আইএসআই প্রধানের নতজানু হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। (এক্সপ্রেস আর্কাইভ ছবি)
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ২০০৮ সালের ২২ নভেম্বর, একটি ভিডিও-লিংকের মাধ্যমে নয়াদিল্লির সম্মেলনে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি তাঁর স্ত্রী তথা পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে উদ্ধৃত করেছিলেন। জারদারি বলেছিলেন যে প্রত্যেক পাকিস্তানির মধ্যে 'একটুকরো ভারত' আছে। আর, প্রত্যেক ভারতীয়র মধ্যে সামান্য হলেও পাকিস্তান আছে। জারদারির বক্তব্যের অর্থ ছিল, ভারত-পাকিস্তানের বন্ধুত্ব হওয়া সম্ভব। তা সম্ভব হবে অসামরিক কর্তৃপক্ষের হাত ধরে।
Advertisment
জঙ্গিদমনে নতুন মোড় পাকিস্তানে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় হাইকমিশনার টিসিএ রাঘবন তাঁর বই, 'দ্য পিপল নেক্সট ডোর: দ্য কিউরিয়াস হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়াস রিলেশনস উইথ পাকিস্তান' (২০১৭)-এ লিখেছেন, 'মাত্র চার দিনের মধ্যে, ২৬ নভেম্বর জারদারির মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক ইতিহাস হয়ে গিয়েছিল।' কারণটা হল, মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলা। ভারত বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু, ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলা যেন ছিল একটি বাঁক। যা ভারতের জঙ্গিদমন কৌশল আর বাকি বিশ্বের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পর্কের বদল ঘটিয়েছিল। সেই বদল, গত ১৫ বছর বজায় আছে।
পাকিস্তানই অপরাধী একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব প্রথমবারের মত সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতায় কেঁপে উঠেছিল ৯/১১-য়। অর্থাৎ ২০০১ সালের ৯ নভেম্বর। এরপর কেঁপে ওঠে ২৬/১১-য়, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে ১৯৮০-র দশকে ভারত, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গিহানার ক্ষত সয়েছে। খালিস্তানপন্থীদের হিংসা, এলটিটিই, উলফার ভয়াবহতা সহ্য করেছে। দুই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি আরও অনেকের জীবনহানি ঘটেছে এই সব জঙ্গিহানায়। জম্মু-কাশ্মীর থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বারবার জঙ্গিহানায় কেঁপে উঠেছে। আর, এই সব জঙ্গিপনায় মদত দিয়ে গিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু, সেসবে কেবল ভারত আর দক্ষিণ এশিয়াই ভুক্তভোগী ছিল। কিন্তু ২৬/১১, অশান্ত দক্ষিণ এশিয়া থেকে জঙ্গিহানার ভয়াবহতাকে গোটা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিল।
Advertisment
সন্ত্রাসের মদতদাতা পাকিস্তান ২৬/১১-য় মু্ম্বইয়ের জঙ্গিহানায় ভারত এবং বিশ্বের আরও ১৫টি দেশের নাগরিকরা প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভারত ছাড়া, বিশ্বের আরও সাতটি দেশের নাগরিকরা আহত হয়েছিলেন। এই জঙ্গি হামলা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ার অভিযোগে পাকাপোক্ত সিলমোহর দিয়েছিল। এই জঙ্গি হামলা প্রমাণ করে দেয় যে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংগঠন আইএসআই এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আর জঙ্গি হামলা চালাচ্ছে। পরবর্তীতে উরি, পাঠানকোট, পুলওয়ামার মত জঙ্গি হামলাগুলো ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে দিল্লির সেই সব অভিযোগকেই আরও পোক্ত করেছে।
পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন তাঁর বই, 'The Most Dangerous Place: A history of US in South Asia (২০১৮)'-য় লিখেছেন, কতকটা কাকতালীয়ভাবেই, ৯/১১ হামলার সময় আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহমুদ আহমেদ ওয়াশিংটন ডিসিতে ছিলেন। পারভেজ মোশারফই তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বুশ প্রশাসনকে তালিবানের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি করানো। ১২ সেপ্টেম্বর, মাহমুদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট, রিচার্ড আরমিটেজের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনের বিদেশ দফতর তলব করেছিল। রাঘবন লিখেছেন যে আর্মিটেজ কড়া ভাষায় জানতে চেয়েছিলেন, 'পাকিস্তান কি আমেরিকার সঙ্গে আছে না নেই? আর, সেখানে কোনও কৌশলের জায়গা নেই।' আমেরিকার এই কড়া অবস্থানের মুখে পাকিস্তান কার্যত আত্মসমর্পণ করেছিল বলেই জানিয়েছেন আরমিটেজ।