্রই ক্লিক করবে না: সাহানা
আবার টেলিপর্দায় প্রেম-বিয়ের গল্প যখন দর্শকের প্রায় শ্বাসরোধ করে তুলছে, তখনই তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত হয় 'পটল কুমার গানওয়ালা'। তিনি কত বড় স্টারমেকার, তার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় উদাহরণ শ্রুতি দাস, 'ত্রিনয়নী'-নায়িকা। তাঁর জহুরির চোখ ও লেখনী কয়েক মাসেই একজন ডেবিউ অভিনেত্রীকে টেলিভিশনের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন করে তুলেছে। ঠিক সেভাবেই ২০১০ সালে স্টার জলসা-র সূচনার সময়ে পায়েল দে-র মধ্যে দুর্গা-কে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি।
''আমাকে যে মানুষ চিনতে শুরু করেছে তার মূল কারণ কিন্তু সাহানাদি। 'দুর্গা' ধারাবাহিকের চরিত্রটা উনি কনসিভ করেছিলেন বলেই মানুষ আজ পায়েলকে চেনে। আর চরিত্রটা যে কতটা ছাপ রেখেছিল মানুষের মনে, তার প্রমাণ দশ বছর বাদেও আবার আমি ওই চরিত্রে। আজ পর্যন্ত টেলিভিশনে প্রোটাগনিস্ট বা অ্যান্টাগনিস্ট, যত চরিত্র করেছি, সবটাই সাহানাদির লেখা-- 'দুর্গা', 'বেহুলা', 'বধূ কোন আলো লাগল চোখে', 'তবু মনে রেখো'... আর এখন 'চুনি পান্না'', বলেন পায়েল, ''সাহানাদি ভরসা দিয়েছেন বলেই জীবনে দুবার আমি নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পেরেছি। 'তবু মনে রেখো'-তে প্রথম নেগেটিভ করি আর 'চুনি পান্না'-তে প্রথম একটু কমিক চরিত্র করলাম। আমাকে যে মানুষ কমিক চরিত্রে গ্রহণ করবেন, এটা ভাবতেও পারিনি। আমার ১৪ বছরের অভিনয় জীবনে ৯ বছর আমি কাজ করেছি সাহানাদির সঙ্গে।''
ঠিক সেভাবেই কুড়ির কোঠার এক অভিনেতাকে তিনি রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব এক যুবকের চরিত্রে। অভিনেতার নাম জিতু কমল ও ধারাবাহিকের নাম-- 'রাগে অনুরাগে'। ''আমি তখন একটা অন্য কাজের জন্য ওয়ার্কশপ করছিলাম রাজদার (রাজ চক্রবর্তী) হাউসে। সাহানাদি তখন জি বাংলা-র কনটেন্ট হেড ছিলেন। সাহানাদি দেখতাম, রোজ আসতেন, আমাদের ওয়ার্কশপ দেখতেন আর চলে যেতেন'', বলেন জিতু, ''হঠাৎ একদিন শুনলাম উনি মল্লার চরিত্রের জন্য আমাকে ভেবেছেন। কেরিয়ারের শুরুর দিকেই এরকম বয়স্ক চরিত্র করব না বলে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম। ১০-১২ দিন ফোন বন্ধ করে বসেছিলাম। পরে আমার এক দাদা আমাকে রাজি করায়। কিন্তু কাজটা শুরু হওয়ার পরে এতটাই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম চরিত্রটার যে রাত-দিন পড়ে থাকতাম, শুটিংয়ের পরে এডিট দেখতাম। আর ওই চরিত্রটা এত জনপ্রিয় হয়েছিল... আজও মানুষ আমাকে দেখলে মল্লারের কথা বলে। আমি বলব সাহানাদি আমাকে অভিনেতা হিসেবে মান্যতা দিয়েছেন। এমন নয় যে রোজ কথা বলি কিন্তু কঠিন কোনও চরিত্র লিখলে, হয় আমাকে ডাকেন নয়তো আমি জানতে পারি যে কাস্টিংয়ের সময় আমার কথা তুলেছেন। এটা আমার পেশাগত জীবনের একটা বড় প্রাপ্তি অবশ্যই।''
স্নিগ্ধা বসু
আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা একজন শিল্পী যখন সিনেমার প্রোডাকশন ডিজাইনিংয়ে আসেন, তখন তাঁর কাজের ধরনটাই আলাদা হয়। কিন্তু বলিউডের একজন প্রথম সারির প্রোডাকশন ডিজাইনার যখন বাংলা ধারাবাহিক প্রযোজনা করতে কলকাতায় অফিস খোলেন, তখন তার মধ্যে যে কী অদম্য এক প্যাশন থাকে এই জগতের প্রতি তা সহজেই অনুমেয়। স্নিগ্ধা বসু-সুমিত বসু ও রজনীশ হেডাও-এর কোম্পানি অ্যাক্রোপলিস হল বলিউডের প্রথম প্রোডাকশন ডিজাইনিং কোম্পানি। তার আগে ব্যক্তিগত স্তরে বিভিন্ন পেশাদারেরা এই কাজ করতেন। কিন্তু অ্যাক্রোপলিস প্রথম কোম্পানি স্ট্রাকচার নিয়ে আসে বলিউড ছবির প্রোডাকশন ডিজাইনিংয়ে অর্থাৎ শুটিংয়ের সেট-ব্যাকড্রপ ও অ্যাম্বিয়েন্স সৃষ্টিতে।
'ভাগ মিলখা ভাগ', 'গুজারিশ', 'সুলতান', 'ঠগস অফ হিন্দোস্তান', 'ককটেল', 'তামাশা', 'রকস্টার', 'ধুম থ্রি' থেকে সাম্প্রতিক '৮৩'-- বলিউডের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবিগুলির প্রায় বেশিরভাগেরই প্রোডাকশন ডিজাইনিং স্নিগ্ধা বসু-সুমিত বসু ও রজনীশ হেডাওয়ের এই কোম্পানির। এমন একটি মানুষ যখন কলকাতায় স্টুডিওতে ঢোকেন, তখন তিনি সবার খুব কাছের স্নিগ্ধাদি। বছর দশেক আগে অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের জন্ম। বাংলা ধারাবাহিক প্রযোজনা দিয়ে শুরু হয় পথচলা। গত বছরই এই প্রযোজনা সংস্থার প্রথম ছবি 'নগরকীর্তন' জাতীয় পুরস্কার এনেছে।
'অগ্নিপরীক্ষা' দিয়ে শুরু হয়েছিল স্নিগ্ধা বসু ও অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের বাংলা টেলিভিশনের যাত্রা। তার পর একের পর এক স্মরণীয় প্রযোজনা-- 'রাশি', 'বধূবরণ', 'মিলনতিথি', 'আমার দুর্গা' থেকে সাম্প্রতিক 'বকুলকথা' ও এখন 'ফিরকি'। তাঁর সংস্থার সব ধারাবাহিকেই নারীর ক্ষমতায়ন এসেছে নানা ভাবে। শুধু তাই নয়, তিনিও নতুন প্রজন্মের মধ্যে থেকে ঠিক খুঁজে বার করেন সেই সব প্রতিভাদের যাঁদের মধ্যে তারকা হওয়ার সব রসদই মজুত রয়েছে। 'রাশি'-তে গীতশ্রী রায় ও 'মিলনতিথি'-তে ঊষসী রায়-এর পথচলা শুরু তাঁর হাত ধরেই।
''স্নিগ্ধাদি আমার কাছে আমার মায়ের মতো। আমার কেরিয়ারের প্রথম থেকে উনি মায়ের মতো আমাকে গাইড করতে করতে এসেছেন। আমার মা-বাবা প্রচণ্ড নিশ্চিন্ত ছিল যে স্নিগ্ধাদির মতো একজন মানুষের সান্নিধ্যে আমি আসতে পেরেছি এবং উনি মাথার উপরে আছেন'', বলেন ঊষসী, ''যতবার আমার কোনও প্রবলেম হয়েছে, সেটা আমার কাজের জায়গায় হোক বা পার্সোনাল লাইফে হোক, উনি আমাকে গাইড করেছেন, আমাকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন বলা যায়। আমি যেমন ওনাকে ভয় পাই, তেমন ওনাকে শ্রদ্ধা করি, ততটাই ওনাকে ভালবাসি। এমনি সময়ে যখন আমরা কথা বলি, দুজনকে দেখলে মনে হবে যে দুজন বন্ধু কথা বলছে, এতটাই মিষ্টি আমাদের বন্ডিংটা। দুটো ব্যাক টু ব্যাক প্রজেক্ট করার পরে, যেদিন 'বকুলকথা'-র লাস্ট ডে শুট ছিল সেদিন আমি খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম, কাঁদছিলাম। স্নিগ্ধাদিও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন। স্নিগ্ধাদি বলেছিলেন, আমি চাইব যাতে নেক্সট প্রজেক্টও তুই আমার সঙ্গেই করিস। যাই হোক, নেক্সট প্রজেক্ট হয়তো করা হল না কিন্তু ভবিষ্যতে স্নিগ্ধাদির সঙ্গে কবে আবার কাজ করতে পারব, সেই অপেক্ষায় থাকব।''
আরও পড়ুন: শাহিনবাগের দাদিরা লিখছেন ফেমিনিজমের চতুর্থ অধ্যায়
প্রযোজনার সমস্ত খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখেন তিনি, জানালেন অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের ডিরেক্টর সানি ঘোষ রায়। ''কার কেমন লুক হবে, কেউ শাড়ি নিয়ে যেতে ভুল গেল কি না থেকে শুরু করে সেটের প্রত্যেকটি ডিটেলের দিকে ওঁর নজর। এডিট থেকে স্ক্রিপ্ট, লোকেশন সবটা খেয়াল রাখেন, আর প্রোডাকশন ডিজাইনটা নিজে করেন সব ধারাবাহিকে। এমন মানুষ এই জগতে আর একজনকেই দেখেছি, তিনি হলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ'', বলেন সানি। তবে স্নিগ্ধা বসুর ব্যক্তিত্বের আরও একটি দিকের কথা জানান জিতু কমল। কিছু মতবিরোধের কারণে একটা সময় 'মিলনতিথি' থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সেই অভিনেতাকেই পরের প্রজেক্টে কাস্টিং করেছিলেন স্নিগ্ধা বসু। সম্পূর্ণ ইগোবিহীন একজন মগ্ন পেশাদার মানুষই এমনটা করতে পারেন।
এই তিন নারীই আজকের বাংলা টেলিজগতে তিন প্রেরণার উৎস। শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নন, বহু পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও অন্যান্য টেকনিশিয়ানরা এঁদের প্রযোজনায়, এঁদের সান্নিধ্যে থেকে কাজ শিখেছেন। এই তিন নারীকেই বহু পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনও চ্যালেঞ্জের সামনেই মাথা নত করেননি, বরং কঠিন সময়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন। তখন সময়ই যেন হাত ধরে তাঁদের আবার আলো-ঝলমল দিনের দিকে নিয়ে গিয়েছে। ঠিক সেই কারণেই তাঁরা আজীবন বাংলা টেলিজগতে চিরস্মরণীয় পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন।