/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/21/world-music-day-nilayan-chatterjee-shared-his-thoughts-on-music-and-success-in-bengali-cinema-2025-06-21-20-25-29.jpg)
নিজের মিউজিক ওয়ার্ল্ড নিয়ে যা বললেন নীলায়ন?
Nilayan Chatterjee on Music: কথায় বলে যে মানুষরা গান ভালোবাসে না, তাদের মধ্যে নাকি মাধুর্য নেই। গান ভালবাসে না এমন মানুষ সত্যিই আছে? সুখে হোক দুঃখে হোক অনুষ্ঠানে হোক উৎসবে হোক মানুষের সব থেকে বেশি, কিছু যদি ভালোলাগার হয় তবে সেটি গান। এমনকি নির্দিষ্ট উৎসবেও গান শুনলেই মানুষ বুঝতে পারেন যে আর তো হাতে গুনে কয়দিন। আজ বিশ্ব সংগীত দিবসের দিন, এমন এক সুরকারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার, যিনি বর্তমানে বাংলা সুপারস্টার দেবের খুব কাছের হয়ে উঠেছেন। সুরকার নিলায়ন চট্টোপাধ্যায়, একের পর এক ছবিতে ধামাকা দিয়ে চলেছেন। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা অনুপম রায়ের পর বাংলা সংগীত জগতে অন্যরকম কিছু করার চেষ্টা করছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই যোগ ছিল গানের সঙ্গে। মিউজিক করতে শুধু ভালোবাসতেন এমনটা নয়। মজার ছলে তিনি বললেন, লোকে এফডিতে টাকা জমায়। আর আমি গান জমাতাম। আর কী কী বললেন সুরকার?
১) মিউজিকের সঙ্গে কী করে জুড়লে?
মিউজিক এর বিষয়টা আমার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই রয়েছে। আমার বাবা সরকারি এমপ্লয়ি ছিল। উনি খুব ভালো ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বাবা খুব সুন্দর বাঁশি ও বাজাতেন এবং গানও গাইতেন। তাই, বাবার কাছ থেকে গান এবং বাঁশি দুটো শুনেই আমি বড় হয়েছি। ক্রিকেটও আমার মধ্যে ছিল। কিন্তু আমি যখন মাঠে ক্রিকেট খেলতাম, সেদিনই ভালো খেলতাম যেদিন আমার আশেপাশে আমার মন পছন্দের গান বাজানো হতো। এটা খুবই অদ্ভুত। অনেক হয়েছে যে শীতকালে সকালবেলা আমি ব্যাটিং করছি, চূড়ান্ত পরিমাণে ফার্স্ট বোলার বল করছে। কিন্তু হঠাৎ করে মাঠের পাশে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেখানে আমার একটা পছন্দের গান বাজতে শুরু করলে এবং আমি মনে মনে ভাবছি যে বোলার এবার তো তুই গেলি। আর তারপরে তো প্রথমবার মন ভাঙ্গার থেকে গান আরও জড়িয়ে গেল আমার সঙ্গে।
২) মিউজিক তোমাকে কী কী দিল?
মিউজিক আমার কাছে বন্ধুর মতো। ধীরে ধীরে আমার এই ভীষণ ভালো লাগার জায়গাটা যে আমার কাছে প্রফেশন হয়ে দাঁড়াবে, সেটা আমি ভাবিওনি। তখনকার দিনে বাংলা ব্যান্ড হিন্দি ব্যান্ড সব মিলিয়ে কবে যে বিষয়টা এতো সিরিয়াস হয়ে গেল আমি বুঝতে পারলাম না। মাঝখানে তো মিউজিক ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু, পরে আবার রেডিও জকির প্রফেশনের সময়, নতুন করে শুরু হল।
৩) দেবের বিশ্বস্ত সুরকার হয়ে কেমন লাগে?
আমি যখন রেডিওতে ছিলাম, তখন ইন্টারভিউতে দেব আসে। আমাকে একটা মিউজিকাল সেগমেন্ট করতে বলা হয়েছিল। আমি সেটা করেছিলাম। তখন দেব শুনে বলছে এটা কে বানিয়েছে? সবাই বলেছে নীল বানিয়েছে। দেব আমাকে এত বছর ধরে চেনে কিন্তু আমি যা মিউজিক করি সেটাও জানতো না। তখন আমি বললাম আমি তো ঢাকঢোল পিটিয়ে কোনদিনও কাউকে জানায়নি। মিউজিক আমি আমার জন্য করি। আমি অন্য কারো জন্য কোনদিনও গান বানাতাম না। আমি এটা বিশ্বাস করতাম যে লোকজন টাকা জমায়, কিন্তু আমি গান জমাই। লোকে টাকা ওড়ায়, আমি কোনদিনও গান ওড়াব। দেবের বিশ্বাস আমার উপর কাজ করছে কিনা আমি জানিনা। ও যখন দেখতে শুরু করল যে গানটা রিলিজ করেনি, কিন্তু সেটা ক্রুয়ের মধ্যে কাজ করছে, তখন দেব আমার কাজের সম্পর্কে বুঝতে শুরু করলো। যদিও এরপরে জিৎদা আমার সাথে কাজ করেছেন, অনেকেই বিশ্বাস করে আমার দিকে এগিয়ে এসেছেন। আমি এখানেই খুশি যে মানুষ আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। তারা আমার কাজে খুশি।
৪) জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা অনুপম রায়ের সঙ্গে তুলনা হলে কেমন লাগে?
কারও সঙ্গে আমার তুলনা হলে আমার চাপ লাগে না। কারণ আমি এটা জানি মানুষ কম্পেয়ার করে অভ্যস্ত। মানুষের মধ্যে স্বভাবটা থেকে গেছে। কারওর সঙ্গে কারো তুলনা করেই থাকি। সেটা আমার কাছে ঠিকই আছে। এটা মানুষের দোষ নয়। আমি বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিও না। আমি প্রশংসাও প্রচন্ড গায়ে মাখি না, সমালোচনাও খুব একটা গায়ে নি না। আমার কাজটা ভাল লাগে বলেই আমি করছি। কেউ যদি আমাকে তুলনা করে জিৎ দা, কিংবা অনুপম রায়ের সঙ্গে তাহলে আমি তো বলব অনেক কিছু করে ফেলেছি। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একজন কিংবদন্তী। আজ ওর সঙ্গে দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তারপরেই কথা বলি। অনুপম তো একদম অন্যরকম মানুষ। অনুপম দা, গান সম্পাদনা নিয়ে খুব ডিফাইন। উনার জনারে উনার গানগুলো কিন্তু রাজা। সবাই সবার রাজত্বে রাজা।
৫) নব্বই দশকের মেলোডি আর বর্তমানের মেলোডি - অনেকেই বলেন আগেরটা ভাল ছিল, তোমার কী মতামত?
আমার বাবা আমাকে বলতেন যে তাদের সময়ের গান নাকি আরো ভালো ছিল। ওঁরা বলবেন যে সেরকম গান এখন বানানো সম্ভব না। তখনকার দিনে যে গান বানানো হতো সেটা এখন হচ্ছে না কারণ সময়টা তো পাল্টেছে। মিউজিক শোনার উপায় পাল্টেছে। টেকনোলজি আগের থেকে অনেক পাল্টেছে। আমরা চাইলেও আগেকার দিনে মিউজিক রিক্রিয়েট করতে পারবোনা। মানুষও যেমন নিজেকে পাল্টেছে, তেমন তাদের সমস্ত বেশি পাল্টেছে। মিউজিকের ক্ষেত্রেও কিন্তু অ্যাডপশন বিষয়টা রয়েছে। এখনকার মিউজিক কিন্তু খারাপ নয়। রহমান স্যার এবং প্রীতম স্যার কিন্তু যুগের সঙ্গে সঙ্গে মিউজিকের এই বদলটাকে দারুনভাবে গ্রহণ করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা দারুণ জমিয়ে নিয়েছেন বিষয়টাকে। ওরা, যে সাউন্ডস্কাপে কাজ করছেন, সেটা কিন্তু দারুণ। তাঁদের গানে মেলোডি এবং সৌল কিন্তু আগের মত রয়েছে। মিউজিকের মার্কেটটা রিভলব করছে।
৬) অটো টিউন বিষয়টা তোমার কাছে গুরুত্ব রাখে?
অটোটিউন বিষয়টা কিন্তু সুরকারদের কাছে একদম অন্যরকম। ভারতবর্ষে যে সমস্ত তাবড় তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে, তাঁদের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা যখন রেকর্ড করে গানটা আমাকে পাঠান, তখন সেখানে আমি অটো টিউনটা কিভাবে ব্যবহার করব, এটা গুরুত্ব রাখে। সুরে আনার জন্য কিন্তু সবসময় তাকে ব্যবহার করা হয় না। গানের একটা টেক্সচার বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে সেটা ব্যবহার করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যেমন জানি যে এই গানের এই জায়গায় যদি অটো টিউন ব্যবহার করা হয় তাহলে সুরটা নষ্ট হয়ে যাবে। পুরোটাই গানের উপর নির্ভর করা হয়। সঙ্গে অটো টিউনটাকে যদি আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করি তাহলে কিন্তু ভাল। পাবলিকের কাছে অটো টিউনটা খুব অন্যরকম।