Advertisment

১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে কারা বাদ?

মনরেগা কর্মীদের মজুরি ২০ টাকা বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হলেও তার খুব কিছু মানে নেই, কারণ বহু রাজ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় সমস্ত কাজ বন্ধ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
economic survey 2020

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ছবি: অনিল শর্মা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

কৃষক, মহিলা, নির্মাণকর্মী, প্রবীণ নাগরিক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই পরিমাণ ভারতের জিডিপি-র ১ শতাংশের কম।

Advertisment

এখন এটা প্রশ্ন নয় যে এ প্যাকেজ জিডিপির কত শতাংশ, প্রশ্ন হল অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের কাছে কত দ্রুত এ অর্থ পৌঁছনো যাবে, যাঁরা শুধু কাজই হারাননি, ব্যাপক স্বাস্থ্যসংকটের মধ্যেও রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্যাকেজ কেরালা সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণার এক সপ্তাহ পর ঘোষিত হল। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা ও রাজস্থানের মত রাজ্যও এই পথে হেঁটেছে।

এখনও পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ নেই যার জেরে বলা যায় যে ধোপা, রিক্সাচালক, ক্ষৌরকার, গ্রামীণ শ্রমিকদের মত অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সরকারের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে, তা তাঁরা রাজ্য সরকারের নথিভুত হলেও। কোনও রাজ্যের নথিভুক্ত নন এমন নির্মাণ শ্রমিকদের তো কথাই নেই। এ ধরনের কেউই কোনও অর্থসাহায্য পাবেন না।

আরও পড়ুন, নির্মলা সীতারমণের আর্থিক প্যাকেজ: খুঁটিয়ে দেখা

এক দশক আগে ভারতে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীসংখ্যা ছিল ৪৭.৪১ কোটি, এনএসএসও-র ২০১১-১২ সালের খতিয়ান অনুসারে। শ্রম মন্ত্রকের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকের কোনও পরিসংখ্যান থাকে না। ইরোনমিক সার্ভে এর আগের অনুমান অনুসারে এর পরিমাণ মোট সংখ্যার ২০ শতাংশ। পরিযায়ী শ্রমিকদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে সরকারের অক্ষমতার বিষয়টি উদ্বেগে রাখছে নীতি বিশেষজ্ঞদের। এঁদের অনেকেই বাড়ি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরের কোনও শেল্টারে একবেলার খাবারে জন্য লাইন দিচ্ছেন, প্যাকেজ ঘোষণার আগেই।

পরিযায়ী শ্রমিকরা দু ধরনের হন স্থায়ী ও সাময়িক। মার্চে যেমন বহু সাময়িক পরিযায়ী শ্রমিক দেখা যায়, কারণ এ সময় ফসল কাটার। এঁরা কাজের সন্ধানে সবসময়েই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরতে থাকেন। এর ফলে সমস্যা বাড়ে।

সমস্ত অসংগঠিত ক্ষেত্র্রের শ্রমিকদের জন্য কোনও সাহায্যপ্রকল্প আগে থকত, তাহলে সরকারের পক্ষে তাঁদের শহরের কোনও কেন্দ্রে রাখা সম্ভব হত। তার বদলে তাঁরা এখন রোগ সংক্রমণের ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এবং তাঁদের পরিবারের মানুষজনেরও তাঁদের থেকে আক্রান্ত হবার বিপদ রয়েছে।

বৃহস্পতিবারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী তিন মাসে টাকা ট্রানসফারের জন্য খরচ হবে ৬১,৩৮০ কোটি টাকা। মহিলাদের জনধন প্রকল্পের ১০ হাজার কোটি টাকা, বিধবা, প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০০০ কোটি টাকা, কৃষকদের জন্য ১৭,৩৮০ কোটি টাকা এবং নির্মাণ কর্মীদের জন্য ৩১ হাজার কোটি টাকা আসবে কল্যাণ তহবিল থেকে।

ডিস্ট্রিক্ট মিনারেল ফান্ড থেকে যে ২৫ হাজার কোটি টাকা আসবে তা চিকিৎসার সুবিধা ও পরীক্ষার জন্য, এ টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার করা হবে না।

কৃষকদের জন্য যে ১৭৩৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা অতিরিক্ত নয়, ২০-২১ সালের বাজেটে তা প্রধানমন্ত্রী কিসান যোজনায় আগে থেকেই বরাদ্দ করা ছিল, সরকার তার প্রথম কিস্তির টাকা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন, কাকে বলে কনট্যাক্ট ট্রেসিং, কীভাবে এর মাধ্যমে রোগের প্রকোপ আটকানো সম্ভব?

নির্মাণকর্মীদের জন্য যে বরাদ্দ, তার জন্যও সরকারকে ঋণ করতে হচ্ছে না। এই ফান্ডের টাকা আসে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নির্মাণকাজে বরাদ্দ ১ শতাংশ সেস থেকে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি এ বাবদ ৪৫,৪৭৩.১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল, যার মধ্যে খরচ হয়েছে ১৭,৫৯১.৫৯ কোটি টাকা।

মনরেগা কর্মীদের মজুরি ২০ টাকা বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হলেও তার খুব কিছু মানে নেই, কারণ বহু রাজ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় সমস্ত কাজ বন্ধ। কেন্দ্র মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে লকডাউন চালু করে দিয়েছে। রাজ্যগুলি মনরেগা কর্মীদের জনধন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ করিয়ে দেবার পলে সরকার চাইলে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে পারে।

মনরেগায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা দরিদ্রতম, এবং আগামী অন্তত তিন সপ্তাহ তাঁরা কাজ পাবেন না। এ অবস্থায় সরকার তাঁদের অন্তত ১৫ দিনের মজুরি, অর্থাৎ শ্রমিক পিছু ৩০০০ টাকা করে তাঁদের অ্যাকাউন্টে দিতে পারেন। এঁদের সবাইকে টাকা দিতে খরচ হবে ২৫ থেকে ৪১ হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক দুরবস্থার কারণেই কি অর্থমন্ত্রী অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারলেন না?

এ যুক্তি তখনই খাটতে পারে যদি অতিরিক্ত ঋণের জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রে ঋণের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতে গত ৬ বছর ধরে বেসরকারি লগ্নি শ্লথ, তার কারণ, নোটবন্দি, জিএসটি, ব্যাঙ্কে পুঞ্জীভূত হতে থাকা অনাদায়ী ঋণ প্রভৃতি।

এই অর্থনৈতিক সহায়তা প্রকল্পকে কোনওরকম উৎসাহভাতা জাতীয় কোনও নাম দেওয়া ভুল হবে। এই অতিরিক্ত খরচ কর্মীদের নিরাপত্তা জাল হিসেবে কাজ করবে - তাঁদের আয় হারানোর ক্ষতিপূরণ - যাতে তাঁরা দৈনন্দিন প্রয়োজনের জিনিস, মূলত খাদ্যবস্তু কিনতে পারেন।

অর্থনীতি যদি তালাবন্দি অবস্থায় না থাকে, তখন উৎসাহভাতা কাজে দেয়, যে বিষয় এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।

বিশ্লেষকদের হিসেবে, ২১ দিনের এই লকডাউন বার্ষিক জিডিপির ৪ শতাংশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। মূল্যবৃদ্ধিও ঘটতে পারে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদি হবার কথা নয়। সে কারণেই অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্য কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে অতীব কম। মনে রাখতে হবে ভারতের জিডিপি-তে এই্ ক্ষেত্রের অবদান ৪৮ থেকে ৫৬.৪ শতাংশ।

Nirmala Sitharaman Relief Package
Advertisment