Zeenat Aman: সংসার জীবনে স্বামীদের হাতে মার-ই খেয়েছেন, শিউরে ওঠার মত স্বীকারোক্তি অভিনেত্রীর

অভিনেতা মাজহার খানকে বিয়ে করেন জিনাত। কিন্তু এই সম্পর্কও ছিল ভয়ঙ্কর। বিয়ের প্রথম বছরেই তিনি বুঝেছিলেন ভুল করেছেন, তবুও থেকে যান- কারণ দুই সন্তানের মা হিসেবে তিনি সংসার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

অভিনেতা মাজহার খানকে বিয়ে করেন জিনাত। কিন্তু এই সম্পর্কও ছিল ভয়ঙ্কর। বিয়ের প্রথম বছরেই তিনি বুঝেছিলেন ভুল করেছেন, তবুও থেকে যান- কারণ দুই সন্তানের মা হিসেবে তিনি সংসার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Entertainment Desk
New Update
জিনাত

যা করেছিলেন নায়িকা...

 একটা পুরো প্রজন্মের কাছে তিনি ছিলেন স্টাইল আইকন। আর আজও তিনি তরুণদের অনুপ্রাণিত করেন। ৭০-এর দশকে যখন বলিউডে নায়িকাদের শুধু পর্দার সাজসজ্জা হিসেবে দেখা যেতেন, তখন জিনাত আমান ভেঙে দেন সেই কাঁচের ছাদ। তিনি নারী চরিত্রের জন্য নতুন পথ তৈরি করেন, ঐতিহ্যবাহী স্টেরিওটাইপকে চ্যালেঞ্জ জানান, এমনকি সত্যম শিবম সুন্দরম-এর মতো ছবিতে পর্দায় যৌনতাকে এক নতুন সংজ্ঞা দেন। আত্মবিশ্বাসী আর গ্ল্যামারাস হলেও, তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল অশান্তিতে ভরা। যে পিতৃতন্ত্র ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছিলেন পর্দায়, বাস্তব জীবনেও তাকে তাঁর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হয়েছে।

শৈশব থেকে যাত্রা

Advertisment

১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম জিনাত আমানউল্লাহ খানের। বাবা ছিলেন বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার (মুঘল-ই-আজম, পাকিজা), মা মারাঠিভাষী হিন্দু। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ তাকে নাড়া দিয়েছিল। পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় গেলেও স্নাতক শেষ করতে পারেননি।

Zeenat Aman reveals how the team, led by actor Dev Anand, shot the chartbuster Dum Maro Dum track.

Advertisment

ভারতে ফিরে এসে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হন এবং পরে জেতেন মিস এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল (১৯৭০)। এই প্রথম কোনও ভারতীয় নারীর জয়। এটাই তার বলিউডে প্রবেশের দরজা খুলে দেয়।

জিনাতকে রাতারাতি তারকা বানায় দেব আনন্দের হরে রামা হরে কৃষ্ণ (১৯৭১)। সেখানে এক হিপ্পি মেয়ের চরিত্রে তার সাহসী অভিনয় সবাইকে চমকে দেয়। এরপর আসতে থাকে একের পর এক হিট ছবি। ইয়াদোঁ কি বারাত, রোটি কাপড়া অউর মাকান, আজানবী সহ আরও অনেক।

সঞ্জয় খানের অন্ধকার অধ্যায়

সাফল্যের শিখরে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে তিনি অভিনেতা সঞ্জয় খানকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই সম্পর্ক ছিল বিষাক্ত। শোনা যায়, এক ঘটনায় সঞ্জয় তাকে এমনভাবে মারধর করেছিলেন, যাতে জিনাতের এক চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু বছর পর তিনি নিজেই জানান, চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে তার দৃষ্টি আংশিকভাবে ফিরে এসেছে। যদিও সঞ্জয় বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই সম্পর্ক মাত্র এক বছরের মধ্যেই ভেঙে যায়।

মাজহার খানের সঙ্গে বিয়ে

১৯৮৫ সালে অভিনেতা মাজহার খানকে বিয়ে করেন জিনাত। কিন্তু এই সম্পর্কও ছিল ভয়ঙ্কর। বিয়ের প্রথম বছরেই তিনি বুঝেছিলেন ভুল করেছেন, তবুও থেকে যান- কারণ দুই সন্তানের মা হিসেবে তিনি সংসার বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। ১২ বছরের সম্পর্কের ভেতরে তিনি সহ্য করেছেন স্বামীর অবিশ্বাস, অসুস্থতা আর পরে প্রেসক্রিপশন ড্রাগের আসক্তি। সবকিছু বুঝতে পারার পরও তিনি তাঁর দুই ছেলের জন্য টানা ১২ বছর বিবাহিত জীবন টিকিয়ে রেখেছিলেন। মজহারের অবিশ্বাস আর পরে দীর্ঘ অসুস্থতা—সবই সহ্য করেছিলেন জিনাত। তিনি বলেন,  “প্রথম বছর থেকেই সময়টা কঠিন ছিল, কারণ তখন আমি  অন্তস্বত্বা ছিলাম আর মজহার আমার সঙ্গে ছিল না। তখন স্টারডাস্ট ম্যাগাজিনে, ও যে মহিলার সঙ্গে মজহার যুক্ত ছিল, তাকে নিয়ে বড় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। এটাই ছিল বাস্তবতা।”

Zeenat Aman opened up on how she took car of invalid husband Mazhar Khan despite knowing of his infidelity.

তিনি আরও যোগ করেন, “ছেলে জন্মানোর পরই আমি আলাদা হতে চেয়েছিলাম, এ নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছিলও। কিন্তু মনে হয়েছিল, আমার সন্তানকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত- তাই থেকে গিয়েছিলাম। শুধু থেকে যাইনি, সংসারটা বাঁচাতে যা যা করা সম্ভব, সবই করেছি।” পরে, ছোট ছেলে যখন পাঁচ বছরে পা দেয়, জিনাত আবার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তখনই মজহার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, আর পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি স্বামীর সেবা-শুশ্রূষাতেই কাটিয়ে দেন। তিনি জানান...

“আমি আক্ষরিক অর্থেই সবকিছু চেষ্টা করেছি। মুম্বাইয়ের প্রায় সব হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ইনজেকশন দেওয়া, ড্রেসিং করা, সবই শিখেছিলাম। ১৮ মাস ধরে অনেককিছু শিখেছি। যে যত্ন নেওয়া দরকার, তার সবই করেছি।” জিনাতের জীবন ছিল লড়াই, মানিয়ে নেওয়া আর নতুন করে শুরু করার গল্প। তিনি শুধু পর্দার গ্ল্যামারাস মুখ নয়, বরং একজন নারী যিনি সমাজের চাপ, সহিংসতা আর ব্যর্থ সম্পর্কের ভেতর থেকেও শক্তি খুঁজে নিয়েছিলেন।  

Zeenat Aman bollywood actress