পবন হংস শ্মশান। দাউদাউ করে জ্বলছে সন্তুর সম্রাট পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার অবিনশ্বর দেহ। এদিকে সাদা পোশাকে অনতিদূরে দাঁড়িয়েই গায়ে সেই আঁচ নিচ্ছেন তবলা সম্রাট জাকির হুসেন। একমনে, একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন সেই জ্বলন্ত চিতার দিকে। আশেপাশে কেউ নেই। একাকী দাঁড়িয়ে কী ভাবছিলেন জাকির? এই ছবি যেন বারবার বলে দেয় যে, শিবকুমারের চিতার সামনে দাঁড়িয়ে জাকির এক যুগাবসানের সাক্ষী।
শুধু তাই নয়, একসময়ে যে জুটির সঙ্গতে দর্শক-শ্রোতা মুগ্ধ হয়েছেন, শিবকুমারের অন্তিম যাত্রাতেও হাজির জাকির প্রকৃত বন্ধুর কর্তব্য পালন করলেন। সন্তুর সম্রাটের অবিনশ্বর দেহকে কাঁধ দিলেন। ছবিতে দেখা গেল তেরঙ্গায় মোড়া শিবকুমারের দেহ। কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলছেন তবলা-সুলতান জাকির হুসেন। এই ছবি ভারতের ভিন্ন রাজ্যে চলতে থাকা হিন্দু-মুসলিম বিভেদনীতির যোগ্য জবাব। বিবিধের মাঝে এই মহান মিলন-ই তো আসল ভারত। শিল্প যেমন কাঁটাতার, সীমান্ত, জাত-বর্ণবিদ্বেষের ঊর্দ্ধে। শিল্পীদের ক্ষেত্রেও যে সেকথা প্রযোজ্য, তা আবারও প্রমাণ করল শিবকুমারের অন্তিমযাত্রায় জাকিরের কর্তব্যপালনের ছবি।
মঙ্গলবার-ই ইহলোক কাটিয়ে পরলোকের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন সন্তুর সম্রাট শিবকুমার শর্মা। জলতরঙ্গের মূর্ছনা থামায় তাঁর অগণিত ভক্ত-শ্রোতাকূল সকলেই শোকস্তব্ধ। খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া সঙ্গীতদুনিয়ায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোকবার্তাজ্ঞাপন করেছেন সন্তুর পণ্ডিতের প্রয়াণে।
বুধবার বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছেলে রাহুলের বাড়িতে শায়িত ছিল সঙ্গীতজ্ঞের মরদেহ। সেখানেই সন্তুর সম্রাটকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন জয়া-অমিতাভ বচ্চন, জাভেদ আখতার, শাবানা আজমী, মিউজিক কম্পোজার জুটি যতীন-ললিত, রূপ কুমার রাঠোর থেকে শুরু করে আরও অনেকে। তবে নজর কাড়ে তবলা ওস্তাদ জাকির হুসেনের উপস্থিতি। বিকেলে মুম্বইয়ের পবন হংস শ্মশানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন