Rani Rashmoni shooting stalled: প্রযোজক সুব্রত রায়ের প্রায় সবকটি ধারাবাহিকের ইউনিটেই বকেয়া টাকার সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে। কয়েক মাস আগে যখন টেলিপাড়ায় প্রযোজক রানা সরকারের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হন শিল্পীরা, সেই সময় থেকেই এই সমস্যার সূত্রপাত। যদিও টেলিপাড়ার একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন টাকা বাকি রাখার অভিযোগ ওই প্রযোজনা সংস্থার ক্ষেত্রে তার আগেও ছিল। বিগত জুন মাসের গোড়ায় এবং অগাস্ট মাসে 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ও 'দেবী চৌধুরাণী' ইউনিটের শুটিং ব্যাহত হয় এই কারণের জন্য। সেবারও এই বিষয়ে কড়া মনোভাব ছিল 'ফেডারেশন অফ সিনে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড টেকনিসিয়ান্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া'-র, এখনও তাই।
গত জুন মাসে সুব্রত রায় প্রোডাকশন্সের ধারাবাহিকগুলির শুটিং বন্ধ হওয়া নিয়ে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেছিলেন, ''যতক্ষণ না পেমেন্ট হচ্ছে, ততক্ষণ শুটিং বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।'' এবারেও তেমনই অনমনীয় মনোভাব ফেডারেশনের, জানালেন 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'-র পরিচালক রূপক দে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানান, ফেডারেশন ও আর্টিস্টস ফোরাম দুটি সংগঠনই শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের বকেয়া উদ্ধারে অত্যন্ত সচেষ্ট। তাই ফেডারেশনের অনুমতি ছাড়া টেকনিসিয়ানরা শুটিং শুরু করবেন না।
আরও পড়ুন: বাংলার বারো মাসে দেবীর ১২টি রূপ, জেনে নিন মহালয়া অনুষ্ঠানের আগেই
এপ্রিল মাস থেকেই সুব্রত রায়ের সবকটি ইউনিটের শিল্পী-টেকনিসিয়ানরা টিডিএস সার্টিফিকেট চাইতে শুরু করেন। মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও সেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি। তাই এবছর শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের অনেককেই ৩০ অগাস্টের মধ্যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় অনেক টাকা পেনাল্টি দিতে হয়েছে। এখন যদি টিডিএস সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাহলে তাঁরা পরের বছর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় টিডিএসের টাকা ফেরত পাবেন। আর যাঁরা এখনও রিটার্ন জমা করেননি, তাঁরা ২০২০-র ৩১ মার্চের মধ্যে যদি টিডিএস সার্টিফিকেট-সহ রিটার্ন জমা দেন, তবে সেখানেও ফাইন দিতে হবে। তবে শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষ নয়, তার আগের আর্থিক বর্ষের টিডিএস সার্টিফিকেটও দেননি প্রযোজক, এমনই অভিযোগ রয়েছে। 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ইউনিটে অনেকেরই লক্ষাধিক টাকার টিডিএস পাওনা রয়েছে।
তাই যে পরিমাণ টাকা টিডিএস হিসেবে কেটে নেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা নগদে বা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার মারফত ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিল্পী-টেকনিসিয়ানরা। আদতে দুটি প্রস্তাব রাখা হয়েছিল প্রযোজক সুব্রত রায়ের কাছে-- হয় তিনি বকেয়া টিডিএস জমা দিন সরকারী কোষাগারে নয়তো টাকা ফেরত দিয়ে দিন শিল্পী-টেকনিসিয়ানদের। গত ২০ সেপ্টেম্বর বিগত আর্থিক বর্ষের সমস্ত টিডিএস-এর টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল সুব্রত রায়ের। এর আগে বহুবার তিনি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেও সেই কথা রাখতে পারেননি। তাই এবার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে টেকনিসিয়ানদের সমস্ত গিল্ডকে শুটিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: টানা তিন সপ্তাহ এক নম্বরে ‘ত্রিনয়নী’, সেরা পাঁচে ‘শ্রীময়ী’
রাসমণি পরিচালক রূপক দে জানালেন, ''রাসমণি ইউনিটের টেকনিসিয়ানদের পারিশ্রমিকের টাকাও বাকি ছিল, টিডিএসের টাকাও বাকি ছিল। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলছে দেখে, সম্প্রতি চ্যানেলের পক্ষ থেকে শিল্পী ও টেকনিসিয়ানদের সমস্ত বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেটা হয়েছে ফেডারেশন ও আর্টিস্টস ফোরামের মাধ্যমে। কিন্তু টিডিএসের টাকা প্রযোজককেই পেমেন্ট করতে হবে।'' প্রযোজক যদি টিডিএস কেটে নিয়ে সার্টিফিকেট না দেন, সেটা যেমন একটি ফিনান্সিয়াল অফেন্স, তেমনই যদি তিনি টিডিএসের টাকা আদৌ জমা না করে থাকেন, তবে সেটাও কিন্তু অফেন্স হিসেবেই ধরা হয়। শনিবার যখন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন উনি জানান, টিডিএসের সমস্যা মঙ্গল-বুধবারের মধ্যে মিটে যাবে। তাই তাঁর কথামতো ধরে নেওয়া যায় যে এখনও সময় আছে।
বুধবারও যদি এই জট না কাটে, তবে কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না এবং নন-টেলিকাস্টের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে পরিচালক আশাবাদী, ''কর্মবিরতি শেষ হলে খুব তাড়াতাড়িই সামলে নেওয়া যাবে এপিসোড ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি। আমরা সাড়ে চার ঘণ্টাতেও এপিসোড হ্যান্ডওভার করেছি। আর সেটা হয়েছে কারণ আমাদের ইউনিট অত্যন্ত প্রফেশনাল। খুব কম সময়ের মধ্যেই শিল্পীরা তৈরি হয়ে যান, টেকনিসিয়ানরা সেট রেডি করে ফেলেন। তবে শুটিং চালু হওয়াটা খুব দরকার সেই সব টেকনিসিয়ানদের জন্য যাঁরা ডেইলি ওয়েজে কাজ করেন। সামনে পুজো আসছে, এতগুলো দিন বসে থাকা মানে অনেক টাকার ক্ষতি আর তাঁরা অন্য কোথাও কাজও করতে পারছেন না'', বলেন পরিচালক।
অন্যদিকে শনিবারই হরিদেবপুর থানায় প্রযোজকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে।