সেই দিনটাও ছিল ১৩ ডিসেম্বর। ২২ বছর আগে এদিনেই জঙ্গিহানায় কেঁপে উঠেছিল দেশে গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর সেদিনের স্মরণে শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই হামলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১৮ জন।
Advertisment
জঙ্গিদের প্রবেশ ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকালে পাঁচ জঙ্গি হানা দিয়েছিল সংসদ ভবন কমপ্লেক্সে। প্রায় ১১টা ৪০ নাগাদ লাল আলো লাগানো এবং গাড়ির উইন্ডশিল্ডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নকল স্টিকার লাগানো একটি অ্যাম্বাসেডর গাড়ি সংসদ ভবন চত্বরে প্রবেশ করে। গাড়িটি ১২নং বিল্ডিং গেটের দিকে যাওয়ার সময় সংসদ ভবনের ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড স্টাফের একজন সদস্যের সন্দেহ হয়। তিনি গাড়িটিকে ব্যাক করতে বাধ্য করেন। এরপরই গাড়িটি তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি কৃষ্ণ কান্তের গাড়িতে আঘাত করে।
সংসদে জঙ্গি হামলা জঙ্গিরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে। এই সময় অ্যালার্ম বা বিপদঘণ্টি বাজিয়ে দেন উপস্থিত রক্ষীরা। পার্লামেন্ট ভবনের সমস্ত গেট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা প্রায় আধঘণ্টা চলে। আট নিরাপত্তারক্ষী এবং পার্লামেন্ট ভবনের একজন মালি শহিদ হন। পালটা, মারা যায় পাঁচ জঙ্গিও। আহত হন অন্তত ১৫ জন। সে সময় সংসদ ভবনের ভিতরে থাকা ১০০ মন্ত্রী-সাংসদ অক্ষত ছিলেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলকে আদবানি বলেছিলেন, 'এটা এখন স্পষ্ট যে সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলা পাকিস্তান ভিত্তিক এবং মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা এবং জইশ-ই-মহম্মদ মিলিতভাবে চালিয়েছিল।' আদবানি আরও বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলো আইএসআই থেকে সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত যে তদন্ত করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে হামলা চালানো আত্মঘাতী স্কোয়াডের জঙ্গিরা প্রত্যেকেই পাকিস্তানি নাগরিক। তারা প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছে। তাদের ভারতীয় সহযোগীদের আটক করে গ্রেফতার করা হয়েছে।' এই হামলার কড়া নিন্দা করে আদবানি বলেছিলেন, 'পার্লামেন্টে জঙ্গি হামলা ভারতে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় চলা প্রায় দুই দশকের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসাহসী, সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা।'
Advertisment
Today, we remember and pay heartfelt tributes to the brave security personnel martyred in the Parliament attack in 2001. Their courage and sacrifice in the face of danger will forever be etched in our nation's memory. pic.twitter.com/RjoTdJVuaN
আফজাল গুরু-সহ অন্যরা ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত পুলিশ ১৩ ডিসেম্বরের এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় এফআইআর দায়ের করেছিল। কয়েক দিনের মধ্যে, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ওই সব ব্যক্তিদের ব্যবহৃত গাড়ি, মোবাইল ফোনের ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। তারই ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের অন্যতম মহম্মদ আফজল গুরু। সে জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)-র জঙ্গি। আফজল ১৯৯৪ সালে আত্মসমর্পণ করেছিল। তার খুড়তুতো ভাই শওকত হোসেন গুরু, শওকতের স্ত্রী আফসান গুরু, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবির অধ্যাপক এসএআর গিলানিকেও সংসদে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আদালতের রায় আদালত শেষ পর্যন্ত আফসানকে খালাস করে দিলেও গিলানি, শওকত এবং আফজলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০০৩ সালে গিলানি আবেদনের ভিত্তিতে খালাস পেয়েছিলেন। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট শওকতের সাজাকে কমিয়ে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে পরিণত করেছিল। আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ড ২০০৫ সালে বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। আফজল কোনওভাবেই আদালত থেকে স্বস্তি পায়নি। ২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, সুপ্রিম কোর্ট আফজল গুরুকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় আফজলের স্ত্রী তাবাসসুম গুরুর দায়ের করা প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করার ছয় দিন পর ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, তিহার জেলে আফজলকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তার দেহাবশেষ কারাগারের ভিতরেই কবর দেওয়া হয়।